আজকের শিরোনাম :

মানিকগঞ্জে অবাধে চলছে ইলিশ নিধন, বসছে ইলিশের হাট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২১, ১১:১১

চলছে ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ জন্য মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ রাখতে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এ সময় ইলিশ ক্রয় বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময়ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা মানছে না শিবালয় উপজেলার জেলেরা। বরং পেশাদার জেলের পাশাপাশি মৌসুমী জেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন কয়েক শতাধিক নৌকায় দিনরাত অবাধে ইলিশ নিধন চলছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে বসছে ইলিশের হাট। চলছে বেচাকেনা।

এদিকে সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারের দায়ে ২১ জেলেকে আটক করে উপজেলা প্রশাসন। এরমধ্য থেকে ১৪ জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং বাকী সাত জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদেরকে অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইলিশ নিধন বন্ধে প্রশাসনের নজরদারি নেই বললেই চলে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক দুটি লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়েছে।

জেলে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীতে ইলিশ আহরণে নজরদারি না করে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘাট এলাকাগুলোতে সাদাপোশাকে টহল বাড়ানো হয়েছে। তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে ইলিশ ছিনিয়ে নিচ্ছে। শিবালয়ের তেওতা ও জাফরগঞ্জ ঘাট এলাকায় পুলিশ সদস্যরা সাদা পোশাকে টহলের নামে ক্রেতাদের কাছ থেকে ইলিশ ছিনিয়ে নিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তেওতা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মতির ছেলে আনিসের ২টি ট্রলারে ইলিশ পারাপার করা হচ্ছে। এই আনিসই ক্রেতা বিক্রেতাকে প্রশাসনের অভিযান ও পুলিশের টহলের খবর পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়া স্পিডবোট চালদের সঙ্গে জেলেদের চুক্তি রয়েছে। নৌকা প্রতি সপ্তাহে ৪ হাজার টাকার চুক্তিতে জেলেদের তথ্য দিচ্ছে তারা। এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানোর সময় তেল কেনার অজুহাতে সময়ক্ষেপন করে স্পিডবোট চালকেরা। যাতে এই সময়ের মধ্যে জেলেরা সটকে পড়তে পারে। স্পিড বোটের ঘাটে জেলেদের নিজস্ব লোকও বসিয়ে রাখা হয়েছে। তারাও অভিযানের তথ্য সরবরাহ করছে।

শনিবার বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তেওতা ঘাট ও আলোকদিয়া চরে ইলিশের হাটে অবস্থান করে স্থানীয় সাংবাদিকরা। এ সময় ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এই সময়ে ৩ বার অভিযানের খবর আসে জেলেদের কাছে। প্রথমে খবর আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও অভিযানে আসছে। শুরু হয় জেলেদের দৌঁড়ঝাপ। তারা জাল নৌকা গুটিয়ে পালাতে শুরু করেন। ঘন্টা খানেক পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে পুনরায় মাছ ধরা শুরু করেন জেলেরা। খবর আসে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আবারও শুরু হয় দৌঁড়ঝাপ। শেষবার খবর আসে র‌্যাব অভিযান চালাচ্ছে। এবার ২টি স্পিডবোট নিয়ে অভিযান চালাতে দেখা যায়। এ সময় জেলেদের একটি নৌকার পাশ দিয়ে গেলেও তাদের আটক করা হয়নি। আলোকদিয়া চরে ইলিশের হাটেও তারা অভিযান চালাননি। তবে রাতে র‌্যাব জানায়, ১০ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়েছে ও ২টি ইঞ্জিনবাহিত নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১০ হাজার মিটার জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শন করে ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করেই ইলিশ ধরা হচ্ছে। একেকটি জালের উচ্চতা ১৪ ফুট আর দৈর্ঘ্য আড়াই হাজার ফুট পর্যন্ত। ছোট বড় সব ধরণের ইলিশই ধরা পড়ে এসব জালে। তবে বেশির ভাগ ইলিশই মা ইলিশ। একেকটি ইলিশের ওজন সোয়া কেজি থেকে পৌণে ২ কেজি পর্যন্ত। এক কেজির উপরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। একেকজন জেলে দিনে প্রায় ৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মাছ ধরছে। কারো কারো দিনে ৫০ হাজার টাকার মাছ ধরার অভিজ্ঞতাও রয়েছে।

শিবালয় থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেন, ইলিশ বন্ধে ব্যবস্থা নিবেন নৌ পুলিশ ও ইউএনও। প্রয়োজনে তারা অভিযান চালাবেন। থানা পুলিশের কাজ তো ইলিশ ধরা বন্ধ করা নয়।
শিবালয় উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল আলম বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। আজকে ২ জনকে আটক করা হয়েছে।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন সুলতানা বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তারপরও কেন যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমরা অভিযান চালানোর আগেই জেলেরা কিভাবে যেন তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। তবুও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ, র‌্যাবকে সঙ্গে নিয়ে আরও বড় পরিসরে ভিন্ন কৌশলে অভিযান চালাবো।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন সুলতানা বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মা ইলিশ সংরক্ষণে অভিযান পরিচালনা করে ২১ জেলেকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিদের নিকট থেকে ৩০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। একই সময়ে ৫ কেজি মা ইলিশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া মা ইলিশ স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। আর আটকদের মধ্যে সাত জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়। অপর ১৪ জেলেকে এক মাস করে কারাদণ্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

এবিএন/মো: সোহেল রানা/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ