আজকের শিরোনাম :

সময় মেনে অফিস করেন না আখাউড়ার সরকারি কর্মকর্তারা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৩৯

আজ সোমবার সকাল ৯টা ১০ মিনিট উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস তালাবদ্ধ। একটু পরেই একজন লোক এসে অফিস খোলেন। তিনি নিজেকে অফিসের অডিটর পরিচয় দিয়ে বলেন একটু দেরি হয়ে গেছে। অফিসের আর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি তখনও আসেননি। ৯টা ২০ মিনিটে কৃষি কর্মকর্তার অফিসের দরজায় তালা দেখা যায়।

 অফিস পিয়ন মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, স্যার ট্রেনিংয়ে আছে। ৯টা ৩০ মিনিটে উপজেলা মৎস্য অফিস গিয়ে দেখা যায় একটি কক্ষে মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বসে আছেন।  উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জ্যোতি কনা দাস তখনও অফিসে আসেননি। মোবাইল ফোনে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জ্যোতি কণা দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নাস্তা খাচ্ছি। নাস্তা খেয়েই চলে আসব। তাছাড়া শরীরটা ভালা না।

এমন দৃশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার অধিকাংশ সরকারি অফিসের। এখানে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সরকার নির্ধারিত সময় মেনে অফিসে আসেন না। কেউ কেউ আবার অফিস ছুটির নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিস ত্যাগ করে চলে যান।

সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এসময় দরজায় লেখা ফিল্ড সুপারভাইভার মো: জুনাঈদ এর মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাস্তায় আছি, আসতেছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসটি উপজেলা পরিষদের তৃতীয় তলায়। সকাল ৯টা ২০টা মিনিটে গিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরজাহান বেগমকে অফিসে বসে থাকতে দেখা যায়। তবে উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার লুৎফুর রহমানের কক্ষের চেয়ার ফাঁকা।।

সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তাপস কুমার চক্রবর্তী অফিসে আসেননি। অফিসের এক কর্মচারী জানান তিনি কসবা উপজেলা গেছেন। আজকে (সোমবার) আসবেন না।  

এসবের মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে। উপজেলা সমবায় অফিসের অফিস সহায়ক হানিফ খাদেম সকাল ৯টার কিছু আগেই অফিস খোলে টেবিল- চেয়ার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, সকাল সকাল অফিসে চলে আসি।

সকাল পোনে দশটা পর্যন্ত সমবায় কর্মকর্তা দুবরাজ রবি দাস অফিসে আসেননি। তিনিও মোবাইল ফোনে জানান ফিল্ডে আছেন।

উপজেলা চত্বরের বাইরে একটি বিল্ডিংয়ে বিআরডিবি কর্মকর্তার অফিস। সকাল সোয়া ৯টায় গিয়ে তার অফিস তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। একজন কর্মচারী বলেন ‘স্যার কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে’।

সকাল ১০টায় গিয়ে দেখা উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার অফিস খোলা।  তবে তখনও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আবু ইউছুফ নুরুল্লাহ অফিসে আসেননি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাগের সুরে বলেন, সব সময় যে অফিসে থাকতে হবে এমন তো নয়। বাইরেও তো কাজ থাকতে পারে। পরে তাকে ৯টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অফিসে বসে থাকার সরকারি নির্দেশনার কথা স্মরন করিয়ে দিলে, তিনি একটু নরম হয়ে বলেন  জেলা অফিস হয়ে এসেছি তাই দেরি হয়ে গেছে।

সকাল পোনে দশটা পর্যন্ত উপজেলা প্রকৌশলীর অফিসে গিয়ে দেখা যায় উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ ও সার্ভেয়ার জহিরুল ইসলাম তখনও অফিসে আসেননি। এসময় অফিসের ইলেকট্রিশিয়ান আবুল হোসেন বলেন, স্যার এখনও আসে নাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবেন।

সার্ভেয়ার জহিরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, সাইড পরিদর্শনে আজমপুর আছি।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অফিস কক্ষে থাকা বাধ্যতামূলক।

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ অফিসে নির্ধারিত সময়ে কর্মকর্তারা আসেন না। ৯টায় অফিসে আসার বাধ্যবাধকতা থাকলেও  বেশির ভাগই সাড়ে ৯টা ১০টার মধ্যে আসেন  এ সুযোগ নিয়ে অধস্তন কর্মচারীরাও নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসছেন না।

এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার বলেন, উপজেলা পরিষদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকার নির্ধারিত সময় মেনে অফিস করার নির্দেশ দেওয়া আছে। কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাসিক সমন্বয় সভায় এ ব্যপারে আবারও তাগিদ দেওয়া হবে।


এবিএন/হাসান মাহমুদ পারভেজ/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ