আজকের শিরোনাম :

ফরিদপুর-৪ এ ভোটের মাঠে ৩ প্রার্থী : লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:২২

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফরিদপুর-৪ আসনে ৩জন প্রার্থী মাঠে আছেন। করছেন গণসংযোগ ও সমাবেশ। যোগদিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। ফরিদপুর-৪ সদরপুর-ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত।

আসনটিতে বর্তমানে মাঠে রয়েছেন ৩ প্রার্থী। প্রার্থীরা হলেন বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ব্যবসায়ী খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধু মাত্র ফরিদপুর-৪ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ নির্বাচনে স্বতন্ত্রী প্রার্থী মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফর উল্লাহকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত  হন। মাত্র ২৭দিনের প্রচারনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এরাকার উন্নয়নে যথেষ্ট ভুমিকা রেখেছেন। এলাকার রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভাট, বিদ্যুৎ, মসজিদ-মন্দিরসহ এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছেন। প্রায় পাঁচ বছরে ১৫শ হাজার কোটি টাকার কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্যের ঘনিষ্টজন ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ নিজাম উদ্দিন আহমেদ।

ফরিদপুর- ৪ আসনের তিনটি উপজেলায়ই আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসাবে পরিচিত। বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী পরিবারের সদস্য হওয়ার কারনে তিন উপজেলার সিংহভাগ নেতা-কর্মী তার সাথে আছেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিগত দিনের উন্নয়ন তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করছেন। এলাকায় বেশী সময় দিচ্ছেন।

সাধারণ ভোটাররা মনেকরছেন আওয়ামী লীগের ভোট দুইভাগে বিভক্ত হওয়ায় সুবিধা জনক স্থানে আছেন বিএনপি’র প্রার্থী। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও মাঠে ছিরেন বিএনপি’র প্রার্থী খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরে সোরে মাঠ চোসে বেডাচ্ছেন বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার ইকরাল হোসেন সেলিম। আসনটিতে আওয়ামী লীগের হয়ে মাঠে আছেন, কাজী জাফরউল্লাহ। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে এ আসনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। বিএনপি-স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মধ্যে। আসনে

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিগত দিনের নির্বাচনগুলোতে এ আসনে বেশির ভাগই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে দলীয় কোন্দলের কারণে সুবিধা জনক অবস্থানে আছে বিএনপির। গত নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া এবং আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল কাজী পরিবার হঠাও আন্দোলনের কারনে বিপুল ভোটে নিক্সন চৌধুরী। গত নির্বাচনে নিক্সন চৌধুরী পান ৯৮ হাজার ৫৯৪ ভোট। আর কাজী জাফরউল্লাহ পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ২৮৪ ভোট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে ভাঙ্গা ও সদরপুরে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। আর চরভদ্রাসন উপজেলায় বিএনপির ভোট বেশি। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা জানান, গত নির্বাচনে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং কাজী সাহেবের কাছের কতিপয় ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে মানুষ আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তাছাড়া দলের অনেক নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সাথে আছেন।

মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ফরিদপুর-৪ আসনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন। এলাকার সর্বস্তরের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিবিড়। এমপি হয়েও গাড়ির বহর না নিয়ে তিনি মোটরসাইকেল কিংবা হেঁটে বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিংহভাগ এবং বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী তার পক্ষে কাজ করছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে তিনি বেশ ভালো অবস্থানেই রয়েছেন বলে মনে করেন ভোটাররা।

ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপি ভোট বেড়েছে। বিগত দিনে এ আসনটি শুধু ভাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত থাকার কারণে আওয়ামী লীগের আধিপত্য ছিল একক। কিন্তু ২০০৮ সালে ভাঙ্গার সঙ্গে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা যোগ হওয়ায় বিএনপির প্রচুর ভোট বেড়েছে। বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম।

 কয়েক বছর ধরে তিনি এ আসনের তিনটি উপজেলা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নদীভাঙ্গন, বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, ঈদ ও পূজায় অসহায় মানুষকে সাহায্য বিতরণসহ নানা কর্মকা-ে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
ইকবাল হোসেন সেলিম জানান,  দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। বিএনপি নির্বাচন মুখি দল। নির্বাচনের জন্য  প্রস্তত আছে বিএনপি। কিন্তু খালেদা জিয়া ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হবে না।

নানা বাধার মুখেও গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি ৩০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে চমক দেখান। বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মনে করেন, এক উপজেলাতেই যে ভোট পেয়েছেন আরও দুইটা উপজেলাতেও তাদের  প্রচুর ভোট রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের দুই ভাগ হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে এ আসনে বিএনপির জয়ী হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তাদের মতে, গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় স্বতন্ত্র এমপি জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এবার সেই সুযোগ তিনি নাও পেতে পারেন।

 এ আসনে মূলত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ও স্বতন্ত্র  প্রার্থীর মধ্যেই।
বিএনপির পক্ষ থেকে আরও নাম শোনা যাচ্ছে, সাবেক এমপি চৌধুরী আকমাল ইবনে ইউসুফ, জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, জাসাস কেন্দ্রীয় নেত্রী শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা। তবে এদের মধ্যে কাউকে এলাকায়  প্রচার- প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাইরে এ আসনে আর কোনো দলের প্রার্থীর  প্রচার- প্রচারণা চোখে পড়েনি। এ আসনে জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সালের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি এখনো  প্রচারণায় নামেননি।

বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বলেন, ২৫টি ইউনিয়ন ৩টি উপজেলা ও ১টি পৌরসভা নিয়ে ফরিদপুর-৪আসন গঠিত। এই আসনের বেশীর ভাগ জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আমার সাথে আছে। এই আসনের জনগন গত নির্বাচনে আমাকে না দেখে ভোট দিয়েছে। বিগত দিনে এই সংসদীয় আসনের জনগন অবহেলীত ছিল। কাজী পরিবারের কাছে জিম্মি ছিল। আর সে কারনেই আমাকে না দেখে জনগণ ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছিল। আমি নির্বাচিত হয়ে প্রায় ১৫হাজার কোটিটাকার উন্নয়ন করেছি। আমি আগামীতে নির্বাচিত হতে পারলে সদরপুর-চরভদ্রাসন ও ভাঙ্গা উপজেলাকে বাংলাদেশের মধ্যে এক নাম্বার মডেল উপজেলায় পরিনত করব।  

 

এবিএন/কে এম রুবেল/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ