আজকের শিরোনাম :

রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে উৎসবের আমেজ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৫:২৪

দেশের প্রাচীনতম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজবাড়ী জেলা শাখায় দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ত্রি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ১৬অক্টোবর (শনিবার) শহীদ রেলওয়ে মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

এ উপলক্ষে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে তৈরি করা হয়েছে তোরণ। শোভা পাচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি।

রাজবাড়ী শহরের শহীদ রেলওয়ে মাঠজুড়ে চলছে রাজবাড়ীর ইতি হাসের সব চেয়ে বড় মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরির কর্মযজ্ঞ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহ নেতাকর্মীদের ও কয়েকদফা মাঠ পরিদর্শন করতে দেখা গেছে।

এর আগে ২১ সেপ্টম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ধিত সভা।সেখানেও ব্যাপক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে।রাজবাড়ী জেলাকে সাজানো হয়েছে আলোকসজ্জায়। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজবাড়ী ত্রি-বার্ষিক জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

এদিকে গত এক মাসেরও বেশি সময়জুড়ে জেলার হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লা, চায়ের দোকান সবখানে মানুষের আলোচনায় ঠাঁই পাচ্ছে দেশের ইতিহাসের প্রাচীনতম এই দলটির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ও আব্দুর রহমান; দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি; সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

সম্মেলনে সভাপতি পদে তিন জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে তিন জন প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছেন।প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান সভাপতি ও রাজবাড়ী ২ আসানের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও রাজবাড়ী ১আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষরে প্রশাসক আকবর আলী মর্জির নাম শোনা যাচ্ছে।

এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু এবং জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।

দীর্ঘ ৫বছর পর রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সবচে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। কারা আসছেন জেলা আওয়ামী লীগের আগামী দিনের নেতৃত্বে এমন আলোচনা এখন সবখানে। তবে নতুন কমিটি ভোটের মধ্যে হবে নাকি কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওযা যায়নি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যোগ্য ও কর্মীবান্ধব রাজনীতিকদের নেতৃত্বে আনার দাবি জানিয়েছেন।

বর্তমান সভাপতি মোঃ জিল্লুল হাকিম ও সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী, নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সংগঠিত করতে কাজ শুরু করেন তাঁরা এমন টাই দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের।বর্তমান কমিটি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন প্রতিহত করার পাশাপাশি দলকে করেন সুসংগঠিত। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। বর্তমান সরকারের সকল নাগরিক সুবিধা তৃণমূলে পৌঁছে দিয়ে দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করেন।

এদিকে প্রতি তিন বছর পরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নতুন কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও এবার করোনার কারনে তা হচ্ছে ৫ বছর পর। এতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে এবারের কাউন্সিল নিয়ে বাড়তি আমেজ তৈরি করেছে।
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী জানান, গত ২১ সেপ্টম্বর বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনের প্রস্তুতি বিগত দিনের সম্মেলনগুলোর চেয়ে অনেক জাকজমক । সাংগঠনিকভাবেও আমরা আগের চেয়ে অনেক শক্তিমালী অবস্থায় আছি। ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে আমাদের প্রাণ প্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই সভাপতি সেক্রেটারী বানান না কেন আমরা তাদের নেতৃত্বেই কাজ করবো। নেত্রী এর আগে আমাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এবারও আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। আমাকে আবারও দায়িত্ব দেওয়া হলে আমার সর্বোচ্চ দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করব।

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পুরোপুরি সাংগঠনিক মেজাজের একটি রাজনৈতিক দল। বিগত সময় থেকে আমরা তৃণমূল থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত দলকে অত্যন্ত সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছি। এতে দলের কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়তি উদ্দীপনা দেখা যাওয়াটা স্বাভাবিক।’

এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও সতর্ক রয়েছে পুলিশ। পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বলেছেন, সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা থাকবেন।

এর আগে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ রাজবাড়ী জেলা শাখার সম্মেলন তখন আয়োজন করা যায়নি। এরপর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিসহ নানা কারণেই ২১ মাস ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিকেই দায়িত্বে থাকতে হয়েছে। ১৬ অক্টোবর ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে ফের নতুন কমিটি পেতে যাচ্ছে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগ।

২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ খুশি রেলওয়ে মাঠে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সময় রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিমকে সভাপতি ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক সভায় সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এরপর থেকে জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে জেলা কমিটির এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।

 

এবিএন/খন্দকার রবিউল ইসলাম/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ