কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ২০:০০
প্রাচীনকাল থেকে গ্রাম বাংলায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে ঢেঁকি। পৌষ পার্বনে পিঠা তৈরি করতে কিছু গ্রামে এখনও দুই একটা ঢেঁকি দেখতে পাওয়া যায়। গ্রাম বাংলার মেয়েরা আগের যুগে ধান ভাঙ্গাতে ঢেঁকি ব্যবহার করত। কিন্তু কালের অাবর্তে ধান ভাঙ্গার বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মেশিন ব্যবহারের ফলে ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকিতে ভাঙ্গা চাল। আমাদের দেশের অর্থনীতি ছিল শস্য নির্ভর শস্যকে বিক্রয়োপযোগী করতে যেসব জিনিস খুব বেশি ব্যবহার করা হতো তার মধ্যে ঢেঁকি অন্যতম। সন্ধা নামলেই গ্রামের মেয়েরা দল বেঁধে ধান ভাঙ্গাতে যেত ঢেঁকির পারে। দুই জন মহিলা ঢেঁকিতে পার দিত আর একজন সামনের গর্তে ধান দিয়ে উলট পালট করে দিত আর তাদের মধ্যে চলত নানা প্রকার গল্প,গীত, গান।
সে সময় উত্তর জনপদের একটি গান ছিল “ও মুই ধান বান্ধিরে ঢেকিতে পাড় দিয়ে, আমি নাচি ঢেকিও নাচে হেলিয়া দুলিয়া ও মুই ধান বান্ধিরে” এরকম গান গেয়ে পান খেয়ে সন্ধা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলত ঢেঁকির শব্দ। এখন প্রতিটা গ্রামে বিদ্যুৎ চালিত রাইস মিল থাকায় সন্ধার পর আর ঢেঁকির শব্দ শোনা যায়না। ঢেঁকির শন্দ এখন আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে গেছে। যন্ত্র সভ্যতা অগ্রগতির ধাক্কায় ছিটকে পড়ছে ঢেঁকি।
এক সময় নতুন ধান বাড়িতে তোলার সাথে সাথে বিরাজ করত এক উৎসব মুখর পরিবেশ। বিভিন্ন গ্রামে এ সময় চলত ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা। বিরামহীনভাবে ঢেঁকির মাধ্যমে চাল বের করত গ্রামের মহিলারা। ঢেঁকিছাটা চালের গন্ধে নারীরা নিজেদের শারীরিক পরিশ্রমের কথা ভূলে যেত। সেই সময় গ্রামের অসহায় মহিলাদের ঢেঁকি ছিল একমাত্র আয়ের উৎস। কালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঢেঁকি। গ্রামের পর গ্রাম কোথাও আর ঢেঁকির শব্দ শোনা যায়না, পাওয়া যায় না ঢেঁকিছাটা পুষ্টিকর চাল। এখন তার পরিবর্তে বৈদ্যুতিক মেশিনের ইউরিয়া মাখানো সাদা চাল খেতে হয় গ্রাম বাংলার মানুষদের। প্রত্যন্ত গ্রামে রাইস মিল গড়ে উঠায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি শিল্প।ফলে আমাদের আর শুনতে হবে না “ধান ভাংতে শীবের গীত” জাতীয় প্রবাদ বাক্য।
এবিএন/লিটন/জসিম/রাজ্জাক
এই বিভাগের আরো সংবাদ