আজকের শিরোনাম :

অবশেষে যাতায়াতের পথ পেল অবরুদ্ধ সেই পরিবারগুলো

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ২১:৪২

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় অবরুদ্ধ ৩ পরিবার অবশেষে যাতায়াতের পথ পেয়েছে।  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান প্রভাবশালীর প্রাচীর কিছু অংশ ভেঙে ৩ পরিবারের চলাচলের পথ বের করে দেন।

বুধবার সকালে কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের তরুর বাজারে ঘটনাস্থলে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রাচীর ভেঙে ৩ পরিবারের চলাচলের পথ বের করে দেন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।

২৪ সেপ্টেম্বর কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি তার কার্যালয়ে দু’পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলেন। দুপক্ষই ওই কার্যালয়ে জমির কাগজপত্র জমা দিয়েছে। পাশাপাশি চলাচলের রাস্তা পেতে ৩ পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়।

অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত এক পরিবারের প্রধান ইজাবুল শেখ বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের খোঁজখবর নিতে আসেন ও চলাচলের পথ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

বুধবার সকালে প্রাচীরের কিছু অংশ ভেঙে তিনি আমাদের চলাচলের পথ করে দিয়েছেন। চলাচলের পথ পেয়ে আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আমরা ৩ পরিবার ২ বছরের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছি। এ জন্য আমরা স্থানীয় সাংবাদিক ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।

অবরুদ্ধ থাকা অপর এক পরিবারের কর্তা শুখরঞ্জন জয়ধর বলেন, পার্শ্ববর্তী টুঙ্গিপাড়া উপজেলার করফা গ্রামের নুর ইসলাম শেখ ঢাকায় এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যবসা করেন। তার ভাই রফিকুল ইসলাম টুঙ্গিপাড়ার ডুমুরিয়া ইউপির ১নং ওয়ার্ড মেম্বর। তারা খুবই প্রভাবশালী।

গত ৩ বছর আগে নুর ইসলাম নয়াকান্দি গ্রামের তরুর বাজারের বীরেণ বিশ্বাসের কাছ থেকে কিছু জমি ক্রয় করেন। তারপর তরুর বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন কর্ণার থেকে কয়েকটি দোকানের কয়েক শতাংশ জায়গা কেনেন।

তিনি জানান, এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি নয়াকান্দি তরুর বাজারের ৮টি পরিবারের দোকানপাট ও বসতবাড়ির কিছু কিছু জায়গা জোর করে দখলে নেন। একপর্যায়ে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি ৮০ ফিট জমি দখল করেন। গ্রামের মানুষের চলাচলের পথ বন্ধ করে উত্তরে তরুর বাজার মন্দির থেকে দক্ষিণে খাল পর্যন্ত উচু করে (জেলখানার মতো) সব দিক দিয়ে প্রাচীর তুলে দেন।
 
শুখরঞ্জন জয়ধর আরও বলেন, প্রাচীরের মধ্যে আমাদের ৩টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আমাদের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা বাধ্য হয়েই মই বেয়ে চলাচল শুরু করি। ২ বছর পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের চলাচলের পথ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত নুর ইসলামের ভাই ইউপি মেম্বর রফিকুল ইসলাম বলেন, খালপাড় দিয়ে একটি হাটার রাস্তা ছিল। এ পথেই মানুষ যাতায়াত করত। এ রাস্তা আমাদের জায়গার মধ্যে পড়েছে। আমরা আমাদের পুরো জায়গাজুড়ে প্রাচীর নির্মাণ করি। এখন মানুষের চলাচলের জন্য প্রাচীর ভেঙে রাস্তা করে দিয়েছি। আমাদের জায়গার সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮০ ফিট জায়গা রয়েছে। এটি যাতে কেউ দখল করতে না পারে সে জন্য আমরা সেখানেও প্রাচীর দিয়েছি।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রাচীর ভেঙে অবরুদ্ধ পরিবারগুলোর চলাচলের পথ বের করে দেয়া হয়েছে। এখন পরিবারগুলো নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছে।

তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮০ ফিট জায়গাও প্রাচীর রয়েছে। এ জায়গা দখলমুক্ত করা হলে এলাকাবাসী আরও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে। এ ব্যাপারে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছি।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুদ্দিন বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চিঠি পেয়েছি। দ্রুতই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমাদের জায়গা দখল মুক্ত করব।

এবিএন/লিয়াকত হোসেন (লিংকন)/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ