জবরদখলী খাসিয়ারা আতংকে, ভূমি উদ্বারে তৎপর বন বিভাগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ২০:১১

গত কয়েকমাসের অভিযানে খাসিয়াদের নিকট থেকে জবরদখলহওয়া বনজসম্পদ উদ্বারের ফলে খাসিয়ারা চরম আতংকে আছেন।  সম্প্রতি এক খাসিয়া মন্ত্রী আটক এবং ২ পুঞ্জির ৩০/৩৫ জন খাসিয়ার বিরুদ্ধে কোর্টে ও থানায় মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে শত শত একর বনজ সম্পদ দখলকারী খাসিয়ারা চরম বেদকায়দায় রয়েছেন বলে বন বিভাগ সুত্র জানিয়েছে।
         
বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার কুলাউড়া রেঞ্জের অধীনে বন বিভাগের জায়গা রয়েছে ১৩ হাজার ৩ শত ৪৭ একর।  এর মধ্যে বিগত ৪ যুগ থেকে খাসিয়ারা জবর দখল করেছে ৮ হাজার ২ শত একর বন ভূমি ও বাঁশ মহাল। মাঝে মধ্যে বন বিভাগ অভিযান পরিচালনা করলেও পুনরায় খাসিয়ারা দখল করে পান চাষ করতে থাকে। এক জরিফে দেখা গেছে, বন বিভাগের জায়গা অবৈধভাবে জবরদখল করে খাসিয়ার কুলাউড়া উপজেলায় ৩৪ পান পুঞ্জি স্থাপন করেছে। একেক পান পুঞ্জিতে ৩০/৩৫ পরিবার আবার কোন কোন পুঞ্জিতে ৫০/৬০টি পরিবার গৃহ নির্মাণ করে  আলিশান জীবনযাপন করছেন।

তাদেরকে কোন সরকারী খাজনা,ট্যাক্স কিছুই দিতে হচ্ছেনা।  যেনো তাদের নিয়মেই চলে পুঞ্জির সকলকিছু।  একেক খাসিয়া শত শত একর জায়গায় পান চাষ করে পান বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা মাসিক উপার্জন করছে।  তবে আশ্চর্যের ব্যাপার দেশের কোন ব্যাংকে তারা টাকা সঞ্চয় করে না। পান বিক্রি বাবৎ উপার্জিত লক্ষ লক্ষ টাকা পাচার করে ভারতে। ভারতে একেক খাসিয়ার জমি,বাড়ী ঘর ,ব্যবসা বানিজ্য রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে।

খাসিয়ারা জানান, তাদের মূল আয় পান চাষ ও বিক্রি করা। পান বিক্রি করেই তারা চলছেন। আর বনবিভাগের জমি দখল করে পান চাষ করছেন এধরনের প্রশ্নের উত্তরে খাসিয়াদের বক্তব্য, তাদের বাপ দাদারা ঝুমে পান চাষ করেছেন। জমি কার সেটা বড় কথা নয়। আমরা গাছ গাছালি রোপন করে পান চাষ করছি।  
          
বৃক্ষপ্রেমিকদের বক্তব্য হলো, খাসিয়ারা বনের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। বনের পশু পাখি নিধন তরে তারা খেয়ে ফেলে। একসময় কুলাউড়ার বনাঞ্চলে হরিণ,বাঘসহ সকল প্রকার বণ্যপ্রানীদের আনাগোনা ছিল। কিন্তু পাহাড় উজাড় করে পান চাষ ও বসতি স্থাপন এবং বন্য প্রানী শিকার করে খেয়ে ফেলার দরুন বর্তমানে জীববৈচিত্র ধবংস হয়ে গেছে এই খাসিয়াদের কারনে।  
             
এব্যাপারে কুলাউড়া রেঞ্জের বরমচাল বিট অফিসার বন গবেষক আহমদ আলী জানান,বনজ সম্পদ রক্ষা করার জন্য অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষকরে বরমচাল বিটে বনজ সম্পদ দখলের চেষ্টাকারী ২০ জন খাসিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে এবং ৫ একর বনভূমি খাসিয়াদের কবল থেকে উদ্বার করা হয়েছে।

কুলাউড়া রেঞ্জের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন জানান, অতীতে যখনই খাসিয়ারা বনবিভাগের জায়গা দখল করতে গেছে তখনই খাসিয়াদের বিরুদ্ধে থানা ও কোর্টে মামলা দেওয়া হয়েছে।  এসব মামলাগুলি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।  তবে খাসিয়ারাও কোর্টে ৩০/৩৫ টি স্বত্ব মামলা করেছে বনবিভাগকে বিবাদী করে।  প্রায়ই এ মামলাগুলির জবাব দিতে আদালতে উপস্থিত হতে হয় আমাদেরকে।  তবে নতুনকরে খাসিয়ারা বন বিভাগের  কোন জায়গা দখল করতে চাইলে শক্ত হাতে মোকাবেলা করা হচ্ছে।  তবে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে পূর্বের দখলীয় জায়গা উদ্বারে বন বিভাগের পরিকল্পনা রয়েছে।
              
কুলাউড়া রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার মানিক রঞ্জন দে জানান, গত ২ মাসে আমছড়ি পুঞ্জিতে ৫ একর,নলডরী বিটের লবনছড়া একোয়ার্ড ফরেষ্টে খাসিয়ারা পান চাষের সময় বন বিভাগ ৪০ একর বনভূমি জবরদখলমুক্ত করা হয়েছে।  ২ পুঞ্জিতে ৩০/৩৫ জন খাসিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে এবং স্লাই খাসিয়া নামক এক খাসিয়া হেডম্যানকে পুলিশ আটক করেছে।  তিনি জানান, দখলকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এবিএন/ময়নুল হক পবন/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ