আজকের শিরোনাম :

সদরপুরে শিম চাষে সফলতা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫৫

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার সবজি চাষিদের চোখে-মুখে এখন তৃপ্তির হাসি। বিষন্নতার ছাপ অনেকটাই ম্লান হয়েছে তাদের শীতকালিন শিম চাষের মধ্য দিয়ে। সাধারণত শীতকালে শিম চাষ করেন সবজি চাষিরা। 

এবার নতুন ‘বারি-৪’ ও ‘ইপসা-১’ জাতের শিমের ফলন ভালো হয়েছে। শীতকালে চাষে ফলন ও দাম-দুটোই তারা পেয়েছেন ভালো। এ কারণে সবজি চাষিরা এবার ভীষণ খুশি বলে জানিয়েছেন তারা।

গতকাল রোববার সকালে উপজেলার শৌলডুবী এলাকা ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর শিমের মাচা। ছড়ায় ছড়ায় ঝুলছে শিম। বিষয়টি জানতে চাওয়া হয় ওই এলাকার সবজি চাষি আলম বেপারী কে। সে নিজেকে একজন সফল শিম চাষি হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সারাদিন শিমের মাচায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বিক্রির পাশাপাশি বীজ উৎপাদন করছেন। 

গত বছর ৬ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে প্রায় ২০থেকে ৩০হাজার টাকা আয় করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চলতি মৌসুমে ১৮/২০ হাজার টাকা খরচে ৬৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল শিমের চাষ করেন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য এবং বাকী ৩৫ শতাংশ জমির শিম সবজি হিসেবে গত এক মাস ধরে বাজারে বিক্রি করছেন।

চলতি মৌসুমে জেলার মধ্যে সদরপুর উপজেলার জেলার ৬টি ইউনিয়নে শীতের সব্জী শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইউনিয়ন গুলো হলো, কৃষ্ণপুর, সদরপুর, চরবিষ্ণুপুর, চরনাছিরপুর, ভাষানচর ও আকোটেরচর। প্রতিটি এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মন শিম বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ শিম খেত থেকে তোলার পর বাড়ির উঠানে বা সড়কের পাশে স্তপ করা হচ্ছে। পরে স্তপকরা শিম বস্তায় ভরে ওজন দিয়ে মন হিসাবে বিক্রি করা হচ্ছে। খেত থেকে তুলে আনা শিম বাজারে পাইকারী ও খুচরা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। 

পাইকাররা স্থানীয় হাট-বাজার থেকে শিম ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করছেন। ভাষানচর ইউনিয়নের কারীরহাট গ্রামের আঃ মালেক মোড়ল জানান, এ বছর আমি ৯হাজার টাকা খরচ করে শিম খেত করেছিলাম। আমার পুজি ওঠে গেছে। বিক্রিও হয়েছে বেশ ভালো। আরেক চাষি ইউনুছ খালাসী জানান, ভালোভাবে শিম খেতের পরিচর্যা করেছিলাম। যে টাকা খরচা হয়ে ছিলো তার চেয়ে অধিক লভ্যাংশ হয়েছে। আগামীতে আরও বেশী চাষাবাদ করবো।

চরবিষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষক খবির উদ্দিন জনান, এ বছর তিনি মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে শিমের মের চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। ওই গ্রামের আরেক সবজি চাষি জোনায়েত আলী। তিনিও প্রায় এক বিঘা জমিতে শীতকালীন শিম চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এই বছর পোকা মাকড়ের উপদ্রব কম। অন্য মৌসুমবাদে শীতকালীন সময়ে শিম চাষের চেয়ে শিম চাষে রোগবালাই অনেকাংশে কম। তাই ওষুধ ও সার খরচও কম। এ সময় শিমের বাজারদামও ভালো। প্রতিকেজি শিমের পাইকারি মূল্য পেয়েছি ১৫ থেকে ২০ টাকা। প্রতিমন শিম ৫২০থেকে ৫৫০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চরনাছিরপুর ইউনিয়নের সবজি চাষি আব্দুর রাজ্জাক করিম বলেন, শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে এই শিমের বীজ বপন করতে হয়। চারা বের হওয়ার ২৫ থেকে ৩০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসা শুরু হয়। 

দেড় মাস বয়সের গাছ থেকে শিম তোলা শুরু হয়। তিন থেকে চার দিন পর পর শিম তুলে আমরা বিক্রি করি। তিনি বলেন, আমরা অনেকেই এর আগে সবজি চাষ করে দাম না পেয়ে ঋণে জর্জরিত ছিলাম। এখন আমরা অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি। সদরপুর উপজেলার শৌলডুবী  গ্রামের কৃষক শুক্কুর আলী জানান, গত কয়েকমাস পূর্বে অবিরাম বর্ষণে তাদের ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। আর তাই এ ক্ষতিকে পুষিয়ে নিতে তিনি বেশ জমিতে সীমের চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি তার জমি থেকে উৎপাদিত প্রায় ৪০ হাজার টাকার সীম বিক্রি করেছেন। এ বছর আবহাওয়া ও পোকা মাকড়ের উপদ্রব না থাকায় সীম চাষিরা ব্যাপক আনন্দে রয়েছে।

আকোটেরচর ইউনিয়নের সোবাহান মুন্সী জানান, ইতিমধ্যে তিনি তার জমিতে উৎপাদিত ২০ হাজার টাকার সীম বিক্রি করেছেন। দামও পেয়েছেন ভাল। গত বুধবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, শীতের আগাম বার্তায় কুয়াশায় ভেজা ভোরের আলোতে সীম ক্ষেতে কাজ করছেন কৃষক কৃষাণীরা। সদরপুর অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক এবার বেশী করে শিম চাষ করেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে এ সীম সরবরাহ করা হয়ে থাকে। 

সদরপুর কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় জানান, শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। এর বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। তাই দেশে এর চাহিদা ব্যাপক। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শিম চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এবছর সজ্বি ফসল হিসাবে ৩৫ হেক্টর আবাদ রয়েছে। এর মধ্যে শিম রয়েছে ৯০ হেক্টর। 

এবিএন/মোঃ সাব্বির হাসান/গালিব/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ