আজকের শিরোনাম :

বালিয়াডাঙ্গীতে বন্যার্তের টাকা লাইব্রেরিতে দিলেন ইউএনও

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:৪২

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পানিবন্দী মানুষের নামে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা অর্থ এক বছরেও বিতরণ না করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এ অর্থ স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একদিনের বেতন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।তবে এ টাকা বন্যার্তদের না দিলেও আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও আ. মান্নান।

তিনি জানিয়েছেন বন্যার্তদেন নামে সংগ্রহ করা এ টাকা পাবলিক লাইব্রেরিকে দেয়া হয়েছে।বন্যার্তদের জন্য দান করা টাকা বিতরণ না করে লাইব্রেরিতে দেয়ার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ সরকারি কর্মচারিরা।

জানাগেছে, গত বছরের আগস্ট মাসে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চার ইউনিয়নে আকস্মিকভাবে বন্যা দেখা দেয়।আকস্মিক ওই বন্যায় উপজেলার ধনতলা, পাড়িয়া, আমজানখোর ও বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম বন্যা প্লাবিত হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরে।এতে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি স্থানীয় ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও সহযোগিতার হাত বাড়ায়। মানুষের অসহায়ত্ব দেখে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ থেকে রেজুলেশনের মাধ্যমে বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সিদ্ধান্তে সকল সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবীরাও একদিনের বেতন ৫ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা বন্যার্তদের জন্য দেন। বন্যার্তদের সহযোগিতার নামে এ টাকা সংগ্রহ করার একবছর পেরিয়ে গেলেও তাদের সহযোগিতা করা হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেক মানুষ এখনো ঝুপরিতেই বসবাস করছেন। একই ঘরে তাদের পরিবার পরিজন ও গরু-ছাগল নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কেউ কেউ একটি ঝুপরিতেই গরু-ছাগলের পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসবাস করছে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কাশুয়া খাদেমগঞ্জ খেরবস্তি গ্রামের বিশ্বাসের স্ত্রী ফাতেমা জানান, আমার চার ছেলেমেয়েসহ ছয় সদস্যের পরিবার। বড়মেয়ে স্থানীয় দাখিল মাদরাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। আমার দুটি ঘর ছিল। গত বছর বন্যায় একটি সম্পুর্ণ ও একটির অর্ধেকটা ভেসে যায়। এখন এই অর্ধেক ঘরে চার ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী ও গরু ছাগল নিয়ে খুব কষ্টে বসবাস করছি। তিনি বলেন, একবছর পার হলেও এখনও সরকারি বেসরকারি তেমন কোন সহযোগিতা পাইনি।

একই এলাকার আফিজা বেগম জানান, গত বছর ফিতরা ও খয়রাতির টাকা দিয়ে এই ঝুপড়িটা তুলেছি। বাবারে, বন্যার সময় সাহেবরা সাহায্য দিবে বলছিল কিন্তু এক বছর পার হলেও কোন সাহায্য পাইনি। ওই গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে আফিজুল হকও একই কথা বললেন। এরকম অসহায় অবস্থায় দিনাতি পাত করছেন ওইসব এলাকার অসংখ্য লোক।

বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বিশু মোহাম্মদ ক্ষুদ্ধ প্রতিকৃয়া ব্যক্ত করে বলেন, ইউএনও আব্দুল মান্নান সরকারি, বেসরকারি চাকরি জীবীদের একদিনের বেতন বন্যার্তদেন জন্য সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও ইউএনও কেন ওই টাকা বন্যার্তদেন মাঝে বিতরণ করেননি এটা আমার বোধগম্য নয়।

বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, ওই টাকা বন্যার্তদের বিতরণ না করে ইউএনও অবশেষে অফিসার্স ক্লাবে প্রদান করেছেন বলে শুনেছি।

একদিনের বেতন প্রদানকারী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মচারি জানান, আমরা আমাদের কষ্টার্জিত বেতনের টাকা বন্যার্তদেন জন্য দিয়েছি। ইউএনও সাহেবের বন ভোজনের জন্য নয়। যদি বন্যার্তদেন দেওয়া না হয় তাহলে আমাদের বেতন ফেরত দেওয়া হোক। অফিসার্স ক্লাবতো অফিসারদের ক্লাব, এটাতো কর্মচারীগণের ক্লাব নয় তাহলে কর্মচারী গণের টাকা অফিসার্স ক্লাবে যাবে কেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মচারী জানান, আমাদের কাছ থেকে বন্যার্তদের নামে নেয়া একদিনের বেতনের টাকা যদি বন্যার্তদেন না দেওয়া হয় তাহলে আমাদের বেতনের টাকা ফেরৎ দেয়া হোক।

ইউএনও আব্দুল মান্নান এর কাছে এ বিষয়ে ফোনে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি এই মুহুর্তে বালিয়াডাঙ্গীতে নেই। ওই টাকা পাবলিক লাইব্রেরিতে দেয়া হয়েছে।

এবিএন/মো: রমজান আলী/জসিম/নির্ঝর

এই বিভাগের আরো সংবাদ