আত্রাইয়ে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:৪৫

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসূচীতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
 
নামধারী শ্রমিকরা মাঠে না থাকলেও ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করেন বোরকা পরে গিয়ে। এ কর্মসূচীর আওতায় ৯দিনের প্রায় লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। সরকার থেকে এলাকার উন্নয়নের বরাদ্দগুলো এভাবে ভাগাভাগি করে পকেট ভরছেন কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ইউনিয়ন পরিষদে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) আওতায় ৪০ দিনের কর্মসূচীতে রাস্তায় মাটি কাটার কাজ চলমান আছে। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মাস্টার রোল খাতায় ১৪৬ জন নারী-পুরুষের নাম আছে। প্রতিদিন ২শ টাকা পারিশ্রমিক। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতি ও শুক্রবার। পারিশ্রমিক ২শ টাকা হলেও ১৭৫ টাকা শ্রমিকদের দিয়ে বাকী ২৫ টাকা সঞ্চয়ের জন্য কেটে রাখা হয়।

সরেজমিনে জানা যায়, গত রোববার ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ক্ষুদ্র বিশা গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায় নারী-পুরুষরা ক্ষুদ্র বিশা গ্রাম থেকে উদয়পুর গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধের রাস্তা নির্মাণের কাজ করছেন। সেখানে উপস্থিত একটি খসড়া খাতায় ৯টি ওয়ার্ডের ৯৩ জন নারী-পুরুষের নাম আছে। হাজিরা খাতা থেকে দেখা যায় সেদিন ১০ জন অনুপস্থিত ছিলেন। কাজ শুরু হওয়ার পর ২৪ শে নভেম্বর পর্যন্ত পিআইও অফিস থেকে কোন কর্মকর্তা সেখানে যাননি। কিন্তু ২৫ শে নভেম্বর পিআইও অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের হাজিরা খাতা দেখে স্বাক্ষর করেন। এবং সেদিন সেই খাতায় ১০ জন অনুপস্থিত পান। কিন্তু বাস্তবে সেদিন অনুপস্থিত ছিল ৬৩ জন শ্রমিক।

সেখানে হাজিরা খাতা মূলত লোক দেখানো। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার জহুরুল ইসলামও জানেন না সেখানে মূলত কতজন শ্রমিক থাকবে। কারণ মাষ্টার রোল তাকে দেখানো হয়নি এবং বলাও হয়নি। মাস্টার রোল খাতায় ১৪৬ জনের নাম থাকলেও মুলত কাজ করেন ৯৩ জন। বাকী ৫৩ জনের নাম কেউ জানে না এবং তাদেরকে কেউ কোনদিন ওখানে কাজ করতে দেখেনি। এ ৫৩ জন শ্রমিকের ৯দিনে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে। এছাড়া ৯৩ জনের মধ্যে যারা অনুপস্থিত থাকেন তাদেরকে উপস্থিত দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়।

যারা নিয়মিত কাজ করেন তারাও জানেন না কত শ্রমিক কর্মসূচীতে কাজ করছেন। কিন্তু ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে অনেকেই টাকা উত্তোলন করেন। অর্থ্যাৎ তালিকাভূক্ত নামধারী শ্রমিকরা কাজ না করেও নিয়মিত কাজে উপস্থিত দেখিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যান টাকা তুলে আত্মসাত করছেন।

১ নং ওয়ার্ডের রানীনগর গ্রামের সামাদ আলী বলেন, ৯দিনের মধ্যে কাজে ২দিন অনুপস্থিত ছিলাম। খসড়া হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখানো হলেও তাকে উপস্থিত দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। টাকা উত্তোলনের দিন ব্যাংকের দরজায় লক্ষ্মী মেম্বার তার কাছ থেকে ৩০০ টাকা জোর করে নিয়ে নিয়েছেন।

ভাঙ্গাজাঙ্গাল গ্রামের শ্রমিক মোফাজ্জল শেখ বলেন, বাড়িতে কাজ থাকায় ৩ দিন কাজে আসতে পারিনি। কিন্তু ব্যাংকে টাকা উত্তোলনের সময় হাজিরা দেখিয়ে আমার নামে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং আমাদের প্রত্যেকের পাশ বই পিআইসিরা নিয়ে রাখছেন। আবার ব্যাংকে দেখা যায় যারা কখনো কাজ করেনি অনেক মহিলা বোরকা পরে এসে টাকা উত্তোলন করেছেন। তাদেরকে আমরা চিনিও না এবং আমাদের সাথে কখনো কাজ করেনি।

খরসতি গ্রামের চায়না বিবি বলেন, আমরা যারা কাজে অনুপস্থিত থাকি তাদেরকে হাজিরা দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে দরজার বাহিরে আসার পরই মহিলা মেম্বাররা অনুপস্থিত থাকার টাকা জোর করে নিয়ে নেয়।

৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার জহুরুল ইসলাম জহের বলেন, ক্ষুদ্র বিশা গ্রাম থেকে উদয়পুর বাঁধ পর্যন্ত রাস্তার কাজ হচ্ছে। কাজের পিআইসি মহিলা মেম্বার ময়না ও লক্ষ্মী রানী। কতজন শ্রমিক কাজ করছেন সে তালিকা কাউকেই দেখানো হয়নি। শ্রমিকরা কাজে অনুপস্থিত থাকলেও শতভাগ উপস্থিত দেখিয়ে পিআইও অফিসের কর্মকতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজসে ব্যাংক থেকে ঠিকই টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। অনিয়মের বিষয়টি প্রশাসন তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।

উপসহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, ১৪৬ জনের নামের তালিকা আমাদের কাছে আছে। ২৫ অক্টোবর ঘটনাস্থলে গিয়ে খসড়া খাতায় ৯৩ জনের মধ্যে ১০ জন অনুপস্থিত পাই। বাকীগুলোর বিষয় জানি না। ইতোপূর্বে ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় পাননি বলেও জানান। তবে যারা অনুপস্থিত থাকে তাদের টাকা দেয়া হয়না বলেও তিনি দাবী করেন।

উপজেলার বিশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের সভাপতি মো: মান্নান মোল্লা বলেন, এরকম অনিয়মের কথা আমার জানা নেই। যদি অনিয়ম হত এবং কেউ যদি অভিযোগ দিত তাহলে আমি ব্যবস্থা নিতাম। আর যদি এরকম অনিয়ম থেকেই থাকে তাহলে এটি পিআইও’র বিষয়। আমি পিআইসি দিয়েছি এবং রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছি কাজ করার জন্য। যদি কেউ কাজে না আসে তাহলে অনুপস্থিত দেখাবে। আর কাজে যারা অনুপস্থিত থাকে তাদেরকে টাকা দিবেই বা কেন। তবে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নভেন্দু নারায়ন চৌধূরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি ঠিক না। চেয়ারম্যান যদি বলেই থাকেন তাহলে ভাল কথা। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কর্মসূচীতে যাদের নাম আছে সে তালিকাতো চেয়ারম্যানই দিয়েছেন। আমিতো কাউকে চিনি না।

 আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃছানাউল ইসলাম বলেন, এরকম কোন অভিযোগ আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।
                       
এবিএন/রুহুল আমীন/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ