আজকের শিরোনাম :

লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির লক্ষাধিক টাকা অফিস সহকারীর পকেটে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৪

আত্মসাতের উদ্দেশে অভিনব কায়দায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল্যা আল হোছাইন। সম্প্রতি ছাত্রীদের পৃথক বিকাশ অ্যাকাউন্টে বরাদ্দ আসা টাকার তথ্য গোপন রেখে পিনকোড জালিয়াতি করেন তিনি। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করে নেন।

ঘটনাটি জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থীরা অফিস সহকারীর বিচার ও অপসারণ দাবি করে শনিবার বিদ্যালয় প্রধান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

এ ঘটনার নিন্দা প্রকাশ ও বিচার দাবি করে স্থানীয়রাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে সমালোচনা করছেন এলাকাবাসী। এ পর্যায়ে বিচার ও হেনস্তা এড়াতে তড়িঘড়ি ওই অফিস সহকারী টাকা ফিরিয়ে দেয়ার প্রকাশ্য অঙ্গীকার করেন। তবে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা অফিস সহকারীর এমন ঘটনাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অনৈতিক আখ্যা দেন।

প্রতারণার শিকার ভবানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অভিযোগে জানা যায়, চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ছাত্রীদের নিজেদের নামের পৃথক বিকাশ অ্যাকাউন্টে যথানিয়মে নির্ধারিত বরাদ্দের টাকা আসে। গত ছয় মাসের টাকা আসে এই কিস্তিতে। কিন্তু ১০-১৫ দিন গত হয়ে গেলেও তারা এ সংক্রান্ত কোন ম্যাসেজ বিকাশ সিমে দেখতে পায়নি।

পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের এজেন্টের দোকানে গিয়ে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে দেখে তারা নিজেদের টাকার বিষয়ে খবর জানতে বিদ্যালয়ে যায়। ওই বিদ্যালয়ে আইটি সেক্টরসহ একাধিক দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারী আবদুল্যা আল হোছাইন ছাত্রীদের সদুত্তর না দিয়ে মনগড়া কথা বলে।

পরবর্তীতে সচেতন অভিভাবক মহলে বিষয়টি আলোচিত হলে পারস্পরিক সহযোগিতায় এ বিষয়ের খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রধান কার্যালয় থেকে প্রযুক্তির তল্লাশি শেষে জানানো হয় ছাত্রীদের বিকাশ অ্যাকাউন্টের টাকা অপর একটি বিকাশ অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করিয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে ওই অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম পরিচয় প্রকাশ করলে তাতে সনাক্ত হয় ওই অফিস সহকারী।

সনাক্ত হওয়ার পর ছাত্রী ও অভিভাবকরা ওই অফিস সহকারীর কাছে জানতে চেয়ে চাপপ্রয়োগ করলে এক পর্যায়ে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। একই সাথে উত্তোলিত টাকাগুলো ফিরিয়ে দেয়ার প্রকাশ্য অঙ্গীকার দিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে অনুনয় করেন। প্রায় ৭০-৮০ জন ছাত্রীর প্রত্যেকের ১২শ’ টাকা থেকে ১৩শ’ টাকা করে প্রায় ৯০ হাজার টাকা তিনি জালিয়াতি করে নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সরকারের শিক্ষা সহায়তা প্রকল্পের অধীন প্রণোদনা বৃত্তির (উপবৃত্তির) উক্ত টাকা পূর্বে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ দেওয়া হতো। ওই টাকা রেজিষ্টারপূর্বক স্বাক্ষর আদায়ের মাধ্যমে ছাত্রীদের হাতে নগদ তুলে দেয়া হতো।  এ প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্টদের জন্য বাড়তি চাপ সহ ক্ষেত্রবিশেষে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় সরকার ওই টাকা হস্তান্তরের জন্য প্রযুক্তিগত পন্থার নিয়ম করে। এর আলোকে গত বছর বিদ্যালয়ের ব্যাবস্থাপনায় সকল ছাত্রীদের জন্য পৃথক টেলিটক সিম ক্রয় করিয়ে পৃথক বিকাশ অ্যাকাউন্ট করে দেয়া হয়।

এলাকার অধিকাংশ অভিভাবক শিক্ষিত ও সচেতন নয় বলে এ কাজের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিয়ে সহযোগিতা করে। এতে কোন প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই ছাত্রীরা বৃত্তির টাকা সহজে হাতে পাবে বলে কর্তৃপক্ষ ধারণা করে। আর এ কাজে দায়িত্ব দেয়া হয় বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কেরানী আবদুল্যা আল হোছাইনকে। যার ফলে এসবের কারিগরি সাইট ও পিানকোড তার জানা ছিল।

আব্দুর রহিম, জহিরুলসহ স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, ছাত্রীদের বরাদ্দ পাওয়া উপবৃত্তির টাকাগুলো আত্মসাতের উদ্দেশেই ওই অফিস সহকারী এ অনৈতিক কাজ করেছে। তারা এ ঘটনায় তার উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া ঘটনাটিকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বেআইনী আখ্যা দিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেন।  একই সাথে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিচারের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও আশ্বস্থ করেন।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ও মামুনুর রশিদ ভূঁইয়া জানান, এমন কান্ডের মধ্য দিয়ে ছাত্রীদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।  তারা এ ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত ওই অফিস সহকারীর উপযুক্ত বিচার ও প্রত্যাহারের দাবিতে সহমত পোষণ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যাবস্থা গ্রহণের কথা জানান।

এবিএন/অ আ আবীর আকাশ/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ