আজকের শিরোনাম :

৮ই ডিসেম্বর ভালুকা হানাদার মুক্ত দিবস

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৩

৮ই ডিসেম্বর ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মেজর আফসার বাহিনী কাছে এই দিনে ভালুকা ক্যাম্পের কয়েক হাজার রাজাকার ,আলবদর ও পাক সেনার আতœসর্মপনের মধ্য দিয়ে ভালুকা মুক্ত হয় । সেদিনের কুয়াশা চাদর ঘেরা ভোরে প্রচন্ড গুলাগুলির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে ভালুকার মুক্তিকামী জনতার ।

 মেজর আফসার বাহিনীর মুক্তি সেনাদের আক্রমনের মুখে পাকসেনা ও রাজাকাররা সুর্য্য উঠার আগেই ভালুকা ক্যাম্প ছেড়ে পাশ্ববর্তী গফঁরগাওয়ের উদ্দেশ্যে সড়ক পথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায় । এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলে । অনেক রাজাকার অস্ত্র ফেলে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে গেলেও বেশীরভাগ আতœসমর্পন করতে বাধ্য হয় । পরে মুক্তিরা তাদেরকে ভালুকায় ফিরিয়ে আনে । ভোরের আলো ফুটতেই জয় বাংলা ধ্বনি তুলে গ্রাম থেকে দলে দলে লোক জমা হতে থাকে হানাদার মুক্ত ভালুকা সদরে ।

আটককৃত রাজাকারদের প্রতি ঘৃনা ও ধিক্কার জানায় স্বাধীন ভালুকার সর্বস্তরের মানুষ । ১৯৭১সনের মুজিবের নির্দেশে বাংলাকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ৭১এর ১৭ই এপ্রিল বৃটিশ ভারত সেনাবাহিনীর (অব.)সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আফসার উদ্দিন ১টি মাত্র রাইফেল ও ৮জন সদস্য নিয়ে মল্লিকবাড়ী বাজারে গোপনে মুক্তিবাহিনী দল গঠন করেন ।

কয়েকদিনের মধ্যেই তারা ভালুকা থানা দখল করে ১৫/১৬টি রাইফেল ও একটি এল এম জি এবং কিছু গোলাবারুদ সংগ্রহ করে । এর কয়েকদিনের মাথায় কাউরাইদ থেকে ক্ষীরু নদী দিয়ে ভালুকা থানায় আসার পথে পনাশাইল নামক স্থানে পাক বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ একটি নৌকা মুক্তিযোদ্ধারা আটক করে প্রচুর অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করে । পরে ভারতের মেঘালয় হতে প্রশিক্ষন সহ প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসার পর এটি একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিনত হয় । আফসার উদ্দিনের ৮ সদস্যর দলটি সারে চার হাজারে উন্নীত হয়ে এফ জে ১১নং সেক্টরের ময়মনসিংহ সদর দক্ষিন ও ঢাকা সদর উওর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফসার ব্যাটেলিয়ন নামে পরিচিত লাভ করে ।

৭১এর ২৫শে জুন শুক্রবার সকাল হতে পরদিন শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভালুকা গফরগাঁও সড়কের ভাওয়ালিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পারে পাক বাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৩৬ঘন্টা আফসার বাহিনীর একটানা যুদ্ধ হয় । এই যুদ্ধে তরুন মুক্তিযোদ্ধা অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মল্লিকবাড়ী গ্রামের আঃ মান্নান শহীদ হন । আহত হয় ৫জন মুক্তিযোদ্ধা । মুক্তিযোদ্ধারা নদীর পশ্চিম দিক হতে একটানা দু’দিন সম্মুখ যুদ্ধ করায় শতাধিক পাক সেনা নিহত হয় ।

 এ যুদ্ধের খবর তৎকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ,অল ইন্ডিয়া রেডিও ও বিবিসি হতে ফলাও করে সম্প্রচার করা হয় । এই যুদ্ধের পর ভালুকায় পাক বাহিনীর ক্যাম্পটি শক্তিশালী করা হয় । অপরদিকে স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতারা এখানে ঘরে তুলে বিশাল রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প । এসব রাজাকার আল বদররা ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে দিনের পর দিন হত্যা ,নারী ধর্ষণ,বাড়ী ঘরে আগুন ও লুটপাট চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে । আফসার বাহিনী বিভিন্ন সময়ে ভালুকা ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকবার আক্রমন চালিয়েছে ।

এছাড়াও আমলীতলাযুদ্ধ,বল্লা যুদ্ধ,ত্রিশাল ,গফরগাঁও ,ফুলবাড়িয়া ,শ্রীপুর ,মল্লিকবাড়ী ও মেদুয়ারী সহ বিভিন্ন স্থানে পাক সেনা ও রাজাকারদের সাথে আফসার বাহিনীর যুদ্ধ হয় । দীর্ঘ ৯মাসের যুদ্ধে আফসার উদ্দিনের পুত্র নাজিম উদ্দিন সহ ৪৭জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করে ।

দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসুচী পালন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভালুকা উপজেলা কমান্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যেসব কর্মসূচী নেওয়া হবে ভোরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন.কবর জিয়ারত,মুক্তিযোদ্ধা জনতা বিজয় র‌্যালী ও মিলাদ মাহফিল এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ।


এবিএন/জাহিদুল ইসলাম/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ