রাজারহাটে জমে উঠেছে প্রতিমার হাট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৪৮

সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউপি’র ছত্রজিৎ মৌজায় উপজেলা সদর থেকে ৪ কি. মি. দূরে রাজারহাট-সেলিম নগর সড়কের পার্শ্বে বৈদ্যের বাজার নামক এলাকায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রতিমার জমজমাট হাট বসেছে। প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় মৃৎশিল্পী (মালাকারগণ)।

আসন্ন শারদীয় উৎসবে প্রতিমার হাটটিতে কয়েক লাখ টাকার প্রতিমার বেচা-কেনা হবে বলে একাধিক সনাতন ধর্মের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এক যুগ ধরে ওই এলাকার বাসিন্দা সনাতন ধর্মাবলম্বী শ্রী বৈদ্যনাথ মালাকার (৬০) প্রতিমা তৈরী করে বিক্রি করে আসছে। প্রতি বছর তার প্রতিমা তৈরী করে ব্যবসার সাফল্য দেখে তার পাশাপাশি স্থানীয় আরও ৮/১০ জন প্রতিমা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন একই এলাকার অজয় (৪০), বিপুল কান্তি রায় (৩২), সঞ্জিত কুমার রায় (৪২) ও রিপন রায় (৩১)।

 প্রতি বছর একেক জন মৃৎশিল্পী (মালাকার) দুর্গা পূজা শুরুর দু’মাস পূর্ব থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দক্ষ মৃৎশিল্পী (মালাকার) নিয়ে এসে শুরু করেন প্রতিমা তৈরীর কাজ। এর ব্যতিক্রম এবারও হয়নি।

সরজমিনে গিয়ে কথা হয় প্রতিমা ব্যবসায়ী বৈদ্যনাথ মালাকারের সঙ্গে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, এবার কমপক্ষে ৩০টি মন্দিরের প্রতিমা তৈরীর অর্ডার রয়েছে। বানানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি প্রতিমা তৈরীতে খরচ পড়ে শ্রেণী ভেদে ৭০০০-১৪০০০ টাকা। বিক্রি হবে শ্রেণী ভেদে একেকটি ১২০০০-২৮০০০ টাকায়।

প্রতি বছর এখানকার তৈরী করা প্রতিমাগুলো নিজ উপজেলাসহ রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। তিনি আরও বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে এলাকায় প্রতিমা তৈরীর কাজ করে আসছি। এখানকার শিল্পীরা (কারিগর) বেশ দক্ষতার সহিত প্রতিমা তৈরী করায় জেলার বাইরেও এর কদর প্রতি বছর বেড়েই চলছে। সঞ্জিত রায় (৪২) ও অজয় (৪০) বলেন, দাদা প্রায় ৮/১০ বছর ধরে এ এলাকায় প্রতিমার হাট বসে আসছে। একটি প্রতিমার পেছনে খরচ পড়ে ৭০০০/১১০০০ টাকা। বিক্রি হয় শ্রেণী ভেদে কমপক্ষে ১২০০০/১৮০০০ টাকা। ৬ জন শ্রমিক ৭ দিনের মধ্যে একটি প্রতিমা তৈরীর কাজ সমাপ্ত করে থাকে।

এবার প্রায় ২৬টি মন্ডপের প্রতিমার কাজ সমাপ্ত করবো বলে আশা করছি। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানের সনাতন ধর্মের দুর্গা মন্দির কমিটির লোকজন এসে এ পর্যন্ত ২০টি প্রতিমার অর্ডার দিয়েছে। অর্ডার বাবদ প্রতিটি পূজা মন্ডপের পক্ষ থেকে ৫০১-১০০০ টাকা হারে বায়না দিয়ে গেছে প্রতিমা ক্রয়ের জন্য। পূজা শুরুর ৭ দিন পূর্বে যে যার সাধ্যমত প্রতিমা দেখে পছন্দ পূর্বক মূল্য নির্ধারণ করে অর্থ পরিশোধ পূর্বক রং ও ডিজাইন করে প্রতিমা হস্তান্তর করবো।

বর্তমান প্রতিমা শিল্পীরা (কারীগর) তাদের টার্গেট চূড়ান্ত করতে দিনে-রাতে রুটিন মাফিক শ্রমিকরা অক্লান্ত পরিশ্রমে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। সবমিলিয়ে ওই এলাকাটি প্রতিমার হাট হিসেবে গত এক যুগ বছর ধরে পরিচিতি লাভ করেছে। দুর্গা উৎসবের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, সনাতন ধর্মালম্বী মানুষের পদচারণায় ততই মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রতিমার হাটটি।

এ বিষয়ে রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ কৃষ্ণ কুমার সরকার বলেন, প্রতিমার হাটটিতে থানা পুলিশের পাশাপাশি গ্রাম পুলিশদের তদারকির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দু’একদিন পর পর আমি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছি। এদিকে প্রতিমা ব্যবসায়ীরা বলেন, শুধু আমরা দুর্গার প্রতিমা বানাই তা নয়, সরস্বর্তী, কালী, মনসা, লক্ষ্মী প্রতিমাও বানিয়ে আসছি এবং বিভিন্ন এলাকা হতে দুর্গা পূজার মতো ওই পূজাগুলোরও প্রতিমার চাহিদা ব্যাপক রয়েছে। সবমিলিয়ে এখানে প্রতিমা তৈরীতে ব্যাপক প্রতিযোগিতা দেখা গেছে।

 

এবিএস/রনজিৎ কুমার রায়/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ