আজকের শিরোনাম :

ধুনটে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী মডেল টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস !

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ২১:১০

বগুড়ার ধুনটে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী মডেল টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এতে শিক্ষার্থী সহ সচেতন অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, গত ১লা অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ধুনট উপজেলার ২০২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ১৯টি কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী মডেল টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরী করতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ১২জন অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলীকে দায়িত্ব প্রদান করেন। ওই শিক্ষকমন্ডলীগণ প্রশ্নপত্র তৈরী করে ৪জন শিক্ষকমন্ডলীকে যাছাই বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছাপানোর অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, যে সকল শিক্ষকমন্ডলী প্রশ্নপত্র তৈরী করেছেন তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন অসাধু শিক্ষক তাদের কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পরীক্ষার আগের দিনই প্রশ্নপত্রের অনুলিপি ফাঁস করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কিছু তথ্য সাংবাদিকদের কাছে পৌছেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত রবিবার (৭ অক্টোবর) ৫ম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী মডেল টেস্ট ২০১৮ইং তে ‘প্রাথমিক বিজ্ঞান’ বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে পরীক্ষার শুরুর এক দিন আগেই শনিবার (৬ অক্টোবর) বিকালে এক শিক্ষক তার প্রাইভেট পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রশ্নপত্রের হুবহু অনুলিপি প্রদান করেন।

শিক্ষক তার বিজ্ঞান বিষয়ের সাজেশনে শূণ্যস্থান পূরণ প্রশ্নে লিখেছেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে ‘বরফ’ গলছে, ‘মশার’ কামড়ের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়, পদার্থ হলো ‘অসংখ্য’ অনুর সমষ্টি। এছাড়া বড় প্রশ্নে শিক্ষকের সাজেশনে দেখা যায়, পরিবেশের দূষনগুলো কী কী? মানুষ পরিবেশ ধ্বংস করছে কেন? এভাবেই ১৪টি শূণ্যস্থান, ১৫টি ছোট প্রশ্ন, বামপাশের বাক্যাংশের সাথে ডানপাশের বাক্যাংশের মিলকরন ও ১০টি বড় প্রশ্নের মধ্যে প্রায় সকল প্রশ্নই ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া শনিবার গণিত পরীক্ষার দুই দিন আগেই বৃহস্পতিবার শিক্ষকের প্রশ্নপত্রে দেখা যায়, ৪নং এর অথবা: ১টি বাঁশের ১/১৫ অংশ লাল ১/৫ অংশ সবুজ ১১/২৫ অংশ নীল রং করা হয়েছে। (ক) কত অংশ লাল রং করা হয়েছে? (খ) নীল রং করা অংশের বিপরীত ভগ্নাংশ কত? (গ) বাঁশটি কত অংশ রং করা হয়েছে। এইভাবে ৯৫ভাগ প্রশ্নই শিক্ষক দিয়েছেন এবং এসব প্রশ্নই পরীক্ষায় এসেছে।


তাছাড়া মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের প্রশ্নপত্রের অনুলিপি সোমবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পাওয়া যায়।  তার কিছু নমুনার মধ্যে বড় প্রশ্নে দেখা গেছে,

১. আখিরাত কি? আখিরাতের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে ৫টি বাক্য লিখ।
২. কোরআন মজিদ কার কালাম? আমাদের কোরআন মজিদ সহীহ ও শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করা আবশ্যক কেন? ৫টি বাক্যে লিখি।
৩. শান্তি সংঘ কে প্রতিষ্ঠা করেন, শান্তি সংঘের ৫টি উদ্দ্যেশ্য লিখ।
৪. সততা কি?, মহানবী (স:) এর সততা ও আদর্শে উজ্জিবিত হয়ে তুমি কি করবে।
৫. হযরত নূহু (আ:) কতদিন আল্লাহর দ্বিনের দাওয়াত দেন, তার সময় আল্লাহর গজবের ৫টি কারন লিখ।
৬. জাকাত কি? আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ি জাকাত দিতে হয়। জাকাতের কয়টি মাসারিফ রয়েছে?
৪টি মাসারিফের নাম লিখ।

এসব প্রশ্ন আগের দিন সাংবাদিকরা পেলেও পরদিন হুবহু পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র জানান, বিশেষ কিছু স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়লেই সকল প্রশ্নই কমন পড়ে।  স্যার পরীক্ষার আগের দিনই প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দেন। পরদিন পরীক্ষায় প্রায় সব প্রশ্নই কমন পড়ে। শিক্ষকের প্রশ্নপত্র পেয়ে অনেকে ইন্টারনেট ফেসবুকের মাধ্যমে অন্যদেরকেও ছড়িয়ে দিয়েছে।

এবিষয়ে রবিউল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, কিছু অসাধু শিক্ষকদের জন্যই কোমলমতি মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ছে এবং জাতি মেধা শূণ্য হচ্ছে। তাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, উপজেলার ১২জন অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী প্রশ্নপত্র তৈরী করেছেন। তবে যদি কোন অসাধু শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁস করে থাকেন তাহলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবিএন/ইমরান হোসেন ইমন/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ