আজকের শিরোনাম :

কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

বদলে যাওয়া একটি সরকারি হাসপাতাল

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:১৭

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কের পাশেই কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই সরকারি হাসপাতাল দেশের অন্য উপজেলা হাসপাতাল থেকে বেশ কিছুটা আলাদা। সারা দেশে নবম স্থানে হাসপাতালটি ঝকঝকে, তকতকে। সেবা নিয়েও এলাকার মানুষ সন্তুষ্ট।  স্থানিয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি’র সহায়তায় গত ১ বছরে এই সরকারি হাসপাতালে পরিবর্তন এসেছে।

গ্রামের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের চিকিৎসার বড় আশ্রয়স্থল উপজেলা হাসপাতাল। দেশে এ রকম হাসপাতাল আছে প্রতি উপজেলায় ১টি করে মোট ৪৯১টি। কিছু কিছু হাসপাতালে সীমানাপ্রাচীর নেই। কিছু হাসপাতালে প্রাচীর থাকলেও তা ভাঙা। হাসপাতালে গরু-ছাগল অবাধে যাতায়াত করে। দেয়ালে পানের পিক, চুনের দাগ চোখে পড়ে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনার ¯তুপ।

ওয়ার্ডগুলোতে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে রোগীর চিকিৎসা চলে। হাসপাতালজুড়ে উৎকট গন্ধ। সারা দিনে হয়তো একবার ঝাড়ু পড়ে ওয়ার্ডে। টয়লেটগুলো ভাঙা ও নোংরা থাকায় রোগী ও তাদের আত্মীয়রা সেগুলো ব্যবহার করতে চায় না। কাপাসিয়া উপজেলা হাসপাতালের চিত্র এক বছর আগেও এ রকম ছিল।

৩ নভেম্বর হাসপাতাল ফটক দিয়ে ঢোকার সময় একজন প্রহরী চোখে পড়ে। তিনি রিকশা, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন। পরিচ্ছন্ন রাস্তা, সবুজ চত্বর ও ফুলবাগানও চোখে পড়ে। হাতের বাঁ দিকে নতুন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নার্সিং কলেজ। জরুরী বিভাগের সামনে চেয়ার রাখা সেখানে রোগী ও তাদের আত্মীয়রা সেখানে এসে বসেন। পাশেই টিকিট কাউন্টার। হাসপাতালের ভেতরে অন্য কোথাও গাড়ি বা যানবাহন রাখা নিষেধ।

৫০ শয্যার হাসপাতালের মূল ভবনে ঢুকলে মনে হবে রাজধানীর পাঁচ তারকা হাসপাতালগুলোর কোনো একটির ছোট সংস্করণ। সব কক্ষ, বারান্দা, ওয়ার্ড ও টয়লেটের মেঝেতে টাইলস বসানো। পুরো হাসপাতাল ঝকঝকে-তকতকে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দিনে ৩ থেকে ৪ বার তাঁরা হাসপাতাল ঝাড়ু দেন, টয়লেট পরিষ্কার করেন।

টোক ইউনিয়নের কেন্দুয়াব গ্রামের একজন পেটে ব্যথা নিয়ে গত ৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসকের উপস্থিতিতে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান গত বছর ডায়রিয়ার কারণে ভর্তি হয়েছিলাম। এবার অসুস্থ হওয়ার পর এসে দেখি হাসপাতাল পাল্টে গেছে। হাসপাতাল নিয়মিত ঝাড়ু দেওয়া হচ্ছে। বাথরুম পরিষ্কার। অনেক স্বস্তিতে আছি।’

অন্য ভবনের নিচ তলায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আব্দুস সালাম সরকারের কার্যালয়। দরজার ওপরে খেলা: ‘আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত’। হাসপাতালের এই পরিবর্তন সম্পর্কে আব্দুস সালাম বলেন, সরকারি ও এমপি’র সহায়তায় হাসপাতালের নতুন কিছু অবকাঠামো সংস্কার ও নির্মাণ করেছি। হাসপাতাল পরিষ্কার রাখা ও চিকিৎসকদের সহায়তা করার জন্য জনবল দিয়েছে। এই সহায়তায় পাল্টে গেছে হাসপাতালের বাহ্যিক চিত্র ও সেবার মান। হাসপাতালের ভেতরের রাস্তা ও চত্বর সংস্কার কওে বাগান করেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য গ্রামের দরিদ্র মানুষ যেন মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা পায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম সরকার স্থানীয় জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসাসেবায় পরিবর্তন আনেন। এলাকার মানুষ নিজ উদ্যোগেই হাসপাতালের মান ধরে রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

হাসপাতালের বহিবিভাগে ও অন্তবিভাগে রোগী আগের চেয়ে বেড়েছে। আশপাশের তিনটি উপজেলার রোগীও এখানে নিয়মিত আসছে। রোগীর আস্থা বেড়েছে বলেই তারা এখানে বেশি আসছে বলে মনে করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভর্তি ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগী ছিল যথাক্রমে ৫ হাজার ৮৬৩ ও ৯ হাজার ৭৯৭ জন। ২০১৮ সালের যথাক্রমে ৬ হাজার ৭২৯ ও ৭ হাজার ৪৬৪ জন। গত বছরের চেয়ে এবার হাসপাতালের আয়ও বেড়েছে। একাধিক চিকিৎসক বলেছেন, সহায়ক  স্বাস্থ্যকর্মী থাকায় রোগী দেখায় শৃঙ্খলা এসেছে। এখন রোগীকে বেশি সময় দেওয়া যাচ্ছে।

সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীর মা ও শিশু স্বাস্থ্য কার্ডেও মাধ্যমে উপজেলা সকল গর্ভবতি মায়েদের বিনা মূল্যে সেবা প্রদান করে। হাসপাতালে টাঙানো একটি ব্যানার নজর কাড়ে। তাতে লেখা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন শিশু স্বাস্থ্য কর্ণার।  ‘মাতৃমৃত্যুমুক্ত উপজেলা’। গর্ভধারণ ও প্রসবজনিত কারণে এই উপজেলায় একজন মায়েরও মৃত্যু হবে না এই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই কাজে সার্বিক সহায়তা ও সমর্থন আছে সিমিন হোসেন রিমি এমপি’র।

উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সব গর্ভবতীর নিবন্ধন করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত দুই-তিন মাসে ১১ টি ইউনিয়নের মা সমাবেশ হয়েছে। সেখানে গর্ভবতী মায়ের করণীয় সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর্মীরা বক্তব্য ও পরামর্শ দিয়েছেন। এসব সমাবেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। জরুরি প্রয়োজনে তাঁরা এগিয়ে আসেন। মায়ের যেন মৃত্যু না হয়।

 

এবিএন/নুরুল আমিন সিকদার/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ