আজকের শিরোনাম :

ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

সিলেট আধুনিক কারাগারের উদ্বোধন কাল

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৫১

অবশেষে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সাত বছর পর উদ্বোধন হচ্ছে নবনির্মিত সিলেট আধুনিক কেন্দ্রীয় কারাগার।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (০১ নভেম্বর) দুই হাজার বন্দি ধারণক্ষমতা ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত কারাগারটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্টানে জেলা প্রশাসক, সিলেটের প্রশাসন ও বিশিষ্টজনেরা উপস্থিতিত থাকবেন।

উদ্বোধনের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল ‘এবি নিউজ’কে জানান, ইতমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। চলছে আলোকসজ্জার কাজ।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কারাগারের উদ্বোধন হলেও এটি চালুর ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমুখী-বাদাঘাট সড়ক। সড়কটির বেহাল দশার কারণেই এতদিন নতুন কারাগারের উদ্বোধন আটকে ছিল। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রমতে, সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু হলেও নভেম্বরে বন্দি স্থানান্তরের কোনো সম্ভাবনা নেই। ডিসেম্বরের আগে সড়কের সংস্কার শেষ হবে না বলেও জানিয়েছেন প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।

কবে নাগাদ বন্দি স্থানান্তর করা হবে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল বলেন, ডিসেম্বর নাগাদ কিছু বন্দিকে স্থানান্তর করা হবে। তবে নতুন কারাগারে আপাতত সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের স্থানান্তর করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন নতুন কারাগার নির্মিত হলেও ২০০ বছরের পুরাতন কারাগারটিও ব্যবহার করা হবে।

২০১০ সালে একনেকে পাস হয় সিলেটের নতুন কারাগার নির্মাণ ও স্থানান্তরের প্রকল্প। এরপর ২০১১ সালের ১১ই আগস্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সিলেট শহরতলীর বাদাঘাটে কারাগারের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ধোপাদীঘিরপারস্থ পুরাতন কারাগারকে উন্মুক্ত উদ্যান গড়ে তুলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অভিযোগ রয়েছে বন্দি স্থানান্তরের পর পুরনো কারাগারের জায়গা দখলে অনেকেই চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি এ জমি ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহারের আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

প্রকল্পস্থলে সংরক্ষিত তথ্য ও কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ৩০ একর জায়গার উপর নির্মিত কারা কম্পাউন্ডজুড়ে ছড়িয়ে থাকবে ৬৪টি ভবন। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্মিতব্য নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে জায়গা হবে ২ হাজার বন্দির। বন্দিদের রাখা হবে ৭টি ভবনে। এ ভবনগুলোর মধ্যে পুরুষ বন্দিদের জন্য ৪টি এবং নারী বন্দিদের জন্য রয়েছে ৩টি ভবন। পুরুষ বন্দিদের ৪টি ভবনই ৬ তলাবিশিষ্ট আর নারী বন্দিদের জন্য নির্ধারিত ভবনের মধ্যে একটি ৪ তলা এবং দুটি দ্বিতল ভবন রয়েছে।

এছাড়াও রয়েছে ৫টি হাসপাতাল, এর মধ্যে ৪টি শুধুমাত্র বন্দিদের জন্য, অন্যটি কারাগার সংশ্লিষ্টদের। বন্দিদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের মধ্যে পুরুষ ও নারীদের জন্য ১টি করে ৫ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল, একটি করে দোতলা যক্ষ্মা ও মানসিক হাসপাতাল। রান্নার কাজের জন্য রয়েছে একতলা ৫টি ভবন। খাবার মজুত রাখার জন্য রয়েছে ১ তলা ৪টি ভবন, দোতলা একটি রেস্ট হাউসও আছে। ৪ তলাবিশিষ্ট একটি ডে কেয়ার সেন্টার রয়েছে, মসজিদ, স্কুল, আছে লাইব্রেরিও। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩০ একর জায়গার মধ্যে মূল কারাগারের ভেতরে রয়েছে ১৪ একর ও বাইরে রয়েছে ১৬ একর জায়গা। কারাগারের বাইরের জায়গায় থাকছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, ক্যান্টিন, বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার রুম, অ্যাডমিন অফিস, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও স্কুল।

জানা যায়, কারাগারের বর্তমান ৪৫৫ জনবলের মধ্যে ৩৯৯ জন রয়েছেন। বাকি পদগুলো শূন্য। এই জনবল দ্বারা ৩ শিফটে দায়িত্ব পালন করেন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন কারাগার চালু হওয়ার পর দুই কারাগারে এই জনবল দিয়ে দায়িত্ব পালন করাতে হবে। আর নতুনটি চালু হওয়ার পর লোকবল আরো বাড়ানোর চাহিদা দেওয়া হবে।

সিলেটে কারাগারের ইতিহাস ১২৯ বছরের পুরনো। ১৭৮৯ সালে নগরীর ধোপাদীঘির পারে ২৪.৬৭ একর ভূমির উপর ১ লাখ রুপি ব্যয়ে গড়ে উঠে কারাগার। বন্দি আধিক্য ও গুরুত্ব বিবেচনায় ১৯৯৭ সালে সিলেট কারাগার উন্নীত হয় কেন্দ্রীয় কারাগারে। সোয়া দুই শ’ বছর পর সেই কারাগারই সরে যাচ্ছে সিলেট নগর থেকে শহরতলিতে। পুরনো ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি কয়েদি থাকার কারণে ২০১০ সালে একনেকে ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ ও স্থানান্তর প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছিল। যার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালের জুন মাসে। এরপর তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও চলতিমাস পর্যন্ত ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিটা শেষ হতে এখনো মাসখানেক লেগে যেতে পারে।

পুরনো কারাগারের জমিতে উদ্যান নির্মাণ প্রসঙ্গে, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা সিলেট নগরীতে কোনো উন্মুক্ত স্থান নেই। নেই কোনো উদ্যান। তাই অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুরনো কারাগারের স্থলে দ্রুত উন্মুক্ত উদ্যান নির্মাণের জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।


এবিএন/মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ