আজকের শিরোনাম :

নদী ভাঙ্গনে শংকিত দশমিনাবাসী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:০৬

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার উপকুলীয় এলাকায় বর্ষা মৌসুম শুরুতেই সহস্রাধিক বসতবাড়ি, বেড়ীবাধঁ, মসজিদ ও ১৫ হাজার একর ফসলী জমি বুড়া গৌরাঙ্গ ও তেতুঁলিয়া নদী ভাঙ্গনে ২০টি গ্রামে মানুষ শংকিত হয়ে পরেছে। উপজেলার এ নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ও লিখিতভাবে অবহিত করেও কোন সুফল পায়নি। ফলে উপজেলার উপকূলীয় এলাকার নদী ভাঙ্গতি পরিবারের সদস্যরা আশ্রয়হীন হয়ে অধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। 

ক্ষতিগ্রস্থ ও ভুক্তভোগীরা জানান, উপকুলীয় অঞ্চল হিসেবে এই উপজেলা অন্যতম। নদী ভাঙ্গনে এ এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখানকার বাসিন্দাদের ফসলী জমির ফসল, বসতবাড়ি,ফসলী জমি, বিভিন্ন রোগবালায় অক্রান্ত হয়ে নারী ও শিশু এবং গবাদি পশুর মৃত্যুসহ  সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্থ। উপজেলার রণগোপালদী ইউনিয়নের ভোলাইশিং নাম গ্রামটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঐ গ্রামের শতভাগ বাসিন্দারা আশ্রয়হীন হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবনযুদ্ধে মেতে রয়েছে। একই ইউনিয়নের পাতার চর নামক গ্রামের শতকরা ৮৫ভাগ জমি নদী ভাঙ্গনে বিলুপ্ত হয়েছে। বাকী রয়েছে ১৫ভাগ জমি চরম ঝুকিঁপূর্ণ রয়েছে।

এছাড়াও উপজেলার বাশঁবাড়িয়া, চর বাশঁবাড়িয়া, আমবাড়িয়া, ঢনঢনিয়া, চর ভুথাম, হাজীর হাট, গোলখালী, কাটাখালী, সৈয়দজাফর, চঙ্গার চর, আউলিয়াপুর, পূর্ব আউলিয়াপুর, পাতার চর, চরঘূর্ণি, দক্ষিন রণগোপালদী, রণগোপালদী, চর বোরহান, চর শাহজালালসহ ২০টি গ্রাম বুড়া গৌরাঙ্গ ও তেতুঁলিয়া নদী গ্রাসে করছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ গত বছর দশমিনা ইউনিয়নের হাজীর হাট হইতে রণগোপালদীসহ ৬০ কিলোমিটার বেড়ীবাধঁ নিমার্ণ ও এর মধ্যে ৫কিলোমিটার ব্লক প্রেসেসিংসহ ৫টি স্লুইজগেট নির্মাণ করেছে তাও নামে মাত্র। ঐ বেড়ীবাধঁ নির্মাণকালীন সময়ে এলাকাবাসী পটুয়াখালীর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা কর্মকর্তার কাছে নির্মাণকাজের সিডিউল বহিঃভূতসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তুললেও কোন সুফল পায়নি। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে ব্লক প্রোসেসিংসহ রেড়ীবাধঁ নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে। যার কারনে উপকুলীয় এলাকার বাসিন্দারা ব্যাপক হতাশ ও দুচিন্তাগ্রস্থ হয়ে পরেছে। 

এ ব্যাপারে বাশঁবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলতাফ হোসেন আকন জানান, ইউনিয়নের উত্তর বাশঁবাড়িয়া, মধূবুনিয়াসহ প্রায় ৫কিলোমিটার এলাকা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। চর ভূথামে বেড়ীবাধঁ নির্মাণ করা হলেও ব্লক প্রোসেসিং হয়নি। ফলে ওখানকার ভাঙ্গনরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি আমন মৌসুমে কমপক্ষে প্রায় ১৫হাজার হেক্টর জমির আমনা ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

দশমিনা ইউনিয়নের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির টিম লিডার মোঃ নুরুল হক হাওলাদারসহ আরো অনেকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বেড়ীবাধঁ রক্ষায় ব্লক প্রোসেসিং করা অপরিহার্য ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর কেন এ পদক্ষেপ নেননি, তা আমাদের বোধগম্য না।

রণগোপালদী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম আসাদুল হক নাসির সিকদার জানান, অত্র ইউনিয়নের পূর্ব আউলিয়াপুর, দক্ষিন রণগোপালদী, দক্ষিন  যৌতা, চরঘূর্নি, পাতার চর, ভোলাইশিং, কালীর চর, চঙ্গার চরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম নদী ভাঙ্গন কবলে পরেছে। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বেড়ীবাধঁ রক্ষনশীলভাবে করা হয়নি। অত্র এলাকার চর ঘূর্নি এলাকায় ব্লক প্রোসেসিং করা হয়েছে বাজারের নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে। নদীর সামান্য ঢেউয়ের তোপে বিলুপ্ত প্রায়।

স্লইজ গেট অপরিকল্পিতভাবে নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে জনসাধারনের দূর্ভোগ পেরেছে। জীবন ও জমি, ফসল সব মিলে চরম সংকটপন্ন। যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি। তাদেরকে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করেছি। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভ্রা দাস জানান, আমি সরেজমিনে দেখেছি। বিষয়টি অতিব জরুরী হওয়ায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ঠ জেলা পানি উন্নয়ন বোডের জেলা অফিসারকে মৌখিক ও লিখিতভাবে অবহিত করেছি। 

এবিএন/ সাইদুর রহমান সাইদ/জসিম/নির্ঝর

এই বিভাগের আরো সংবাদ