আজকের শিরোনাম :

শেরপুরে শিক্ষকদের পছন্দের গাইড কিনতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:২৬

নতুন বছরের শুরুতেই বইয়ের দোকানগুলোতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভীড় বাড়তে থাকে। পহেলা জানুয়ারী সরকারিভাবে দেয়া বই উৎসবে নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা যতটা উচ্ছসিত থাকে, ঠিক ততটাই শংকিত থাকেন অভিভাবকরা। কেননা তাদেরকে শিক্ষকদের পছন্দের তালিকায় গাইড বই কিনতে বাধ্য হতে হবে সেই ভাবনায়।

এমনইভাবে বগুড়ার শেরপুরে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল প্রধান এবং মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি মোটা অংকের টাকা নিয়ে নির্ধারিত প্রকাশনীর সহায়ক নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে লেখাপড়ার প্রকৃত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠার পাশাপাশি ওই সকল গাইড কিনতে অভিভাবকদের নাভিশ্বাস বাড়াসহ শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত হওয়ার অভিযোগও অপ্রতুল।

জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন(কেজি) স্কুল ১০৮ সহ মোট ২৫৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে ২লাখ ১৬ হাজার, মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ১২৮টি উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও এবতেদায়ী মাদ্রাসার ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য ৫লাখ ৯৩ হাজার নতুন বই বিতরণ করা হচ্ছে। বিনামূল্যের বই দেয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে এসেছে বলে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলেছেন।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বুক স্টলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের সহায়ক ও নিষিদ্ধ গাইড বই কেনার জন্য নির্ধারিত প্রকাশনীর তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি কোন শিক্ষার্থী নির্ধারিত তালিকার বাইরে অন্যকোন প্রকাশনার গাইড ক্রয় করে তাহলে তাকে আবারো নতুন করে গাইড কিনতে বাধ্য করা হয়।

শেরপুর উপজেলার ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন শেরপুর উপজেলা শাখার আওতায় মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মচারি কল্যান সমিতির অর্ন্তভুক্ত ২২টি এবং সাবেক মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ এর অধিনে ২০টি মাদ্রাসায় প্রকাশনীর লোকজন প্রতি বছর মোটা অংকের টাকা  ডোনেশন দেয়া হয়।

এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে নেতাদের পছন্দের পাঞ্জেরী, লেকচার, অনুপম, জুপিটার, আল ফাতাহ্ ও আল আরাফা প্রকাশনীর নিষিদ্ধ গাইড বই। এদিকে এনসিটিবি প্রণীত ও অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকের বাইরে এসব সহায়ক ও নিষিদ্ধ গাইড বই মোটা অংকের বিনিময়ে কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

উপজেলার মাথাইলচাপড এলাকার অভিভাবক আরিফুজ্জামান জানান, তার ৩ সন্তানের জন্য গাইড বই কিনতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা। দহপাড়ার শরিফ আহম্মেদ জানান, তার ছেলের জন্য সহায়ক বই কিনতে ৩০০ টাকা লেগেছে।

হাসপাতাল রোড এলাকার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার ২ ছেলের জন্য পাঠ্যবইয়ের বাইরে স্কুল থেকে নির্ধারিত প্রকাশনীর বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ, সাধারণ জ্ঞান ও চিত্রাঙ্কন খাতা কিনতে সাড়ে ৭০০ টাকা লেগেছে। তারা জানান, নির্ধারিত প্রকাশনীর সহায়ক বই ও নিষিদ্ধ গাইড না কিনলে সংশ্লিষ্ট স্কুলে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হেনস্থা করা হয়।

অভিযোগ আছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রকাশনীর নিষিদ্ধ গাইড কিনতে বাধ্য করছেন শিক্ষকরা। স্কুল পর্যায়ে জুপিটার, পাঞ্জেরী, লেকচার, অনুপম, ফ্রেন্ডস, জনক, ফুলকলি, আল আমিন প্রকাশনী এবং মাদ্রাসায় আল-ফাতাহ্, আল-বারাকা, মিনার প্রকাশনীসহ বিভিন্ন অখ্যাত প্রকাশনীর গাইড  কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে তালিকা ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

এ সব প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা স্কুল-মাদ্রাসার প্রধান এবং সমিতির নেতাদের বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন ও মোটা অংকের টাকা দিয়ে প্রকাশনীর সহায়ক ও নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির ব্যবস্থা করেন।

অভিভাবকরা জানান, যেখানে সরকার সহায়ক বইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করছে, সেখানে সহায়ক ও নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে ১ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা লাগছে। সাধারণ ও নি¤œমানের ছাপা, ভুলে ভরা চটি আকারের সহায়ক বইগুলোর একেকটির দাম দেড়’শ থেকে ২’শ টাকা। যা সাধারনভাবে কিনতে ৩০ থেকে ৪০ টাকার বেশি হবেনা।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম জানান, এনসিটিবি প্রনীত ও অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকের বাইরে কোনো বিদ্যালয় যদি পাঠ্যসূচিতে অতিরিক্ত কোনো পুস্তক অন্তর্ভুক্ত করে বা শিক্ষার্থীকে তা ব্যবহারে বাধ্য করে তবে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


এবিএন/শহিদুল ইসলাম শাওন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ