আজকের শিরোনাম :

আজ পলাশবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:৫৩

আজ ৮ ডিসেম্বর। পলাশবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস। আজকের এইদিনে ঘাতক পাক হানাদার বাহিনী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। শত্রু মুক্ত হয়ে বিজয় এসেছিল পলাশবাড়ীতে। স্থানীয় ভাবে দিনটি বড়ই বেদনা বিঁধুর। হানাদার বাহিনী পতনের পর এলাকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দে উদ্বেলিত কন্ঠে বিজয় উৎসবের কাফেলা 'জয় বাংলা'-'জয় বাংলা' ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল পলাশবাড়ীর আকাশ-বাতাস।

মুক্তিযুদ্ধে পলাশবাড়ী এলাকার অনেকেই সম্মুখ যুদ্ধে হয়েছিলেন শহীদ। যারা বেঁচে ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ থাকলেও অনেকেই আজ বেঁচে নেই। 

দিনের পর মাস-মাসের পর দীর্ঘ বছর পেরিয়ে গেছে। জীবিত ওইসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আজ অনেকেই পরলোকগত। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে কত মানুষ নিহত হয়েছেন। কত মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছে। নাম না জানা অনেকেই হয়েছেন বীরঙ্গনা। এসবের সঠিক তথ্য কেউ জানে না। হানাদার বাহিনী কথা বলতো বায়োনেট দিয়ে এবং হাসতো মানুষের বুকে মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে গুলি চালিয়ে তাজা রক্ত ঝড়িয়ে।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছরে নির্দিষ্ট কিছু স্থান ছাড়া অসংখ্য গণকবর ও বধ্যভূমি এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন। কালের বিবর্তনে বহু গণকবর ও বধ্যভূমির নাম নিশানা পর্যন্ত মুছে গেছে। কতিপয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্রের কালো হাতের ছোয়ায় সেখানে গড়ে উঠেছে আবাদি জমি ছাড়াও স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দালান-বাড়ি।
অযতœ-অবহেলায় অনেক গণকবর আজ বন-জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে। বিগত ৪৮ বছরে গণকবরগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে লোক চক্ষুর অন্তরালে। পলাশবাড়ীর চিহ্নিত সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অভ্যন্তরে পাক হানাদারদের ক্যাম্পে এলাকার অসংখ্য স্বাধীনতাকামীদের ধরে নিয়ে এসে পাক হানাদার বাহিনী নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়।

এ স্থানটিতে নিহত শহীদদের গণকবর দেয়া হয়। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন সেখানে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে একটি নাম ফলক নির্মাণ করেন। উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত কাশিয়াবাড়ীর পশ্চিম রামচন্দ্রপুরে পাক হানাদার বাহিনী স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার-আলবদর-আলসামসসহ তাদের দোসরদের সহযোগিতায় এলাকার বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুদের ধরে নিয়ে এসে একত্রে সারিবদ্ধ করে প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়।


পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন এখানেও একটি নাম ফলক নির্মাণ করেন। শুধুমাত্র মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের দিনে বীর শহীদদের আনুষ্ঠানিক ভাবে স্মরণ করা হয়ে থাকে। গোটা বছর চিহ্নিত বধ্যভূমি গুলো থাকে চরম অবহেলিত। এগুলো সবই এখন গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্থানীয় পিয়ারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাকিন্তানী হানাদার প্রতিরোধ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। গোটা মার্চ মাস জুড়ে পলাশবাড়ী এলাকা ছিল উত্তাল। এই উত্তাল দিনগুলোতে ঘাতক পাকবাহিনী বীর সেনাসহ ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। 

পাকবাহিনী সেদিন পাবনা জেলার ঐতিহ্যবাহী নারিন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎসময়ের প্রধান শিক্ষক গর্বিত পিতা আব্দুল আজিজ ও মাতা ফাতেমা বেগম দম্প্রতির বীর দামাল সন্তান লেপ্টে: রফিককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। পার্শ্ববর্তী ভারতে এলাকার অসংখ্য নর-নারী শরনার্থী হয়ে প্রবেশ করেছিল। পাক বাহিনীদের সহায়তায় স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধীরা তৎসময় ২ কোটির্ধ্ব টাকা মূল্যের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন সম্পদ বিনষ্ট করেছিল। পাকবাহিনীরা নানা শিঁহরিত ও লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ চালানোর এক পর্যায়ে ৮ ডিসেম্বর পলাশবাড়ী এলাকা পাক হানাদার মুক্ত হয়।

১৬ ডিসেম্বর জাতীয় মহান বিজয় দিবসটিকে স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখতে পলাশবাড়ী উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডসহ স্বাধীনতা পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। 


এবিএন/আরিফ উদ্দিন/গালিব/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ