আজকের শিরোনাম :

দেনা পরিশোধের আশায় ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বরগুনার জেলেরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ২০:১৫

মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নদী ও সাগরে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। দেনা পরিশোধের স্বপ্ন নিয়ে মাছ শিকারে সাগরে যাবেন বরগুনা উপকূলের জেলেরা।চলতি নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে বরগুনায় নদী ও সাগরের বিভিন্ন এলাকায় ৩২২টি অভিযান করেছে মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রশাসন। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৮ জেলে। জাল জব্দ করেছে প্রায় সাড়ে চার লাখ মিটার।

 

উপকূলের পাথরঘাটা উপজেলার মাছেরখাল এলাকায় সোমবার সকালে ঘুরে দেখা গেছে, বরগুনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের প্রায় ৩ হাজার ট্রলারের জেলেরা জাল-দড়ি গুছিয়ে ট্রলারে বরফ উঠাচ্ছে। সকালের শুরুতেই গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করা প্রত্যেকটি ট্রলারে এক থেকে দেড় লাখ টাকার নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী কিনে মধ্যরাতের অপেক্ষা করছেন তারা।

 

তালতলী এলাকার এফবি ফাহিম ট্রলারের মাঝি মোঃ রাজ্জাক বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বেকার সময়ে অর্ধাহার-অনাহারে পরিবার নিয়ে দিন কাটিয়েছেন ট্রলারের ১৮ জেলে ও তাদের পরিবার। তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে খুব কম পরিমানে মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। ৪ অক্টোবর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবার আগে ৬ বার সাগরে গিয়ে শুধু সাগরে মাছ শিকারের সময় খাবারের জন্য খরচ হয়েছে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রত্যেকবারই ঘাটে ফিরে মাছ বিক্রি করেছি সর্বোচ্চ ৬০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ধার-দেনা করে এখন পথে বসতে হয়েছে আমাদের। একজন জেলেকেও বেতন দিতে পারিনি। দেনা পরিশোধের আশায় ইলিশ শিকারের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। এবারও যদি সাগরে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হয় তাহলে ট্রলার বিক্রি করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

 

হাতিয়া এলাকার এফ বি সর্না ট্রলারের মাঝি রফিক বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ইলিশ বেশি ধরা পড়ত। কিন্তু এখন সাগরে ইলিশের পরিমান খুবই কম। সাগরে ৮-১০ দিন জাল ফেলেও একবারে ১ লাখ টাকার মাছ ধরতে পারেনি গত এক বছর ধরে। মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা শেষ, আশায় বুক বেধেঁছি বেশি মাছ পাওয়ার। গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) নোয়াখালী থেকে পাথরঘাটা এসেছি। তিন দিন ধরে জাল-দড়ি গুছিয়ে নিচ্ছি। দুপুরের মধ্যেই শেষ হবে জাল-দড়ির কাজ। অভাবের তাড়নায় দিশেহারা আমরা সব জেলেরা। ২০ কেজি চাল সহায়তা পেয়েছি এই ২২ দিনে। শুধু চাল খেয়েতো আর দিন চলেনা। সন্তানদের লেখা-পড়ার খরচ চালাতেও পারছিনা।

 

বরগুনার এফ বি লিমন ট্রলারের জেলেরা জানান, ধার-দেনায় সংসার চলছে তাদের। নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরের উপর নির্ভর করবে তাদের বেঁচে থাকা। যদি আশানুরুপ মাছ না পায় তবে, জেলা পেশার পরিবর্তন ছাড়া উপায় নেই। প্রকৃত জেলে হওয়া সত্বেও তারা কেউই পায়নি সহায়তা।

 

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধূরী জানান, শুধুমাত্র বরগুনা উপকূলের দেড় লাখ মানুষ জেলে পেশায় নিয়োজিত। অথচ সরকারের তালিকায় জেলে সংখ্যা ৩৭ হাজার ৭৪ জন। তাই এক লাখেরও বেশি জেলেরা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। বিগত বছরের নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের সহায়তা করতো ট্রলার মালিকরা। তবে, বছরের পর বছর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মাছের পরিমান কমে যাচ্ছে। মারাত্মক লোকসানের মুখে ট্রলার মালিকরাও। তাই জেলেদের এই অভাবের সময়ে তাদের সহায়তা করতে পারছে না তারা। জেলে তালিকায় প্রকৃত জেলেদের স্থান দেয়ার দাবীও জানান তিনি।

 

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জেলে তালিকা করার সময়ে অনেক জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে থাকে। তাই অনেক জেলেরা তালিকায় আসেনা। তবে, কয়েক বছর আগেও জেলে তালিকায় অন্য পেশার মানুষদের থাকার অভিযোগ ছিলো। সেসব নাম বাদ দিয়ে এখন প্রতিবছরই তালিকায় প্রকৃত জেলেদের নাম নেয়া হয়। তিনি আরও জানান, জেলেদের শুধুমাত্র ২০ কেজি চাল সহায়তায় অনেকটা কষ্ট হয় এটা ভেবেই।


এবিএন/ফসল পাটোয়ারী/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ