আজকের শিরোনাম :

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের ৬জনের মনোনয়ন সংগ্রহ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:৫০

চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-১ সংসদীয় আসন। আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আঘাত হানে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন।

পরবর্তীতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ছেলুন জোয়ার্দ্দার এ আসন থেকে নির্বাচিত হলে বিএনপি’র অবস্থা আরও নাজুক হয়ে যায়। এখন যে কোনোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চান তারা। কিন্তু, গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে জেলা বিএনপি গুড়িয়ে পড়ায় বিপাকে রয়েছেন এ দলের নেতাকর্মীরাও।

প্রায় একই দশা দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগে। দীর্ঘ তিন যুগ ধরে ছেলুন জোয়ার্দ্দার আওয়ামী লীগকে এক সুতোয় গেঁথে রাখলেও বর্তমান সেই পরিস্থিতিতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই দলেও কোন্দল বাসা বেঁধেছে অনেকটা বড় পরিসরে। আর গত ৫ বছরে সেই কোন্দলের ডালপালা ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও।

সেই হিসাবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর দাবিদার এবার কেউ থাকছেন না। এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এরই মধ্যে একাধিক ব্যক্তি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনী প্রচারণাও চালানো শুরু করেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার যতবারই চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তার বিপরীতে কেউই মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি। ফলে, একক প্রার্থী হিসেবে দল থেকে তিনি সহজেই মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে, এবার তার ব্যত্যয় ঘটেছে। এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের জন্য ৬ জন ফরম কিনেছেন।

এরা হলেন,  বর্তমান সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ ও জেলা আ.লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, জেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশাদুল হক বিশ্বাস, বাংলাদেশ মহিলা আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি’র সহ-সভাপতি, জেলা আ.লীগের অন্যতম সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের বর্তমান এমপি শিরিন নাঈম পুনম, জেলা আ.লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদী,  বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি’র দপ্তর সম্পাদক নাজমুল ইসলাম পানু এছাড়াও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা সামসুল আবেদীন খোকন।

এ ব্যাপারে ছেলুন জোয়ার্দ্দার বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ এখন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। আওয়ামী লীগই এ আসন থেকে আবার জয়লাভ করবে।

মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। দলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনেকেই মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করবেন। তবে, মনোনয়নের ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসাবে মেনে নেব। চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী লীগকে যেভাবে সংগঠিত করেছি, তাতে আমি পুনরায় মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে বিশ্বাসী।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সামসুল আবেদীন খোকন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি বেশ কয়েকবার দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছেন। তিনি বলেন, দলের জন্য সারাজীবন কাজ করে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি দলীয় প্রার্থী হতে চাই।


চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস মনোনয় প্রত্যাশী। তিনি স¤প্রতি নেতাকর্মীদেরকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে প্রচার প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।

একই দাবি করেছেন আলমডাঙ্গার সন্তান কেন্দ্রীয় কৃৃষক লীগের দফতর সম্পাদক অধ্যাপক নাজমুল হক পানু।

এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক উপমহাদেশের প্রখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদীও নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বেশ কিছুদিন ধরে। স্বাধীনতার আগে থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে স¤পৃক্ত হন। ১৯৬৯ সালে চুয়াডাঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ও নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদীর বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বলে তিনি দাবি করেন। এ কারণে তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাস করেন। তবে তিনি বলেন, দল অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আমি তার পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করব।

এদিকে, এক সময়ের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চুয়াডাঙ্গায় খন্ড-বিখন্ড হয়ে পড়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুর ভাই ওয়াহেদুজ্জামান বুলা ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরিফুজ্জামান শরীফ তিনটি পৃথক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

অবশ্য গ্রুপিংয়েরে ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দোষারোপ করছেন। তিনি বলছেন, তারা যেকোনো কিছুর বিনিময়েই একেক দিন একেক জনকে মনোনয়নের আশ্বাস দেন। এ কারণে চুয়াডাঙ্গা বিএনপিতে গ্রুপিং দেখা দিয়েছে। এ বিভাজনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতারাই দায়ী।

বিএনপিতে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা তেমন চোখে না পড়লেও মনোয়নয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি শামসুজ্জামান দুদু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরিফুজ্জামান শরীফ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান।

এদিকে, নেতা না হয়েও চুয়াডাঙ্গায় প্রচার প্রচারণায় শীর্ষে রয়েছেন ড. এমএ সবুর। তিনি ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিবের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরদিন ২৩ সেপ্টম্বর থেকেই বিএনপির সাধারণ সদস্য পদ গ্রহণ করেন এবং সেই থেকেই তিনি বিএনপির সঙ্গে রয়েছেন বলে জানান।

এছাড়া আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মীর মহিউদ্দিন ও বিএনপি নেতা শহিদুল কাউনাইন টিলু নির্বাচনে প্রার্থী হতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী বলে জানান। এছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমান্ডার শহিদুর রহমান (পিএসসি নেভী) চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রুহুল আমিন জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আমাদের প্রার্থী থাকবেন। তবে, দলের সিদ্ধান্ত ছাড়া এখনই নাম পরিচয় বলতে পারছি না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. জিনারুল ইসলাম জানান, এ আসনে আসমানখালী থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জহুরুল ইসলামকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এবিএন/সনজিত কর্মকার/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ