আজকের শিরোনাম :

সিলেটে পরকীয়ার দৃশ্য দেখে ফেলায় প্রাণ যায় গৃহবধূ চম্পার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:০২

পরকীয়া সম্পর্কের দৃশ্য দেখে ফেলায় আগুনে পুড়ে মরতে হল গৃহবধূ চম্পা বেগমকে (৪৫)। চম্পা সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ফারুক মিয়ার স্ত্রী। গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

গত ১০ (অক্টোবর) সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাকন দে’র আদালতে লোমহর্ষক এ ঘটনার বর্ণনা ঘাতক দেন আরশ আলী (৪৫)।

জানা যায়, স্বামী প্রবাসে থাকার সুবাধে দেবরের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রেহেনা বেগম নামে এক গৃহবধূ। সেই দৃশ্য দেখে ফেলেন পাশের বাড়ির আত্মীয় আরশ আলী। পরে আরশ আলীর সঙ্গেও পরকীয়ায় লিপ্ত হন রেহেনা। তাদের অনৈতিক সম্পর্কের দৃশ্য দেখে ফেলেন রেহেনার জাল চম্পা বেগম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রেহেনা ও আরশ আলী মিলে চম্পার ঘরে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই ঘরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান চম্পা।

আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আরশ আলী উল্লেখ করেন, তার খালাতো ভাই ওমান প্রবাসী। তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (২৫) থাকেন দেশে। একদিন তিনি দেখতে পান রেহেনার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে তার দেবর কয়েছের। আরশ আলী রেহেনা ও কয়েছকে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে ফেলেন। এ বিষয়ে রেহেনা আরশ আলীকে চুপ থাকতে বলেন এবং আরশ আলীর সঙ্গেও পরকীয়ায় লিপ্ত হন।

 তাদের মধ্যে ১৫/১৬ বার শারীরিক সম্পর্ক হয়। একদিন এ সম্পর্ক রেহেনার ভাবি চম্পা বেগম ও তার ছেলে ইমরান দেখে ফেলে। স্বামী দেশে আসলে এ বিষয়ে রেহেনার সঙ্গে ঝগড়া হয়। প্রায় সময় রেহেনার সঙ্গে ঝগড়া হলে চম্পা বেগম হুমকি দিতেন পরকীয়া প্রেমের ব্যাপারে। চম্পাকে ভয় দেখাতে রেহেনা ও আরশ আলী মিলে কামাল বাজারের হুশিয়ার আলীর দোকান থেকে দুই লিটার পেট্রল ক্রয় করে আনেন। গত ২৮ আগস্ট রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে রেহেনার ঘরের দরজায় গিয়ে টোকা দেন আরশ আলী। রেহেনা ঘুম থেকে উঠলে দুইজন মিলে চম্পা বেগমের ঘরের মূল দরজায় পেট্রল ঢালেন এবং আরশ আলী দূর থেকে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন লাগান।

আগুন দেখে রেহেনা দৌড়ে ঘরে ঢুকেন। আর আরশ আলী তার বাড়িতে চলে যান। কিছুক্ষণ পর আরশ আলী লোকজনের আর্তচিৎকার শুনে নিজেও আগুন নেভাতে যান। গিয়ে দেখেন চম্পা বেগম ও তার ছেলে-মেয়েসহ ছয় জন আগুনে পুড়ে গেছে। এলাকার লোকজন তাদের ঘর থেকে বের করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। পরবর্তীতে আরশ আলী আত্মগোপনে চলে যান। গত ৯ অক্টোবর আরশ আলীর দুলাভাই তাকে ফোন করে আসতে বললে তিনি সিলেটের হুমায়ুন রশিদ চত্বরে আসেন। সেখান থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ শে আগস্ট রাত ১১টায় সিলেটে বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামে চম্পা বেগম ও তার স্বামী ফারুক মিয়া তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে নিজ বসতঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক আড়াইটায় চম্পা বেগম তার ছোট ছেলেকে প্রসাব করাতে ঘুম থেকে সজাগ হলে দেখতে পান ঘরের সামনের স্টিলের দরজার নিচের ভাঙা অংশ দিয়ে বাইরে থেকে ঘরের ভেতরে কিছু নিক্ষেপ করার সঙ্গে সঙ্গে শব্দ হয়ে ঘরের ভেতরে দরজার পাশে রাখা সোফায় আগুন লেগে যায়।

এ সময় ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে আগুনে দগ্ধ হন চম্পা বেগম (৪৫), তার স্বামী ফারুক মিয়া (৫০), মেয়ে রিফা বেগম (১৮), ছেলে এমাদ উদ্দিন (১৪), ইমরান আহমদ (১২) ও নিজাম উদ্দিন (১০)। তাদের আর্তচিৎকারে পাশের ঘরে থাকা রাজু মিয়া ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা ভেঙে আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে চম্পা বেগম মৃত্যুবরণ করেন।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দোহা বলেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

 

এবিএন/মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ