পটিয়ায় হাঠৎ নিউমোনিয়ার প্রকোপ, সেবা নিচ্ছে ফ্লোরে
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৩৪
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়েছে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনীত বিভিন্ন রোগব্যাধী। পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫১ বেডের হলেও সিট না পেয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ফ্লোরে। এতে প্রচুর শীত পড়ায় ঠান্ডা জনীত রোগ বেড়ে যাচ্ছে বলে রোগীদের অভিযোগ। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে এ হাসপাতালটিতে ১০০শয্যার হাসপাতালে রূপান্তর করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পটিয়া হচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাবেক মহকুমা জেলা শহর। এর বর্তমানে রয়েছে প্রায় আট লক্ষ লোকের জনসংখ্যার বসতি। ৮ লক্ষ লোকের জন্য সরকারী পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫১ বেডের একটি হাসপাতাল। আবার এ হাসপাতালে শুধু পটিয়া নয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, চন্দনাইশ, বোয়ালখালী সহ অন্যান্য উপজেলার মানুষগুলোও চিকিৎসাসেবা গ্রহন করে।
গত ৫ দিনে হটাৎ এ হাসপাতালে বহি: বিভাগ ও আন্ত: বিভাগে এত বেশী রোগী ভীড় করছে যে চিকিৎসকরা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
গতকাল সরেজমিন পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, জরুরী বিভাগ ফ্লোর ও মেজে শুধু রোগী আর রোগী। চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে শিশুদের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা যে রোগীগুলোর ব্যাধী সহনীয় তাদের ঔষধ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। আর যাদের অবস্থা আশংকা জনক তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত গত ৫ দিনে প্রায় ৫শতাধিক রোগীকে বহি: বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হলেও বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি থাকছে।
চিকিৎসার জন্য ভর্তি আছে এমন রোগীদের মধ্যে ফয়জুল ইসলাম জানান, আমি হুলাইন থেকে দুই দিন পূর্বে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ সারাতে হাসপাতালে এসেছি। এখনো চিকিৎসা চলছে। ডাক্তাররা বলেছেন ৪/৫ দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যাবে।
বোয়ালখালীর শাকপুরা থেকে আসা শিশু রাফির পিতা ওসমান গনী বলেন, আমার ছেলে ৪ দিন আগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। তাকে পটিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডাক্তাররা বলেছেন দুই এক দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যাবে।
চন্দনাইশের কাঞ্চননগর থেকে আসা শিশু অপুর পিতা মোঃ ইদ্রিস বলেন, আমার ছেলে ডায়রিয়া আক্রান্ত। পটিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা ভাল তাই এখানে ভর্তি করেছি। ডাক্তাররা সাধ্য মত সুস্থতার চেষ্টা করছে। তবে আবহাওয়া জনিত ভাইরাসের কারনে এ রোগ হয়েছে বলে জানিয়েছে। পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ওয়াহিদ হাসান জানান। ভাইরাস জনিত রোগ ছড়িয়ে পড়ায় এ অবস্হা । তবে ধৈয্য ধরে চিকিৎসা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পটিয়া স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা আবু ইউসুফ মোহাম্মদ ওয়াহিদ উল্লাহ বলেন, ভাইরাস জনিত এ রোগ। ৪/৫ দিন চিকিৎসা করালে ছড়িয়ে পড়া রোগ সেরে যাবে। তিনি বলেন গত তিন দিনে পটিয়ায় আশংকাজনক হারে এ জাতিয় রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে রোগী রাখার স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তারপর ও আমরা কম আক্রান্তদের ঔষধ ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। আর বেশী আক্রান্তদের ভর্তি দিচ্ছি। তিনি এ রোগে কাউকে না ঘাবড়ানোর আহবান জানান এবং আক্রান্তদের হাসপাতালে যোগাযোগ করে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করে বলেন, হাসপাতালটি দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় পার্শ্ববর্তী উপজেলা গুলোর রোগীরাও এখানে সেবা নিতে আসছে। ফলে আমাদের ৫১ বেডে সংকুলান হচ্ছে না।
এছাড়াও পটিয়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানীর এম আর দের দৌরাত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে সেবা নিতে আশা রোগীরা বিভিন্নভাবে হয়ারনীর শিকার হচ্ছে। আর ডাক্তারাও এম আর দের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের পছন্দনীয় ঔষুধ কোম্পানীর ঔষুধ লিখছে কিনা রোগীদের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন দেখছে। কোন সংবাদ কর্মী গেলে আড়ালে লুকিয়ে থাকে এম আর ও দালালরা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছে সংশ্লীষ্ট ভোক্তাভোগীরা।
পটিয়া যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আহমদ নূর জানান, পটিয়া হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ব ও হাসপাতালের পূর্ব পার্শ্বে সরকারী একটি কোয়ার্টারে অসামাজিক কার্যকালাপ চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিক পালন করছে।
এবিএন/সেলিম চৌধুরী/জসিম/রাজ্জাক
এই বিভাগের আরো সংবাদ