আজকের শিরোনাম :

সীতাকুণ্ডে আশঙ্কজনক হারে কমে যাচ্ছে আবাদি কৃষি জমি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:২১

সীতাকুণ্ডে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে আবাদি কৃষি জমির পরিমাণ। দুই ও তিন ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় ফসলের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। আবাদি জমির ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে আগামী একদশক পরে সীতাকুণ্ডে চরম খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

অপরিকল্পিত বাড়ীঘর, নতুন নতুন শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত,হাট-বাজার নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে সীতাকুণ্ডে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

গত কয়েক দশকে ২০/২৫ হাজার একর আবাদী জমি নষ্ট হয়েছে বিভিন্নভাবে। কৃষি জমি বিনষ্টের এ প্রক্রিয়া যুগ যুগ ধরে চলতে থাকলেও তা প্রতিরোধের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না সরকারী মহল থেকে। দক্ষিণ সীতাকুণ্ডের ১২ মাইল উপকুলীয় জনপদ সমুদ্রের ভাঙ্গনে তছনছ হয়েছে। বাস্তুুহারা হয়েছে অসংখ্য পরিবার। আবাদী জমি বিলিন হয়েছে কয়েক হাজার একর।

এদিকে সন্দ্বীপের অব্যাহত ভাঙ্গনের বিরূপ প্রক্রিয়ায় পড়েছে সীতাকুণ্ডের ওপর। ভাঙ্গনের তাড়া খেয়ে সন্দ্বীপের লোকজন সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় নতুন বাড়ীঘর নির্মাণ করছে প্রতিবছর। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় দশ সহস্রাধিক পরিবার বিভিন্ন সময়ে সন্দ্বীপ থেকে এসে সীতাকুণ্ডে বসতি গড়েছে। যার চাপ পড়েছে এখানকার কৃষি জমির ওপর।

সীতাকুণ্ডের আয়তন ১৪৮ বর্গমাইল। এই উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে দেশের প্রধান চার লেইনের মহাসড়ক ও রেললাইন। মহাসড়ক ও রেললাইন দু’টির গা ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে বহু ছোট-বড়,মাঝারী ও ক্ষুদ্র শিল্প কল-কারখানা। এছাড়াও ১৫০ টির বেশী রয়েছে শিপব্রেকিং ইয়ার্ড।

গত কয়েক বছরে উপজেলার বাড়বকুণ্ড এলাকায় কৃষি জমির উপর গড়ে উঠেছে বেশ কিছু এলপি গ্যাস ফ্যাক্টরী। যার ফলে শ’ শ’ হেক্টর জমি হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া গ্রামীণ সড়ক ও হাট-বাজার নির্মাণ, সরকারী অফিস-আদালত স্থাপন,স্কুল-কলেজ,মাদ্রাসা,মক্তবসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোড়াপত্তনের ফলে আবাদী জমি নষ্ট হচ্ছে প্রতি বছর।

সরকারী হিসাব মতে সীতাকুণ্ড উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমাণ ১০ হাজার হেক্টর। সীতাকুণ্ডে জনসংখ্যার পরিমান হু হু করে বাড়লেও কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়নে লোকসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ।

সীমানা ও আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কলকারখানায় কর্মরত বাইরের লোকজনের বাসস্থানের সুবিধার্থে মিল এলাকার কাছাকাছি কৃষি জমির ওপর তৈরি করা হয়েছে ভাড়াটে ঘর। সীতাকুণ্ডের প্রকৃতি কোথাও নিস্ফলা নয়।

পাহাড়,সমুদ্র, সমতলভূমি সকল প্রান্তেই সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় ন্যূনতম উপাদান আছে, পাহাড়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সম্পদ, যেমন পেয়ারা, কাঁঠাল, পেঁপে,আম,কলা, লিচু, আনারস, বাতাবি লেবু, তরমুজ, বাঈগী, আঁখ ইত্যাদি। কাঁচা শাকসবজীর চাষও বেশ হয়ে থাকে। সমুদ্রে রয়েছে মৎস্য সম্পদ।

সমুদ্রের উপকুলীয় এলাকায় রয়েছে বনজ সম্পদ ও শীপ ইয়ার্ড শিল্প। সমতল ভূমিতে রয়েছে শতাধিকেরও বেশি বৃহৎ শিল্প-কারখানা, সরকারী-বেসরকারী অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান এবং কোটি কোটি টাকার অর্থকরী ফসল বা কৃষিজাত দ্রব্যাদি।

শীতকালে যেমন সবধরণের শাক-সবজি তেমনী গ্রীস্মকালেও সবধরণের গ্রীস্মকালীন শাক-সবজি প্রচুর উৎপাদন হয়। বলাবাহুল্য শীতকালীন শিম উৎপাদনে সীতাকুণ্ডের সুনাম দেশে ছেড়ে বিদেশও। মোটকথা অর্থনৈতিক দিক থেকে সীতাকুণ্ড বেশ সমৃদ্ধ এলাকা। স

রকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতেও সীতাকুণ্ড উপজেলা বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার থেকে অধিকতর এগিয়ে।

সীতাকুণ্ডের প্রতিটি গ্রামকে কৃষি অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বলা যায়।

 কৃষি এখানকার গ্রামীণ জনগণের প্রধান পেশা। এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে রয়েছে-ধান, শাক-সবজি,আদা, হলুদ, চিনা বাদাম, তরমুজ,বাঙ্গী, পেয়ারা, কাঁঠাল, পেঁপে,আম,কলা, লিচু, আনারস, বাতাবি লেবু, আঁখ। তন্মধ্যে শিম উৎপাদন উল্লেখযোগ্য।

এখানে ক্ষেতের আইলে প্রচুর শিম রোপণ করা হয়। বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদের ফলে কৃষিখাতে ফসলাধীন জমির হারে গড় উৎপাদন বাড়লেও সামগ্রীভাবে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। তার প্রধান কারণ জনসংখ্যা বিস্ফোরনের ফলে এবং নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার কারণে প্রতিবছর কৃষি জমি আশঙ্কজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।


এবিএন/রাজীব/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ