আজকের শিরোনাম :

ভুরুঙ্গামারীতে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:১৬

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ঘর নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ প্রকল্পের ঘর তৈরিতে প্রকল্পের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের নীতিমালায় পিআইসির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) কাজটি করার কথা থাকলেও পিআইসি‘র সভাপতি তার একক ক্ষমতা বলে তার পছন্দের অফিস স্টাফ দিয়ে কাজ করছেন।

পিআইসি সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই কাজের ঠিকাদারী হিসেবে আছেন বলে জানা গেছে। সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সদস্যরা হলেন পিআইও (সদস্য সচিব), উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা(ভুমি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগন।

জানা যায়, এ প্রকল্পের অধীনে উপজেলায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪২৯টি ঘরের জন্য ৪ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে,  ১৭৫ বর্গফুটের ঘর নির্মাণে নি¤œমানের কাঠ দিয়ে তড়িঘরি করে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। এতে সুবিধাভোগীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। প্রকল্পের টাকা লুটপাটের জন্য ঘর নির্মানে প্লান ডিজাইনে প্রাক্কলন মোতাবেক কাজ করা হ্য়নি।

পিলার/খুঁটিতে ৪টি রডের পরিবর্তে ৩টি রড আড়াই সুতি ও রিং এ ২সুতি রডের পরিবর্তে মোটা তার দিয়ে ঘরের পিলারের উচ্চতা ১২ ফুটের স্থলে ১১ ফুট এবং বারান্দার পিলার ১০ ফুটের পরিবর্তে ৯ফুট ও নিম্নমানের খোয়া দিয়ে তৈরি করে এছাড়াও বাজার থেকে নি¤œমানের খুঁটি সরবরাহ করছে। ল্যাট্রিন নির্মাণে ৮টি করে রিং স্লাব ব্যবহারের কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ৬টি করে রিং স্লাব। ৪টি করে জানালা দেয়ার নিয়ম থাকলেও দেয়া হচ্ছে ২/৩টি।

প্রতিটি ঘর ১ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মানের কথা থাকলেও তা ৪০-৫০ হাজার টাকায় সম্পন্ন করে বাকী টাকা পকেটে পুরিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ঘর নির্মাণের এসব উপকরণ উপজেলা চত্ত্বর থেকে বিতরণ করা হলেও নিতে এসে উপকারভোগীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। উপকারভোগীরা তাদের নিজ খরচে নিয়ে যাচ্ছে ঘর তৈরির এসব সামগ্রী। ঘরগুলিতে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ২-৩ বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এলাকাবাসীর প্রতিকারের দাবি জানান।

উপজেলার উপকারভোগী পাথরডুবি ইউপির মইদাম গ্রামের মলিদা বেগম, চর-ভুরুঙ্গামারী ইউপির কল্পনা খাতুন, পাইকেরছড়া ইউপির আছিয়া খাতুন, তিলাই ইউপির শামছুল ঘর নির্মানের উপকরন নিতে সেখানে দায়িত্বরত আবুল হোসেন ও মহব্বত মিস্ত্রীকে অতিরিক্ত ৩শ’ টাকা দিয়ে উপকরণ নিয়েছেন বলে জানান। উপকরণগুলো নিজ খরচে বাড়িতে নিয়ে আসতে হচ্ছে।

এ ঘটনায় উপকারভোগীরা ইউএনও‘র নিকট লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার পান নি বলে জানান। ঘর নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে উপজেলার শিলখুড়ী ইউপির পাগলাহাট বাজারের ফজলুল হক প্রকল্প পরিচালক, আশ্রয়ন প্রকল্প-২, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

প্রকল্পের সদস্য সচিব পিআইও খন্দকার মিজানুর রহমান জানান, প্লান ডিজাইন আমি পাই নাই, ইউএন স্যার নিজ দায়িত্বে কাজ করছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী এন্তাজুর রহমান বলেন, কাজ চলছে কিন্তু এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম ইয়াছিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা পারভীন বলেন, জানতে পেরেছি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে এবং নি¤œমানের উপকরন ব্যবহার করে ঘর তৈরি করা হচ্ছে।

শিলখুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ বলেন, প্রকল্পের আমি একজন সদস্য থাকার পরও আমাকে জানানো হয়নি। তবে বাজার থেকে নি¤œমানের খুটি/পিলার ক্রয় করে আমার ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়েছে কিন্তু উপকারভোগীরা তা নিতে চাচ্ছে না।

উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী জানান, ঘর নির্মাণ প্রকল্পের ব্যাপারে ইউএনও সাহেব আমাকে কিছুই জানায়নি।

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এইচ এম মাগফুরুল হাসান আব্বাসীর নিকট জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

এবিএস/খোকন/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ