আ’লীগে প্রার্থীর হিড়িক, বিএনপিতে একাধিক
নওগাঁ-৩ আসনে নির্বাচনী প্রচারনায় ব্যস্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৪০
নওগাঁর বদলগাছী ও মহাদেবপুর এই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৩ আসন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নওগাঁ-৩ আসন (বদলগাছী-মহাদেবপুর) এলাকায় জোট ও মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা। অনেকে নির্বাচনের আগেই মাঠ গরম করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে পুরোদমে। কোন কোন প্রার্থী বলছেন তৃণমূল পর্যায়ে জরিপের উপড় ভিত্তি করে যদি দল সৎ ও যোগ্য বলে মনোনয়ন প্রদান করে তাহলে নির্বাচনের মাঠে আসবো তা না হলে প্রতীকের পক্ষে কাজ করবো।
এই নির্বাচনী এলাকায় অনেক নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে। তাদের আনাগোনায় এলাকায় বেশ জমে উঠেছে নির্বাচনের হাওয়া। সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ, পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, ফেসবুক-টুইটার ও মত বিনিময় সভার মাধ্যমে এসব প্রার্থীরা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। সেই সাথে প্রত্যন্ত গ্রামের নেতাকর্মীদের সাথে কুশলাদি বিনিময়, অসুস্থ্য ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু ভোটাররা চায় সৎ, শিক্ষিত, যোগ্য ও দূর্নীতিমুক্ত নতুন মুখ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নওগাঁ-৩ আসনে (বদলগাছী-মহাদেবপুর) রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের কাছে কদর বাড়ছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে প্রধান দুই দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা এখন নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে শেষ সময় নেতারা উপর মহলে লবিং এর পাশাপাশি গণসংযোগও চালাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আগামী ডিসেম্বর/জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন থেকে এমন ঘোষনা আশার পর থেকেই আওয়ামীলীগের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। দলের উপর মহল থেকে নির্দেশনা পেয়ে নির্বাচনী মাঠ গোছানো শুরু করেছে দলটি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সভা সমাবেশ থেকে শুরু করে দলীয় বিভিন্ন কার্যক্রমে নির্বাচনকে ঘিরে চলছে আলোচনার ঝড়।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮ (নওগাঁ-০৩) আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান, বাংলাদেশের উন্নয়নে আওয়ামীলীগ সরকার বিশ্বের রোল মডেল। তাই বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে আওয়ামীলীগ সরকারের বিকল্প নাই। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুতায়ন, রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণসহ সর্বোপরি দেশের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করে দেশের উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র জনগনের সামনে তুলে ধরছেন অনেকে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থী হিসাবে দল যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষেই তারা কাজ করবেন। তবে তৃনমূল পর্যায়ে জরিপের মাধ্যমেই নির্বাচনের টিকিট প্রদান করা উচিত বলে এমনটাই প্রত্যাশা নেতা-কর্মীদের।
অন্যদিকে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের অনিয়ম-দূর্নীতি, মামলা, হামলা, জুলুম-নির্যাতনের চিত্র জনগনের সামনে তুলে ধরছেন। পাশাপাশি ভোটার বিহীন নির্বাচনের অঙ্গন থেকে বেরিয়ে এসে একটি সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের ভোটের অধিকার এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে নাগরিকদের প্রকৃত সেবা ও সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করার আশ্বাস দিচ্ছেন তারা।
নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনটি এক সময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। তা ভেঙ্গে গত ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক ডেপুটি স্পীকার আকতার হামিদ সিদ্দীকি নান্নু কে পরাজিত করে আওয়ামীলীগ প্রার্থী ডঃ আকরাম হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হন। এরপর থেকে আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে আসে। কিন্তু ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ডঃ আকরাম হোসেন চৌধুরীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম বিজয়ী হন।
নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নওগাঁ-০৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে আওয়ামীলীগের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয় যা প্রকট আকার ধারণ করে অদ্যাবধি বিদ্যমান রয়েছে। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাাশী বর্তমান এমপি ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম, সাবেক এমপি ডঃ আকরাম হোসেন চৌধুরী, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব ও জনতার মঞ্চখ্যাত নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল কবীর, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব উল মান্নাফ শুভ ও সাবেক পুলিশ সুপার মরহুম আবু বকর সিদ্দিকের সহধর্মিনী সখিনা সিদ্দিক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল কবীর বলেন দলের স্বার্থে ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামীলীগ নেতা কর্মি ও সাধারন মানুষের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি এই আসনটি উপহার দিতে পারব বলে শত ভাগ বিশ্বাসী। এছাড়া ও প্রকৌশলী মাহবুব-উল মানাফ (শুভ) বলেন আমি কলেজ লাইফ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয় এর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুন প্রজন্ম প্রয়োজন বলে মনে করেন জন্যই তরুন হিসেবে আমি দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
অপর দিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সকলেই নতুন মুখ। এদল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক ছাত্র নেতা ও বদলগাছী থানা বিএপি’র সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল, সাবেক ডেপুটি স্পীকার আকতার হামিদ সিদ্দীকি নান্নুর ছেলে পারভেজ আরেফিন জনি, জেলা বিএনপি’র সদস্য রবিউল আলম বুলেট, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ,কে,এম, শফিকুল ইসলাম (শফিক)।
এমপি প্রার্থী ফজলে হুদা বাবুল বলেন, দলের স্বার্থে আমি বিগত ১৫ বছর যাবত বদলগাছী-মহাদেবপুরের তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি জন্যই দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে এই আসনটি দলকে উপহার দিতে পারব বলে শতভাগ আশাবাদী। আমি নির্বাচিত হতে পারলে এলাকায় ঘুষ বাণিজ্য, দূর্নীতি, মাদক, চোরাচালান বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করব। এ
ছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও নওগাঁ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে বদলগাছী-মহাদেবপুরের তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি আমি আশাবাদী জাতীয় পার্টিই এ আসনে জয়লাভ করবে।
জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ) নওগাঁ জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ওয়াজেদ আলী বলেন ৭১ এর চেতনায় বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, আগুন সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য দল আমাকে মনোয়ন দিবে বলে আমি আশাবাদী।
এবিএন/হাফিজার রহমান/জসিম/নির্ঝর
এই বিভাগের আরো সংবাদ