আজকের শিরোনাম :

টাঙ্গাইলে ভর্তুকির সার বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৩২

টাঙ্গাইলে ডিলারদের বিরুদ্ধে ভর্তুকির সার বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। চার ধরনের ২২ হাজার টন অতিরিক্ত বরাদ্দের সার ডিলাররা কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিক্রি করছেন। অথচ এ সারের পেছনে সরকারের ভর্তুকি লাখ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোনো তদারকিও নেই।

কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, ইউরিয়া সার ৮০০ টাকা (৫০ কেজি), ডিএপি ৮০০ টাকা, টিএসপি ১১০০ টাকা, এমওপি ৭৫০ টাকা নির্ধারিত বিক্রয় মূল্য থাকলেও সাব-ডিলাররা বেশি দামে সার কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। সাব-ডিলারদের কাছে ডিলাররা কত টাকা কমিশনে সার দেবেন তা নির্ধারিত না থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে। সাব-ডিলারদের কাছে ইউরিয়া সার ৭৮০ টাকায় ডিলারদের সরবরাহ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা করা হয় না।

টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার শহর থেকে ডিলাররা নিয়ে যাওয়ায় বস্তাপ্রতি তাদের ৫০ টাকা করে কমিশন দেওয়ার কথা। কিন্তু তাদের তা দেওয়া হয় না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে-ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএসপি ও এমওপি নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দুই থেকে তিন টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। রেজিস্টারে কৃষকের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর লিখে রাখার নিয়ম থাকলেও কোনো ডিলারই তা করেন না। ইউনিয়ন পর্যায়ে সার সরবরাহ করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ডিলার শহরে বসেই বরাদ্দ সার বিক্রি করে দেন।

কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল জেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ইউরিয়া সারের এক লাখ ২৯ হাজার ৮৭১ টন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ৭৭ হাজার ৯৪৬ টন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর অতিরিক্ত ১০ হাজার টন বরাদ্দ আনা হয়। এ বরাদ্দ আনতে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) জেলা শাখার কর্মকর্তারা তদবির করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে তারা অতিরিক্ত বরাদ্দের চাহিদা পাঠান। এর পেছনে নানা ধরনের দেনদরবার রয়েছে।

ইউরিয়া ছাড়াও টিএসপির ১৭ হাজার ৫৮১ টন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ৭ হাজার ২৮৭ টন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর তিন হাজার টন অতিরিক্ত বরাদ্দ আনা হয়। এমওপির ৫৮ হাজার ৮৫৩ টন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ২০ হাজার ৬৩৪ টন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর পাঁচ হাজার টন অতিরিক্ত বরাদ্দ আনা হয়। ডিএপির ৫৫ হাজার ৫২৭ টন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ৩৭ হাজার ১৫৭ টন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর চার হাজার টন অতিরিক্ত বরাদ্দ আনা হয়। এভাবে সারের অতিরিক্ত বরাদ্দ এনে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে অতিরিক্ত ছয় হাজার মেট্রিক টন সারের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এ মুহূর্তে সারের তেমন চাহিদা না থাকলেও অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার টন ইউরিয়া এবং তিন হাজার টন টিএসপি সার। তবে এসব সার কোথায় যাবে তা কেউ জানে না।

সূত্র জানায়, এ জেলায় সার ডিলার ১৪৭ জন। প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ সার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ডিলারের উত্তোলন ও বিতরণ করার কথা। প্রত্যেক ডিলারের নিজস্ব গুদাম থাকার কথা থাকলেও অনেক ডিলারেরই গুদাম নেই। অন্যের গুদামে সার রেখে বিক্রি করা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ৯ জন করে সাব-ডিলার আছেন। তাদের মাধ্যমেই সার বিক্রি করার কথা। কিন্তু বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে সার এনে সেগুলো কোথায় বিক্রি হয় তা কেউ জানে না। অভিযোগ, বিশেষ বরাদ্দ সারের অধিকাংশ টাঙ্গাইলে আসে না। সেগুলো মিল গেটেই বিক্রি করা হয়।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদার বলেন, অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হলেই অতিরিক্ত বরাদ্দ আনা হয়। এগুলো বাইরে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া অতিরিক্ত দামে কখনো সার বিক্রয় করা হয় না। সংকট হলে অনেক সময় বাইরে থেকে সার এনে বিক্রি করা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, সারের বিশেষ প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। সেগুলো বাইরে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এগুলো কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা দেখভাল করেন। এ কারণে সারের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। জেলার কোথাও বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে না।


এবিএন/তারেক আহমেদ/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ