আজকের শিরোনাম :

ঘোড়াঘাটে আমন ধানে পোকার আক্রমণ দিশেহারা কৃষকরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৫৯

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে মাঠে মাঠে আমন ধানের ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার কৃষকরা। গত কয়েকদিনের মধ্যে ধানক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছে মাঠের পর মাঠ। অনেকের জমিতে পোকার আক্রমণে ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কারনে চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এদিকে কৃষকদের আপদকালীন এ সময়ে কৃষি অফিসের কোন কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পাশে না দাড়ালেও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সকাল-বিকাল খোঁজ নিচ্ছেন ও নানা পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

যদিও উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, কারেন্ট পোকার আক্রমণ হলেও তা নিয়ন্ত্রনে আছে। ফলে ধানের ফলনে কোন সমস্যা হবে না। তারা ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের যে কোন কীটনাশক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।দেখতে ছোট ছোট বাদামি পোকার মতো এই ফড়িং ধান গাছের রস চুষে নিচ্ছে। ফলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ধান গাছ মরে হলুদ রং ধারণ করছে। এ পোকা প্রথমে ধান গাছের গোড়ায় আক্রমণ করায় কীটনাশক ছিটিয়েও দ্রুত দমন করা সম্ভব হচ্ছে। এই পোকা কোন এলাকায় আক্রমণ করলে দু’এক দিনের মধ্যে তা দ্রুত মাঠের পর মাঠ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারনে এ পোকাকে কারেন্ট পোকা বলা হয়।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে উপজেলায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে উপশী ও হাইব্রীড জাতের আমন ধান চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগ জমিতে চাষ করা হয়েছে স্বর্ণা বিভিন্ন জাত। এছাড়াও রয়েছে ব্রিÑ বিভিন্ন জাত ও রনজিত জাত। কৃষি বিভাগের হিসাবে চাষকৃত জমি থেকে  ৪৯ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। হিসাব অনুযায়ী প্রতি একরে ধান উৎপাদন হবার কথা ৪৫ মন।

অবশ্য কৃষকরা বলছেন, পোকার আক্রমন দমন করা না গেলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না।কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করে ধান চাষ করেছিলেন। সঠিক পরিচর্যা ও রোগ বালাই দমনে বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করে। বর্তমানে চাষ করা ধানের ফলন আসতে শুরু করেছে। কোন কোন জমিতে ধানের শীষ বের হয়েছে। এমনকি কিছু কিছু জমিতে ধান পাক ধরেছে। কিন্তু হঠাৎ কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার কৃষকরা।

সরেজমিনে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাঠের পর মাঠ শত শত হেক্টর জমিতে এই কারেন্ট পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, মাঠের পর মাঠ পোকার আক্রমণ হলেও সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অফিসের কোন কর্মকর্তা বা মাঠকর্মীদের দেখা মিলছে না। গত কয়েকদিনে কৃষি অফিসের কাউকে দেখা যায়নি। ফলে তাদের কাছ থেকে কোন পরামর্শ বা সহযোগিতা পায়নি কৃষকরা।

তবে, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রতিদিন সকাল বিকাল এসে খোঁজ নিচ্ছে। কি ওষুধ দিতে হবে, কি পরিমাণ দিতে হবে তা দেখিয়ে দিচ্ছে ওই কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকরা।তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তারা ইউনিয়ন ও মাঠ পর্যায়ে রোগবালাই প্রতিরোধ ও রোগ বালাই দমনে নানা কৌশল এবং ওষুধের ব্যবহার বিষয়ে কৃষকদের ধারণা দিয়ে  যাচ্ছেন।

উপজেলার কৃষকরা বলছে, পোকার আক্রমণের পর থেকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রতিদিন গ্রামের মোড়ে মোড়ে এসে কৃষকদের সাথে কথা বলে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন কৃষি কর্মকর্তা এলাকায় আসেনি। এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দিনে গরম রাতে শীত এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলে এই পোকার আক্রমণ বাড়ে। তবে আমরা শুরু থেকে গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক ও হাজার হাজার লিফলেট বিতরণ করে কৃষকদের সচেতন করা চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে কারেন্ট পোকার আক্রমণ অনেকটা কমে গেছে। কারেন্ট পোকার আক্রমণ বেশি হলেও তা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি এই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের।


এবিএন/মাহতাব উদ্দিন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ