স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর
সোনাগাজীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবছার হত্যা মামলার চার্জশীট দাখিল
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৩১
৪৭ বছর পর সোনাগাজীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার হত্যা মামলার চার্জশীট দাখিল করেছে পুলিশ। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন গতকাল রবিবার (২ ডিসেম্বর) ফেনীর আদালতে চার্জশীট দাখিল করে।ফেনী কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ জিলানি বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবর কে রক্ষা করতে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর সোনাগাজী থানা কম্পাউন্ডে বিএফএফ কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার কে হত্যা করে লাশ মাটিতে চাপা দেয় রাজাকার শাহজাহানের ভাই বর্তমান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছির উদ্দিন ও তার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধারা।
১৯৭২ সালে আবছারের পিতা মৌলভি আহাম্মদ করিম বাদী হয়ে নাছির সহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করলেও সেটা আলোর মুখ দেখেনি।৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রাজাকার শাহজাহান আকবরের প্রভাবে মামলাটি ধামাচাপা পড়ে যায়।
২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে আবছারের ইতালি প্রবাসী ভাই গোলাম কিবরিয়া পুনরায় বাদী হয়ে ফেনীর চীপ জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালতে বর্তমান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছির উদ্দিন,সাবেক কমান্ডার মোশারফ হোসেন,রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবর,মুক্তিযোদ্ধা আর্মি মনির,মাহবুবুল হক,সফি উল্যা,আবুল কাশেম কাজির নাম উল্লেখ করে হত্যার অভিযোগ দায়ের করে।আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।
বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর বিকালে রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবর কে আটক করে সোনাগাজী থানার হাজতে রাখে এফএফ কমান্ডার নুরুল আবছার।রাজাকার শাহজাহানকে রক্ষা করতে তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছির উদ্দিন অপর কমান্ডার মোশারফ হোসেন আবছার কে হত্যার নির্দেশ দেন।নির্দেশ পেয়ে ওই সময় দক্ষিন চরছান্দিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আর্মি মনির আহাম্মদ ও তুলাতুলির মাহবুবুল হক কৌশলে জোরপূর্বক আবছারের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়।
এরপর সোনাপুরের মুক্তিযোদ্ধা সফি উল্যাহ,সুজাপুরের আবুল কাশেম কাজি পর্যায়ক্রমে আবছার কে ৮ রাউন্ড গুলি করলে সে ঘটনাস্থলে নিহত হলে লাশ থানার পুকুর পাড়ে মাটি চাপা দেয়।১৭ ডিসেম্বর আবছারের পিতা মৌলভি আহম্মদ করিম লাশ উদ্ধার করে দাফন করে।
মামলাটির প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে তদন্তে ধীরগতি ও আসামীদের রক্ষার অভিযোগ উঠে।চলিত বছরের জানুয়ারী মাসে তিনি বদলী হয়ে গেলে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন।তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরেই মামলার তদন্তে গতি ফিরে পায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন জানান,এ মামলায় বাদীর অভিযোগের স্বপক্ষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি দিয়েছে যুদ্ধকালীন কমান্ডার আজিজুল হক চাষী,মফিজুল হক পাটোয়ারী, কেএম খুরশিদ আলম,ডেপুটি কমান্ডার দুলাল আহমদ,আবু তাহের তানু, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন(অব:) মো: ছাদেক,মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর হালিম ও হোসেন আহম্মদ।
তিনি আরো জানান,বাদীর অভিযোগের পর অভিযুক্তরা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করে।আদালত ৪২ দিনের জামিন দিয়ে নিম্ম আদালতে আসামীদের আত্মসমর্পনের আদেশ দেয়।পরে আসামীরা ফেনীর আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালত জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরন করে। কয়েকমাস কারাভোগের পর বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত রয়েছে।
মামলার বাদী গোলাম কিবরিয়া সমকাল কে বলেন,৪৭ বছর পরে হলেও আবছার হত্যাকান্ডের বিচার শুরু হওয়ায় আমাদের পুরো পরিবার খুশি।তিনি আশা প্রকাশ করেন আদালত ন্যায় বিচার করবেন।সত্য উদঘাটনে যেসকল মুক্তিযোদ্ধা তাদের সহায়তা করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধ নুরুল আবছার আবছার সোনাগাজীর সদর ইউপির সুজাপুর গ্রামের মৌলভি আহম্মদ করিমের ছেলে।৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়ে ট্রেনিং শেষে দশে ফিরে সোনাপুরে ঘাঁটি করে যুদ্ধ পরিচালনা করে।তিনি ছিলেন বিএফএফ কমান্ডার।তার নেতৃত্বে সোনাগাজীর পূর্বাঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়।
এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা
এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা
এই বিভাগের আরো সংবাদ