আজকের শিরোনাম :

রাজমিস্ত্রী থেকে আধ্যাত্মিক ‘কাঁচি কবিরাজ’, চিকিৎসা চলছে ‘ফু’ দিয়ে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৩৯ | আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:৪২

কাঁচি কবিরাজের ঝাঁড় ফুক দেওয়া তেল ও পানিতেই সেরে যাবে যে কোন রোগ, পূরণ হবে মনোবাসনা, সমাধান মিলবে হাজার মুশকিলের।  লোক মুখে এমন খবর পেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ছুটে আসছে মানসিক রোগী, প্রতিবন্ধী, বাত ব্যাথা, সাপে কাঁটা, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাসহ হাজার-হাজার মানুষ। ঘটনাটি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের বর্তা গ্রামের রহিম মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রী উজ্জল মিয়া ওরফে কাঁচি কবিরাজের বাড়িতে।

তিনি একসাথে ৫০০ থেকে ১হাজার নারী পুরুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে তেল ও পানির বোতল আকাশের দিকে তাঁক করিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়ে লোহার তৈরি কাঁচি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঝাঁড় ফুঁক দেন।

জানা যায়, প্রায় দুই মাস আগে উজ্জল মিয়ার মা হেনা আক্তারকে বাড়ির পাশে লাকড়ি কুঁড়াতে গেলে সাপে কাঁটে।  পরে বাড়িতে এসে তার ছেলে উজ্জলের কাছে সাপে কাটার কথা বললে সাপের বিষ অলৌকিক ক্ষমতার মাধ্যমে উজ্জল তার নিজের শরীরে নিয়ে নেয়।  তার পর বিষয়টা জানাজানি হলে প্রথমে সাপে কাটা রুগীর চিকিৎসা দেওয়া শুরু করে উজ্জল।

পরে বাত ও ব্যাথার জন্য পানি ও সরিষার তেল পড়া দিয়ে স্থানীয় ফারুক মিয়ার স্ত্রী জাহেরা খাতুন ও ওই এলাকার এনামুলের বাতের ব্যাথা ভালো করে।  তারপর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাঁচি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঝাঁড় ফুক দেওয়া তেল ও পানি পড়া নিতে শত শত উৎসুক মানুষের ঢল নামে। এ তেল ও পানি পড়ার বিনিময়ে কোন প্রকার টাকা বা উপহার নেননা বর্তমানে ‘কাঁচি কবিরাজ’ হিসেব পরিচিত উজ্জল।  প্রতিদিন তেল ও পানিতে ঝাঁড় ফুঁক দিয়ে পড়ে নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ আসে এখানে।   


    
প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে ও কাঁচি কবিরাজের খাদেমদের কাছ থেকে চোখে পরার মত কোন রুগী সুস্থ্য হয়েছে বা কারও মনোবাসনা পূরণ হয়েছে এমন তথ্য মিলেনি। যারা কোন প্রকার উপকারিতা না পায় তাদেরকে বলা হয় একদিনে এটা হবেনা নিয়ম করে অন্তত ৩ দিন আসতে হবে।  

নেত্রকোনা থেকে আসা সুফিয়া বেগম (৭০) কোমরে বাত ব্যাথার জন্য এখানে আসেন। এটা তাঁর চিকিৎসার ২য় দিন। দিন-তারিখ-সময়-মুহুর্তসই নিয়মমাফিক মোট ৩দিন আসতে হবে এখানে।

 বৃদ্ধা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলেন, “বাবারে যে নিয়ম দিছে কবিরাজ ওইডা আমি মাইনা  (মেনে) চলবার পারতামও না আমার কম্মর  (কোমর) বেদনাও (ব্যাথা) বালা অইতোনা”।   

কিশোরগঞ্জ থেকে প্রতিবন্ধী ছেলে রাছেল (১৫) নিয়ে আসা বাদল ফকির বলেন, “আমার পাশের গ্রামের এক বুবা মেয়ে নাকি এখানে এসে ভালো হয়েছে তাই আমার ছেলেকে নিয়ে আসলাম দেখি আল্লাহ্ কি করে।  ওই বিশ্বাস থেকেই এখানে আসা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার বাসট্যান্ড থেকে ওই এলাকার অটো-রিক্সা চালকসহ স্থানীয় কয়েক জনের একটি চক্র আগত নারী-পুরুষদের আগ্রহের সাথে জানাচ্ছেন রোগ মুক্তি ও মুশকিল আসানের গল্প।  দাবি করছেন নিজের চোখে দেখারও।

আসাদ নামের এক যুবক বলেন, তার পরিচিত বেশ কয়েকজন বাত-ব্যাথা, অন্ধ, বোবা, শ্বাসকষ্টের রোগীরা এখানে এসে সুস্থ হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম আকরাম হোসেন জানান, আমি বিষয়টি খোঁজ নিতে সশরীরে দেখতে গিয়েছি।  কেউ কেউ বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে ভালো হচ্ছে বলে দাবি করছে স্থানীয়রা।  তাছাড়া ওই কবিরাজ তেল ও পানি পড়ার বিনিময়ে কোন টাকা বা উপহার নিচ্ছেনা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ কামাল জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি, এ বিষয়টা খতিয়ে দেখার দরকার আছে।  আমরা অনুসন্ধান করছি। অতি শীগ্রই ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

এবিএন/জাহিদুল ইসলাম খান/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ