আজকের শিরোনাম :

শিকদার বাড়ীতে দেশ-বিদেশের ভক্ত ও দর্শণার্থীদের উপচে পড়া ভীড়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:০১

দেশী বিদেশী ভক্ত ওধর্মানুরাগীদের পদচারণায় সরগম হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের হাকিমপুর শিকদার বাড়ীর পুজা মন্ডপ।সোমবার মহাষষ্ঠি পূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হলো দূর্গোৎসব। দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে এসছে আগে ভাগেই আর এমনটা  চলবে পাঁচ দিন ধরে।  শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সর্বস্থরের মানুষের মধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ। বাগেরহাট জেলায় এবছর ৬২২ টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দুর্গাপুজা শুরুর একদিন আগেই ভিড় এড়াতে দেশি বিদেশী ভক্ত দর্শনার্থী দেশের সবচেয়ে বেশি প্রতিমার পূজামন্ডপে ভিড় করছেন। দুর্গোৎসবকে নির্বিঘœ করতে সর্বত্রই নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজা প্রথম শুরু হয় জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের মোমতলা সার্বজনীন দূর্গা মন্ডপে। তাদের দেখা দেখি এখন জেলার অনেক মন্ডপে এই প্রতিযোগিতা চলছে।

 সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এখনো বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া আনন্দ আশ্রম সার্বজনীন পূজা মন্ডপ, চুলকাঠি সার্বজনীন দূর্গা মন্ডপ ও ফকিরহাট উপজেলা সদরের সার্বজনীন দূর্গা মন্ডপ উল্লেখযোগ্য। তবে গত আট বছর ধরে ব্যক্তি উদ্যোগে বেশি প্রতিমা নিয়ে দূর্গা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে  আসছে  সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে।

বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে হলেও এই ধরনের আয়োজনে দুই বাংলায় বাগেরহাটের এই গ্রামটির শিকদারবাড়ির এখন সবার কাছে সুপরিচিত। দুর্গাপূজা আসলে এই গ্রামটির কথা এখন আর কাউকে মনে করিয়ে দিতে হয়না। গত আট বছর আগে এই গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদারের ব্যক্তিগত উদ্যোগে দূর্গাপূজা উপলক্ষে তার মন্ডপে প্রথমবার ১৫১টি প্রতিমা তৈরি করে  সকলের নজরে আসেন। এরপর থেকে প্রতি বছরই এই মন্ডপে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এবছর পবিত্র ধর্মগ্রস্থ রামায়ণ,পুরাণ ও মহাভারতের নানা দেবদেবীর কাহিনী অবলম্বনে এই পূজা মন্ডপে মোট ৭০১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিমা দেখতে আসা ভক্ত দর্শনার্থীরা এই প্রতিনিধি কে বলেন,  সনাতন ধর্মের রামায়ণ ও মহাভারতে ধর্মের যে কল্পকাহিনী রয়েছে তা প্রতিমার মাধ্যমে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। ধর্মের অনেক অজানা কাহিনী জানতে পারছি। আমরা সত্যি অভিভূত। ভিড় এড়াতে তাই পূজা শুরুর আগেই শিকদারবাড়ির আয়োজন দেখতে এসেছি।

ভারতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূজা দেখতে আসা দর্শনার্থী পূর্ণচন্দ্র মাইতি এবং উজ্জ্বল মন্ডল এই প্রতিনিধি বলেন. আগে জানতাম কোলকাতায় দূর্গাপুজায় বড় আয়োজন হয়ে থাকে কিন্তু বাংলাদেশের আয়োজন দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি। আমাদের একটা ভুল ধারনা ছিল যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা দূর্গাপুজা সেভাবে করতে পারেনা। কিন্তু আমাদের সেই ধারনা আজ পাল্টে গেল এই মন্ডপ দেখে। এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে এতো বড় করে আয়োজন করে থাকে তা জানতাম না। সত্যিই আমরা মুগ্ধ হয়েছি।

আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন শিকদার এই প্রতিনিধিকে বলেন, আমার জন্ম এই অজ পাড়াগাঁতে এখানেই আমার বেড়ে ওঠা ছেলেবেলা থেকে আমি ধর্মপরায়ণ ছিলাম। আমার ইচ্ছাছিল আমি যদি কখনো বেশি টাকা রোজগার করতে পারি তাহলে আমার জন্মভূমিতে বছরে একবার বড় ধর্মীয় উৎসব করব। ঈশ^র আমাকে বৈমূখ করেননি। তাই আমি ২০১০ সালে প্রথমে ১৫১টি দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করে শুরু করি। ঈশ^রের ইচ্ছায় আমি এধরনের আয়োজন করতে পারছি। বাগেরহাট সেই থেকে দূর্গাপূজা আসলে এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা তা দর্শন করতে আসেন।

তিনি আরও বলেন, এখানে পূজা দেখতে আসা দর্শনার্থীদের পরিদর্শনে বইয়ে দেয়া মতামতের ভিত্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে এই মন্ডপে প্রতিমার সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ানো হচ্ছে। এবছর ৭০১টি দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিকাল মিলিয়ে সনাতন ধর্মে  কোটি কোটি দেবতা রয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই দেবতাদের সম্পর্কে সবাই জানেননা। সনাতন ধর্মের ব্যাপকতা কত তা সবার কাছে তুলে ধরতে আমার এই আয়োজন।

বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি অম্বরিশ রায় এই প্রতিনিধিকে বলেন, এক যুগ আগে থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাগেরহাটে শারদীয় দূর্গাপূজাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে বেশি প্রতিমা তৈরির প্রতিযোগিতায় নামেন। শুরু হয় বেতাগার মোমতলা সার্বজনীন মন্ডপ দিয়ে। এরপর থেমে থাকেনি চুলকাঠি, কাড়াপাড়াসহ বিভিন্ন মন্ডপও। তারই ধারাবাহিকতা গত আট বছর ধরে অজ পাড়াগাঁর ব্যবসায়ি লিটন শিকদার তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে শারদীয় দূর্গাপুজা মহাধূমধামে করে চলেছেন। এটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় পুজা বলে ধারনা করা হয়। দূর্গাপূজা আসলে বাগেরহাট হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন। সব ধর্মের মানুষ শারদীয় দূর্গোৎসবে আনন্দে মেতে উঠুক সেই প্রত্যাশা ওই নেতার।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় এই প্রতিবেদককে বলেন, বাগেরহাট জেলায় এবছর ৬২২টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা নির্বিঘœ করতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পাশাপাশি সিসি ক্যামেরায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দেয়া হবে। দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা হচ্ছে হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে। এখানে দেড় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন থাকছে বলে জানালেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।


এবিএন/এস এস সাগর/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ