আজকের শিরোনাম :

গলাচিপায় প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে সোহরাব আলী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ২২:২৭

‘প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় সম্পদ’ এই চিন্তাধারাকে মনে ধারণ করে গলাচিপার কিছু প্রতিবন্ধী শিশু। ওদের কেউ শারিরীক, কেউ মানসিক ও কেউ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।  ওদের কারও বয়স ৬/৭ আবার কারও ১০/১২ বছর।  ওরা সবাই অভাবী পরিবারে অবহেলা-অনাদরে বড় হয়ে উঠছে। ওদের স্বাভাবিক জীবনে বড় হয়ে ওঠার নিয়তি ছিল। কিন্তু ওদের এখন দিনকাল পাল্টে যেতে শুরু করেছে। ওরা এখন অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

অনেক দূরের স্বপ্নের জগতটা ক্রমেই ওদের হাতের কাছে চলে আসছে। ওরা নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। ওদের অনেকেই এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেছে। ওদের এই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা, শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো পাওয়া এবং প্রতিভা বিকাশের নেপথ্যে রয়েছেন মো. সোহরাব আলী হাওলাদার নামের এক কারিগর কিংবা শিক্ষাগুরু। তিনি শত অভাব-অনটন, হাজারো প্রতিক‚লতা ডিঙ্গিয়ে গলাচিপার প্রতিবন্ধী শিক্ষাঙ্গনের নিভে যাওয়া দ্বীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন।

তিনিই দায়িত্ব নিয়েছেন গলাচিপা পৌরসভার অবহেলা-অনাদরে বেড়ে ওঠা প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রভা ছড়িয়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার। ত্যাগ, ধৈর্য্য, সততা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে গলাচিপার বঞ্চিত প্রতিবন্ধী শিশুদের দ্বারা আলোকিত শিক্ষাঙ্গনের দ্বার উম্মোচনের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘শরৎ বিহারী প্রতিবন্ধী স্কুল’।

 এ মহান প্রতিভাবান ব্যক্তিটি হলেন গলাচিপা সরকারি ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি অধ্যাপক, পটুয়াখালী জেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) - এর সহ-সভাপতি ও পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া এলাকার মৃত কাঞ্চন আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি ১৯৭৯ সালে গলাচিপা সরকারি ডিগ্রি কলেজে বাংলা বিভাগে সুনামের সাথে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি ২০১৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

 অবসর গ্রহণের পূর্বে তিনি ওই কলেজে কিছুকাল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কলেজে অধ্যাপনা শুরুর পর থেকেই তিনি গলাচিপা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ পাড়ায় জায়গা কিনে ঘর তুলে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। তিনি কলেজে অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করে মানবতার কল্যাণে নিজেকে আত্মনিয়োগ করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এই প্রতিবন্ধী স্কুলটি। বয়স তাঁর পঁয়ষট্টির কোঠায়। প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠায় তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী সমিতির সাবেক সম্পাদক, সভাপতি, নির্বাহী পরিচালক ও বর্তমান এসএসডিপি, আমতলী - এর নির্বাহী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান।

প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি ও আর্থিক সহযোগিতা করেছেন গলাচিপা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্বনামধন্য শিক্ষক স্বর্গীয় শরৎ বিহারী দাসের পুত্র চিত্তরঞ্জন দাস। চন্দন কুমার দাস, সাথী রানী দাস, মাইনুল ইসলাম, সুমা দাস, জাকির হোসেন, বীথি রানী দাস প্রমুখ স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক সহযোদ্ধাদের ভূমিকা, ত্যাগ, শ্রম ও অর্থায়নে আন্তরিকতা এই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে।

আধা-পাকা টিনশেটের দু’ কক্ষ বিশিষ্ট ও বাথরুমসহ এ প্রতিবন্ধী স্কুলটি গলাচিপা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ পাড়ার বনানী সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত। ওই প্রতিবন্ধী স্কুলে ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সপ্তাহের মধ্যে সোম, বুধ ও  শুক্রবার স্কুলে ক্লাশ চলে। আর রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের পরিদর্শন সহ নানা শিক্ষা ও প্রশিক্ষন দিয়ে থাকেন।  শনিবার স্কুল বন্ধ থাকে।  স্কুলে ক্লাশ শুরু হয় সকাল ৯ টায় ও শেষ হয় দুপুর ১২ টায়।

ওই স্কুলে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধীদের শারিরীক, মানসিক, বুদ্ধি বিকাশের বহুমাত্রিক শিক্ষা দেয়া হয়। জীবন ও জীবিকার পথের সন্ধান দেয়ার উদ্দেশ্যে এ শিক্ষা ও প্রশিক্ষন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়মিত শিক্ষাদান এলাকার প্রায় সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। এ বিষয়ে ওই প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সোহরাব আলী হাওলাদার এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতিবন্ধী শিশুরা দেশের মোট শিক্ষার্থীর একটা উলে­খযোগ্য অংশ; তাদেরকে চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গীতে সামাজিক বোঝা হিসেবে পিছনে ফেলে রেখে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব নয়।

মনন ও মেধায় প্রতিবন্ধী শিশুদের অনেকেই বিশ্বমানের সুযোগ পেলে তারাও সৃজনশীল কর্মকান্ডের ও উৎপাদনশীলতার অবদান রাখতে পারে - এ বিশ্বাসকে ধারন করেই আমাদের পথ চলা। সামান্য সুযোগ পেলে পথের পাশের প্রতিবন্ধী শিশুরাও যে প্রতিভাবান হয়ে উঠতে পারে তা এ প্রতিবন্ধী স্কুলটি না দেখলে বোঝা যাবে না।

এবিএন/জুয়েল/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ