আজকের শিরোনাম :

আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবার মান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৪৩

আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপূর্ণতা ও দূরাবস্থার কারনে স্বাস্থ্য সেবার মান ভেঙ্গে পড়েছে।  বাধ্য হয়ে রোগিরা হাসপাতালে না গিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক ও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে।

১১ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত আশাশুনি উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্রত্যন্ত ও যাতয়াত ব্যবস্থা অনুন্নত। অনেক ইউনিয়নে প্রধান প্রধান সড়ক নির্মিত হলেও অভ্যন্তরিন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট অনুন্নত। এলাকার মানুষ সাধারণ অসুখ বিসুখে হাসপাতাল মুখো হতে চায়না। রোগ একটু বড় হয়ে দেখা দিলে পল্লী চিকিৎসকদের কাছেই যাতয়াত করে থাকে। অনেকে হাসপাতালে আসতে চাইলেও ডাক্তার না থাকা, ঔষুধ না থাকা এবং সর্বোপরি অন্যান্য ব্যবস্থা না থাকায় একবার গেলে দ্বিতীয়বার না যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে।  এজন্য উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ক্লিনিকের নামে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবার নামে অপচিকিৎসা করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এলাকার গরীব ও দীনমজুর মানুষ রোগ চিকিৎসার জন্য যাবে কোথায়! তাই অনেকে আশাশুনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান বাধ্য হয়ে। কিন্তু না এই হাসপাতালে কেবল নেই নেই বার্তা বাতাসে ঘুরে ফিরছে। কিন্তু এখানে ২১টি পদের বিপরীতে ইউএইচএ সহ মাত্র ৪ জন এমবিবিএস ডাক্তার কর্মরত আছেন।

এছাড়া একজন আয়ুর্বেদ ও একজন ডেন্টাল সার্জন আছেন। নার্সের ১৬টি পদের বিপরীতে আছেন ১২ জন, যার মধ্যে ৩ জন ডেপুটেশানে অন্যত্র কর্মরত আছেন। ৩ জন চিডিকৎসকের মধ্যে একেক জনকে বাধ্য হয়ে একটানা ২দিন করে ডিউটিতে রাখতে হয়। আর প্রতি সপ্তাহে একদিন করে হাসপাতালে কোন চিকিৎসক থাকেন না। ফলে সপ্তাহে একদিন করে চিকিৎসক ছাড়াই হাসপাতাল চলে।

বর্তমান সময়ে পাড়াগায়েও হারিকেন-ল্যাম্পের ব্যবহার এখন আর চোখে না পড়লেও হাসপাতালে গেলে সেটি খুঁজে পাওয়া যাবে।  রাতে বিদ্যুৎ লোডশেডিং হলে হাসপাতাল কক্ষে একটি করে হারিকেন জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।  আইপিএস বিকল হয়ে গেছে। জেনারেটর থাকলেও ব্যবহার করা হয় না।  এক্সরে মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।  প্যাথলজিষ্ট নেই।  এ্যানাস্থেসিয়া ও গায়নি চিকিৎসক নেই।  

ডাঃ ইসকেন্দার আলম নামে একজন (এ্যানাস্থাসিয়া) সহকারী সার্জন হাসপাতালে পোষ্টিং থাকলেও তিনি কি কারনে ও কার বদৌলতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটেশনে বহাল তবিয়তে রয়েছেন জানা নেই।  আশাশুনিতে যেখানে কোন কিছুই পূর্ণ নেই, বরং অনেক কিছুর কিছুই নেই, সেখানে ডেপুটেশানে অন্যত্র অবস্থানের কারবার হতাশাজনক।  সপ্তাহে ২ দিন এখানে তাকে আসার কথা থাকলেও তিনি আসেন না।  বরং আশাশুনি থেকে বেতন ঠিকই তিনি উঠিয়ে নিচ্ছেন।  জনবল না থাকায় সরকারের ডিএসএফ প্রোগ্রাম চালান হচ্ছেনা।

এ ছাড়া ঔষুধ স্বল্পতা, চিকিৎসকের অভাবে ঠিকমত চিকিৎসা সেবা না পাওয়াসহ রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।  তারপরেও এলাকার অসহায় মানুষ চিকিৎসা পেতে হাসপাতালে আসছেন।  বেডে প্রতিদিন গড়ে ৬০/৭০ জন করে রোগী থাকেন।  আউটডোরে (জরুরী ও বহিঃ বিভাগ)  প্রতিমাসে গড়ে ৪৫০০ রোগীর আগমন ঘটে।  

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অরুন কুমার ব্যানার্জী জানান, চিকিৎসক সংকট বরাবর হাসপাতালে রয়েছে।  এ্যানাস্থাসিয়া না থাকায় চাহিদা থাকলেও ডেলিভারী করান সম্ভব হচ্ছেনা।  এছাড়া অনেক সমস্যা আছে।  অসুবিধা ও সমস্যার কথা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল আশাশুনিতে আসলে বিষয়টি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তার কাছে জোরালো ভাবে উত্থাপন করা হলে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাফফারা তাসনীনকে জরুরী ভিত্তিকে পরিদর্শন করে রিপোর্ট করতে আদেশ প্রদান করেন।     

এবিএন/জি এম মুজিবুর রহমান/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ