আজকের শিরোনাম :

দোয়ারাবাজারে পানির অভাবে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে ব্যাহত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪৮

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় বোরো মৌসুমের শুরুতেই ফসল করতে না পেরে কপাল পুড়ছে এখন হাওর পাড়ের কৃষকদের। 

জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরায় পানির অভাবে উপজেলার কাংলার হাওরের পূর্ব অংশের প্রায় দেড় হাজার একর বোরো ফসলী জমি পতিত রয়ে গেছে। 

কৃষকদের স্বার্থ তোয়াক্কা না করে সম্প্রতি ইজারাদার দোয়ারাবাজারের লক্ষ্মীপুর ও সদর উপজেলার রঙ্গাররচর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী সিঙ্গের ধাইর বিল শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে হাওরের বোরো চাষাবাদ এখন হুমকির মুখে পড়েছে। 

সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বোরো আবাদের ভর মৌসুমে উপজেলার কাংলার হাওরের পূর্ব অংশের ‘হিল্লার খেউড়’ সিঙ্গির ধাইর, বিল ও হাওরের ডোবা নালায় পানি নেই। হাওরের  বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। 

পানির অভাবে সবজি ক্ষেত হুমকির মুখে পড়েছে। দেখলে মনে হবে এ যেন ফসলী জমি নয়  গো চড়ানোর মাঠে। প্রতি বছর ওই হাওরের বিস্তৃর্ণ এলাকায় সেচ সুবিধা না থাকায় এখানকার কৃষকদের একমাত্র ভরসা হাওরের বিল ও ডোবা নালার পানি। বিলের পানি দিয়েই  হাওরে বোরো চাষাবাদ করা হয়। 

এ বছর ইজারাদার বোরো চাষাবাদের আগেই বিলের পানি শুকিয়ে ফেলায় অনাবাদি থেকে যাবে কৃষকদের জমি। এ কারণে হাওরপাড়ের তিলোরা কান্দি, বড়কাটা, কান্দা হাটি, সোনাপুর, নুরপুর, বৈঠাখাইসহ লক্ষ্মীপুর ও সুরমা ইউনিয়নের কৃষকরা এখন আহাজারি করছেন। 

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সিঙ্গের ধাইর বিলটি শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে বোরো চাষাবাদের কোনো সুবিধা নেই। সরকারি জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরার সুযোগ না থাকলেও জলমহালের ইজারাদার বৈটাখাই গ্রামের হারু মিয়া, হরিণাপাটি গ্রামের হেলাল মিয়া, ফরিদ মিয়া, সোনাপুর গ্রামের আজিজুর রহমান বিল শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে বোরো জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সিঙ্গের ধাইর বিলের ভূমির মালিকানা ব্যক্তি পর্যায়ে থাকার পরও প্রতিবছর সরকারিভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। সরকারি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ইজারাদার হারু মিয়া প্রভাব খাটিয়ে মাঘ মাসের শুরুতেই বিলগুলো শুকিয়ে মাছধরার ফলে হাজার হাজার একর বোরো জমি এখন অনাবাদি রয়ে গেছে। 

উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের কৃষক রাশিদ আলী, সায়াদ আলী, আব্দুল আজিজ, তিলোরা কান্দি গ্রামের হাছেন আলী, বরকাটা গ্রামের আব্দুর রহমান প্রতিবেদককে জানান, সিঙ্গের ধাইর হাওরের সিন্ধের ধাইর বিল মাঘ মাসে ফিসিং না করে ফালগুন মাসে ফিসিং করলে জমিতে আরো ১৫/২০ দিন পানি সেচ দেওয়া যেত। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত সেচ দেয়া গেলে ধান ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেত। জমিতে ভাল ফসল হত। কিন্তু বিলের ইজারাদার হারু মিয়ার কারণে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। 

টেংরাটিলা গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালিব, বৈঠাখাই গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম, তিলোরা কান্দি গ্রামের কৃষক হাছেন আলীসহ অসংখ্য কৃষকরা অভিযোগ করে বলেছেন, স্থানীয় বৈঠাখাই দিগন্ত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে সরকারি বিল নাম মাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে ভরা মৌসুমের শুরুতেই বিল শুকিয়ে মাছ ধরায় হাওর পাড়ের শত শত কৃষকদের বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ ছাড়া ইজারাদার হারু মিয়া ও তার সহযোগিরা ইজারার বাইরেও বিভিন্ন বিল ও ডোবা নালা অবৈধভাবে ভোগ দখল করে পানি শুকিয়ে মাছ ধরেছে। ফলে হাওরের কোথাও কোনো পানি নেই। বিভিন্নভাবে তিনি কৃষকদের জমি আত্মসাতেও মেতে ওঠেছেন ইজারাদার হারু মিয়া। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, বিল শুকিয়ে মাছ ধরার বিষয়টি শুনেছি। তবে ইজারাদার পানি শুকিয়ে ফেলার পর আমাকে অবহিত করায় এ বছর আর কিছু করার নেই। এখানকার কৃষকদের সেচসুবিধা দিতে ইতোমধ্যে ‘বিএডিসি’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। 

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/গালিব/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ