আজকের শিরোনাম :

ব্যস্ততম লেবুখালী ফেরিঘাটে এখন শুনশান নিরবতা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৪৭

yesপদ্মার পাড় থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরি যুগের অবসান


পায়রা সেতু উদ্বোধনের মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ব্যস্ততম লেবুখালী ফেরিঘাটে এখন শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পায়রা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে প্রায় ১১২ কিলোমিটারে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ফেরি বিড়ম্বনা বন্ধ হয়েছে। একইসাথে বন্ধ হয়েছে লেবুখালী ফেরিঘাটে ফেরি চলাচল। মূলত রবিবার (২৪ অক্টোবর) সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই নিস্তব্ধ হয়ে যায় ফেরিঘাটসহ আশপাশের এলাকা। নেই চলাচলরত ফেরির ইঞ্জিনের শব্দ। আবার ঘাটে নোঙর করা ফেরিতে বাজেনি কোনো হুইসেল। ছিলো না ঘাট কেন্দ্রীক মানুষের কোলাহল।

সোমবার সকালে লেবুখালী ঘাটের শ্রমিক ও ফেরির স্টাফরা জানান, এ ঘাটের শেষ কর্মদিবস ছিলো রবিবার। এখানে তাদের অসংখ্য স্মৃতি চিরদিন মনে পরবে। লেবুখালী ঘাটের ফেরির চালক মাহাবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন এখানে কাজ করেছি, বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ ঘাটে। ঘাটের শেষ কর্মদিবসে সকলের কিছুটা খারাপ লাগলেও সেতুটি যে উদ্বোধণ হয়েছে এটাই ভালো লাগা। তিনি বলেন, আমাদের চাকরিটাই এমন, আজ এই ঘাটে, তো কাল অন্য ঘাটে। এখানে চলাচলরত চারটি ফেরিতে ৪০ জন স্টাফ কর্মরত রয়েছেন। অপরদিকে ফেরির সাথে সাথে ঘাটের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে পরেছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, সেতুর কারণে ঘাটের তেমন কারোরই কোনো সমস্যা হবেনা। ফেরির ঢালে বরিশাল প্রান্তে শেখ হাসিনা সেনানিবাসের পাশে বড় বাজারের মতো গড়ে উঠেছে। যেখানে ঘাটের ব্যবসায়ীরা তাদের অবস্থান খুঁজে নিতে শুরু করেছেন। আর এখানে যাত্রীবাহীসহ পণ্যবাহী পরিবহন বিরতী দিবে।

ঘাটের স্টাফরা জানিয়েছেন, লেবুখালি ঘাটের সচল ফেরিগুলো বেকুটিয়া ও মাছুয়া ফেরিঘাটে যাবে। প্রয়োজন অনুসারে গ্যাংওয়ে পল্টুনও অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। বরিশাল থেকে দুই ঘন্টায় কুয়াকাটা \ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বসবাসকারী ভ্রমণপিপাসু মানুষেরও পায়রা সেতুকে ঘিরে আগ্রহের শেষ নেই। সেতুটির উদ্বোধনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলা। পায়রা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যম পদ্মার পার থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা কিংবা সমুদ্রবন্দর পায়রা পর্যন্ত যেতে প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার পথে আর কোনো ফেরি রইলো না। বরিশাল থেকে এখন মাত্র দুই ঘন্টায় কুয়াকাটায় পৌঁছানো যাচ্ছে।

এছাড়া পদ্মা নদী পাড়ির সময়টুকু বাদ দিলে রাজধানী ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় পৌঁছতে মাত্র পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগছে। আগামী বছর পদ্মা সেতু চালু হলে এ সময় আরও কমে আসবে। তখন সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লাগবে। একসময় বরিশাল থেকে সড়কপথে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগতো নয় থেকে দশ ঘন্টা। কীর্তনখোলা আর পায়রাসহ বরিশাল-পটুয়াখালীর ছয়টি নদীর ফেরি পার হয়ে পৌঁছতে হতো সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। তখন সূর্যোদয়ের সময় বরিশাল থেকে রওয়ানা হয়েও কুয়াকাটায় গিয়ে সূর্যান্ত দেখা কঠিন হয়ে যেতো।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ছয়টি নদীর মধ্যে পাঁচটিতেই সেতু নির্মিত হয়েছে। বাকি থাকা সর্বশেষ পায়রা নদীর ওপর নির্মিত সেতু ২৪ অক্টোবর উদ্বোধনের মাধ্যমে আর কোন ফেরি রইলো না। অতিরিক্ত টোল কমানোর দাবি \ স্বপ্নের পায়রা সেতুর অতিরিক্ত টোল নির্ধারণ করায় আপত্তি জানিয়েছেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষসহ যানবাহনের মালিক ও শ্রমিকরা। পায়রা সেতু পারাপারে ফেরির তুলনায় ক্ষেত্র বিশেষে তিন থেকে সাতগুণ পর্যন্ত বেশি হারে নির্ধারিত টোল আদায় করা হচ্ছে। আর এতেই আপত্তি করেছেন, এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষসহ যানবাহন মালিক ও শ্রমিকরা।

অতিরিক্ত টোলের কারণে বাস ও ট্রাকের ভাড়া বৃদ্ধি করার কথা পর্যন্ত বলছে এখানকার মালিক সমিতিগুলোতে। সূত্রমতে, পায়রা সেতু উদ্বোধনের প্রায় দেড় মাস আগে সেতুটি পারাপারে যানবাহনের টোল নির্ধারণ করেছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে এ টোল নিয়ে চলছে ক্ষোভ আর বিতর্ক। ফেরি পারাপারে আগে যেখানে একটি যাত্রীবাহী বাসের ভাড়া ছিল ৫০ টাকা সেখানে ৩৪০ টাকা টোল ধরা হয়েছে। একইভাবে ফোর হুইল গাড়ির ভাড়া ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, ট্রাকের ভাড়া ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা, মোটরসাইকেলের ভাড়া পাঁচ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। অন্যসব যানবাহনের ক্ষেত্রেও একই হারে বাড়ানো হয়েছে টাকার পরিমাণ।

বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, ২৫ আসনের একটি মিনিবাস বরিশাল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা পটুয়াখালী যেতে ভাড়া নেওয়া হয় মাথাপিছু ৮০ টাকা। এপথে আরও দুটি সেতু রয়েছে। ওই দুই সেতুতে ৫০ টাকা করে টোল দেওয়া হয়। সাথে রয়েছে কর্মচারীদের বেতন এবং জ্বালানি ব্যয়। পায়রা সেতুতে ৩৪০ টাকা টোল দিতে হলে প্রতি রাউন্ড ট্রিপে আমাদের গুনতে হবে ৬৮০ টাকা। এতে করে লোকসানের মুখে পড়বেন বাস মালিকরা। বিষয়টি সম্পর্কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এরপরেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা ছাড়া আমাদের আরও কোনো উপায় থাকবে না।

পন্যবাহী ট্রাক চালক নুর ইসলাম বলেন, সেতুর ক্ষেত্রে টোল বাড়তে পারে। কিন্তু ৩/৪ গুণ ভাড়া বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই। অতিরিক্ত টোল দিতে হলে ট্রাকের ভাড়া একই হারে বৃদ্ধি করা হবে। পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম টোল নির্ধারণের বিষয়ে বলেন, টোল নির্ধারণের বিষয়টি সম্পূর্ণ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন।
 

এবিএন/আরিফ হোসেন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ