আজকের শিরোনাম :

বদলগাছীতে কালভার্ট নির্মাণে মন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৩৮

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় সরকারি টাকায় ব্যক্তি স্বার্থে দুটি কালভার্ট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায় দুর্যোগ ব্যবস্থপনা অধিদপ্তরের বরাদ্দে প্রায় ৩২ লাখ ব্যয়ে এই দুটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।  একটি কোলা ইউনিয়নের কেশাইল হঠাৎপাড়া নয়নজলী খালের ওপর তালেবের বাড়ির নিকটে ও মিঠাপুর ইউনিয়নের উজালপুর সিংপাড়া মিন্টু মুরগির খামার সংলগ্ন রাস্তায় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এই দুটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। 

নীতিমালা বর্হিভূতভাবে ব্যক্তি স্বার্থে দুটি কালভার্ট নির্মাণের অভিযোগ এনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে  লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সচিব, মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, নওগাঁর জেলা প্রশাসক, নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা ও বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। উপজেলা ঝাড়ঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধ ওয়াজেদ আলী ডাকযোগে গত ৩ ফের্রুয়ারি এই লিখিত অভিযোগটি দিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন,  ব্যক্তি স্বার্থে দুটি কালভার্ট নির্মাণ করে রাষ্ট্রের ৩১ লাখ সাড়ে ৮৩ হাজার  টাকা অপচয় করা হয়েছে। এটা একটি চরম দুর্নীতি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটা মেনে নিতে পারিনি। তাই প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছি।

মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী তাঁর লিখিত অভিযোগে বলেছেন, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং ত্রাণ পূণর্বাসন অধিদপ্তরের নভেম্বর/২০০৯ সালের বাস্তবায়ন নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা আওতাধীন গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সম্পূর্ণ অংশ যানবাহন চলাচলের নিমিত্তে গ্যাপ সংযোগে  ১৬-৩০ এবং ৩১-৪০ ফুট দৈর্ঘ্য সেতু/ কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় সড়ক নেটওর্য়াকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে সেতু ও কালভার্টসমূহ ব্যক্তিগত স্বার্থে  নির্মাণ করা যাবে না। অথচ ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃক উপজেলার খাদাইল সিংপাড়া হতে মিন্টুর  শেডের দীঘির খালের ওপর ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৭৫০  টাকার বিপরীতে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য একটি কালভার্ট নির্মাণ এক নম্বর প্রকল্প (যা উজালপুর সিংপাড়া হবে) এবং কোলা ইউনিয়নের হঠাৎপাড়া নয়নজলী খালের ওপর তালেবের বাড়ীর নিকট ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৭৫০ টাকার বিপরীতে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য কালভার্ট নির্মাণে তিন নম্বর প্রকল্প গ্রহণ করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। (এটি কেশাইল হঠাৎপাড়া হবে)।  গত ১১ জুন ২০১৮ সালে লটারির মাধ্যমে প্রকল্প দুটির ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়। ২৬ জুলাই ২০১৮ সালে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। গত নভেম্বর মাসে দুটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, উজালপুর সিংপাড়া বিকুলের বাড়ীর পশ্চিমে মিন্টু গং জমি ক্রয় করে শেডে যাতায়াতের জন্য কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করেন। মিন্টুর শেড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে ফসলি জমির মাঠ। এখানে কোনো জনস্বার্থ নেই ব্যক্তি স্বার্থে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। বদলগাছী-আক্কেলপুর পাকা সড়ক সংলগ্ন দক্ষিণে ৮/১০ টি বাড়ি নিয়ে কেশাইল হঠাৎপাড়া গঠিত। হঠাৎপাড়া নয়নজলী খালের ওপর তালেবের বাড়ীর নিকট নির্মানাধীন কালভার্টটির মাত্র দশ গজ পূর্বে এবং ২০ গজ পশ্চিমে আরও দুটি কালভার্ট রয়েছে। এই দুটি কালভার্ট দিয়ে হঠাৎপাড়ায় যাতায়াত করা হয়। বদলগাছী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কেশাইল হঠাৎপাড়ার সিরাজুল ইসলাম চৌকিদারের ছেলে সোহেল চাকরি করেন। তাঁর বাড়িতে যাতায়াতের জন্য কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। 

সরেজমিনে নির্মাণাধীন দুটি কালভার্টে গিয়ে দেখা গেছে , উজালপুর সিংপাড়া পশ্চিমে মরগির দুটি খামার রয়েছে। একটি খামারের সামনে একটি  পুকুর রয়েছে। এই দুটি খামারে চলাচলের জন্য একটি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। সেখানে কোন জনবসতি বা কোন চলাচল নেই। শুধু সেডের কাঁচা রাস্তায় কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। বদলগাছী-আক্কেলপুর সড়কের পাশে  কয়েকটি বাড়ীঘর রয়েছে। এটি হঠাৎপাড়া বলে পরিচিত। পাকা রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি সরু খাল রয়েছে। সেটি নয়নজলী বলে পরিচিত। এই নয়নজলীতে আগে থেকেই দুটি কালভার্ট রয়েছে। এই দুটি কালভার্টের মধ্যে নতুন কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। 

উজালপুর সিংপাড়া ও কেশাইল হঠাৎপাড়া গ্রামে কয়েক জন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন,  মুরগির খামার ও পুকুরটি আপন দুই ভাইয়ের। মুরগির খামার কর্মরত লোকজন ছাড়া কেউ সেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে না। অথচ সেখানে সরকারি টাকায় কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে জনস্বার্থ জড়িত নেই। কেশাইল হঠাৎপাড়ায় আগে থেকেই দুটি কালভার্ট রয়েছে। তালেবের বাড়ীর সামনে নতুন একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এটার কোন প্রয়োজনীয়তা ছিল না। এখানকার একজন ব্যক্তি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে চাকরি করেন। এ কারণেই নাকি কালভার্টটি করা হয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন।

বদলগাছী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল করিম বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে কালভার্ট নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন তিনি একটি গ্রামবাসী স্বার্থে আরেকটি এলাকার স্বার্থে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। মুরগির খামারের মালিক রাস্তাটি নির্মাণের কারণে উজালপুর গ্রামে জলাবদ্ধা সৃষ্টি হওয়ায় মাঠের ফসল নষ্ট হয়। এলাকার লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সাংসদ মহোদয় সেখানে কালভার্ট নির্মাণ করার সুপারিশ করেন। 

এ ছাড়া সেখানকার কিছু লোকের স্বাক্ষরিক আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদও প্রত্যয়ন দিয়েছে। হঠাৎপাড়ায় পশ্চিম দিকে যে কালভার্টটি রয়েছে সেটি পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছিল। এ কারণে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমি এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। প্রকল্প গ্রহণের একটি কমিটি  আছে। সেই কমিটির সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্প নেওয়া হয়। ব্যক্তিস্বার্থে নয় জনস্বার্থে দুটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। 

জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম আলী বেগ গতকাল বেলা ১১টায়   মুঠোফোনে বলেন, দুটি কালভার্ট নির্মাণের বিষয়ে একটি অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এবিএন/হাফিজার রহমান/গালিব/জসিম 
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ