আজকের শিরোনাম :

বোদার ৫ সফল নারী জয়ীতার গল্প

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৩০

পঞ্চগড়ের বোদায় ৫ জন নারী জয়ীতা পুরস্কার পেয়েছে।  উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর প্রতি বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দিয়ে থাকেন। সফল জননী নারী হিসেবে মোছাঃ খালেদা বেগম, শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অজনকারী আনিকা হোসেন, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন ফাতেমা বেগম, নির্যাতনের বিভিশিক্ষা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করেন ভারতী রানী, অর্থনেতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী মোছাঃ রাহেনা বেগম। এদের সফলতার জীবনের গল্প ও জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরা হলোঃ


খালেদা বেগম
সফল জননী নারী মোছাঃ খালেদা বেগম, স্বামী- মোঃ ইসমাইল হোসেন, গ্রামঃ নয়াদিঘী, তিনি বলেন আমার ৩ ছেলে, ২ মেয়ে। ১ ছেলে সেনাবাহিনীতে চাকুরী করছে, ১ মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছেন। ১ ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে কৃষি ব্যাংকে অফিসার পদে চাকুরী করছেন। সেই সাথে বিসিএস পরীক্ষায় নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১ মেয়ে ও ১ ছেলে বে-সরকারি এনজিওতে চাকুরী করছেন। অভাব অনটনের সংসারে শত কষ্টে উপেক্ষা করে আমার সন্তানদের মানুষ করতে পেরিছি। তিনি এখন নিজেকে একজন সফল নারী বলে মনে করেন।


আনিকা হোসেন
শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী আনিকা হোসেন, পিতাঃ মৃত-আলতাফ হোসেন, গ্রামঃ নগরকুমারী, তিনি বলেন, আমার ৯ শ্রেণি থাকা অবস্থায় বিয়ে হয়েছিল। আমার বিয়ে হওয়ার পর মনে হয়েছিল আমি আর পড়াশুনা করতে পারবো না। অবশেষে আমার স্বামীর সহযোগিতায় ২০০৫ সালে এসএসসি পাশ করি।

এসএসসি পাশের পর এইচএসসি পাশ করেছি। এইচএসপি পাশের পর তার কোলে একটি সন্তানের জন্ম হয়। এ জন্য তার বিএসএস পড়তে বিঘ্ন ঘটে। তার স্বামীরা ৭ ভাই ৩ বোন, অভাব অনটনের সংসারে। সেই অভাব অনটন হতে মুক্তি পেতে সে একটি স্থানীয় এনজি ডুডুমারী গ্রাম উন্নয়ন সংস্থার ভিজিডি প্রকল্পে ট্রেনার পদে চাকুরী শুরু করেন।

চাকুরী চলাকালীন অবস্থায় সন্তান ও সংসার এর পাশাপাশি বিএসএস পরীক্ষায় পাশ করেন। সেই সুবাদে তিনি ২০১৭ সালে মহিলা বিষয় মন্ত্রণালয়ের আইজিএ প্রকল্পের ব্লক বাটিক এর ট্রেনার পদে দেবীগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন।

বাল্য বিয়ে হওয়ার পরও তার মনোবল ঠিক ছিল বলে সে আজ পড়াশুনা করে একটি চাকুরী করতে পারছেন। চাকুরী করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন।  


ফাতেমা বেগম
সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী মোছাঃ ফাতেমা বেগম, স্বামী মৃত-পশিরউদ্দীন, গ্রামঃ বালাভীড, তিনি বলেন, আমার বর্তমান বয়স ৪০ বছর। ১২ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। আমার এক কন্যা সন্তান রয়েছে।  সে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করছেন। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে স্বামী মারা যায়।

নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্র্যাক এর পল্লী সমাজের সদস্য হই।  পল্লী সমাজের কাজের পাশাপাশি ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবিকা হিসেবে কাজ শুরু করি। স্বাস্থ্য সেবিকা ও পল্লী সমাজের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনিং করি।

ট্রেনিং করার পর এলাকার গরীর মানুষদের বিভিন্ন প্রকারের সরকারি ও বে-সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইতে সহযোগিতা করি। পল্লী সমাজের সভা প্রধান সেই সাথে আনছার ভিডিপিতে যোগদান করি। এলাকার মানুষদের বিভিন্ন প্রকারের সেবা প্রদানে তারা আমাকে ইউ’পি সদস্য হওয়ার উৎসাহ প্রদান করেন।

২০১১ সালে আমি স্থানীয় মানুষের ভোটে সংরক্ষিত নারী আসনে ইউ’পি সদস্য নির্বাচিত হয়। ইউ’পি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমি সমাজের মানুষের বিভিন্ন রকমের সেবা ও সহযোগিতা প্রদান করে আসছি।


ভারতী রানী
নির্যাতনের বিভিশিক্ষা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করেন যে নারী ভারতী রানী, স্বামীঃ জিতু বর্মন, গ্রামঃ ডাঙ্গাপাড়া, তিনি বলেন, তার স্বামী ছিল জুয়ারু। বিয়ের ২ মাসের মাথায় তার উপর নেমে আসে নিযার্তত।  জুয়া খেলায় নেশায় তার স্বামী দোকান বিক্রি করে দেয়। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের সংসারে নেমে আসে অভাব অনটন। এক পর্যায়ে তার স্বামী ও শশুর তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

অন্যের বাড়িতে কাজ করে সে কিছু টাকা সঞ্চয় করেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি একটি গরু ক্রয় করেন। এর মধ্যে তার কোল জুড়ে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। গরু ও মেয়েটি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এক সময় গরু বিক্রি করে তার স্বামীকে পুনরায় একটি দোকান ঘর ধরিয়ে দেন। শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম।

স্বামীকে জুয়ামুক্ত করেন ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলেন। মেয়ের পাশাপাশি আরো একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ছোট দোকান থেকে আস্তে আস্তে স্বামীকে একটি বড় দোকান করে দেন। সেই সাথে ছেলে ও মেয়েকে মানুষ করতে থাকেন। বর্তমানে তার মেয়ে সেনাবাহিনীতে চাকুরী করছেন। ছেলেকে কলেজে পড়াশুনা করাচ্ছেন।

সংসারের অভাব অনটন কেটে গেছে। স্বামী, মেয়ে এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ডের সহযোগিতায় তারা এখন অনেক সম্পদের মালিক হয়েছে। এখন তার সংসারে কোন অভাব নেই, অভিযাগ নেই নেই নির্যাতন।

 

রাহেনা বেগম
অর্থনেতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী মোছাঃ রাহেনা বেগম, স্বামী মোঃ ইয়ানুছ আলী, গ্রামঃ সরকারপাড়া, তিনি বলেন, আমি এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান, ২০০০ সালে আমি যখন এসএসপি পাশ করি তখন আমার পরিবার আমাকে এক দরিদ্র পরিবারের ইয়ানুজ আলী সাথে বিয়ে দেয়। স্বামী সংসারে সুখ দুঃখের মধ্যে দিয়ে আমার দিন চলতে থাকে। এর মধ্যে আমার কোল জুড়ে ২টি ছেলে ১টি মেয়ের জন্ম হয়।

অভাবের কারণে কোন রকমে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে না খেয়ে আমার সংসার চলতে থাকে। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি। আমি তখন দরিদ্রের কষাঘাত থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তার উপায় খুজতে থাকি। যুব উন্নয়ন অফিস থেকে গবাদি পশুপালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করি।

একটি এনজিও থেকে লোন দিয়ে একটি গাভী ক্রয় করে পালতে থাকি। সেই সাথে হাঁস মুরগী ও ছাগল পালন শুরু করি। সেখান থেকে আর আমাকে ফিরে তাকে হয়নি। এর পর মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং কৃষি অফিস ও হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড থেকে কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে ও জমি বর্গা নিয়ে মাছ চাষ ও চাষাবাদ শুরু করি।

লাভের অংশ থেকে আমার স্বামীকে একটি ফার্নিচারের দোকান তৈরী করে দিয়েছি এবং ৩ বিঘা জমি নিয়ে সেখানে চাষাবাদ করছি এবং সংসার আমার সন্তানদের লেখাপড়া চালাচ্ছি। বড় ছেলে সপ্তম শ্রেণি, ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণি এবং মেয়ে কেজি স্কুলে পড়াশুনা করছেন। বর্তমানে তার সংসার ভালই কাটছে বলে তিনি জানান।  

এবিএন/মোঃ লিহাজ উদ্দীন মানিক/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ