কালিহাতীতে এক পরিবারের তিনজন প্রতিবন্ধী
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২১, ১৬:৪৩
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বীববাসিন্দা ইউনিয়নের কস্তুরিপাড়া গ্রামে এক পরিবারে তিনজন প্রতিবন্ধী। চিকিৎসা, বাসস্থান ও ভরণপোষণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে দরিদ্র ও অসহায় কস্তুরিপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ দীনেশ সূত্রধর। সুচিকিৎসা ও বাসস্থানের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে গোটা পরিবারটি। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চায় পরিবারটি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় কালিহাতী উপজেলার কস্তুরিপাড়া এলাকায় বৃদ্ধ দীনেশ (৭৬) সূত্রধর তার মানসিক প্রতিবন্ধী স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের জন্য রান্না করছেন। পেশায় কাঠমিস্ত্রি দীনেশ বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাই এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। সড়কের পাশে জরাজীর্ণ টিনের একটি ঘরে ভাড়া নিয়ে কোনো রকমে প্রতিবন্ধী স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন।
একমাত্র মেয়েটিকে ঘরের একটি কক্ষে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। চিকিৎসা করানোর পর দুই-তিন মাস হলো ছেলে কিছুটা সুস্থ হয়েছে। তবে প্রতিদিনই তিনজনকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। দীনেশ সূত্রধর ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান। তাই মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে কোনরকম দিনাতিপাত চলছে।
জানা গেছে, এইচএসসি পাস করা কাঠমিস্ত্রি দীনেশ সূত্রধর ১৯৭৪ সালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া এলাকার সুবল সূত্রধরের মেয়ে পারুল সূত্রধরকে বিয়ে করে। পরবর্তী সময়ে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে দীনেশ শশুরবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। তার অধীনে বেশ কয়েকজন কাঠমিস্ত্রি কাজ করতেন। সংসারও বেশ ভালোভাবে চলছিল। তাদের দুটি ছেলে হওয়ার পর প্রায় ২০ বছর আগে দীনেশের স্ত্রীর টাইফয়েড দেখা দেয়। এতে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
এরপর সাত বছর বয়সে বড় ছেলে দীজেন সূত্রধর নেশায় আসক্ত হয় পড়েন। একসময় ভারসাম্য হারান। পরে তাকে লোহার শিকলে বেঁধে রাখা হয়। একদিন শিকল ভেঙে পালিয়ে যান। আজ পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাননি তার পরিবার। এরপর ২০০২ সালে জন্ম হয় দীপা সূত্রধরের। দীপা যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন, তখন তার টাইফয়েড জ্বর হয়। এরপর থেকেই দীপা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তবে প্রায় পাঁচ বছর ধরে দীপাও শিকলবন্দি অবস্থায় আছেন।
তারপর ২০১৬ সালে দীনেশ সূত্রধর নিজ এলাকা কালিহাতীর বীরবাসিন্দার কস্তুরীপাড়া এলাকায় চলে আসেন। এখানে আসার পরই দীনেশের আরেক ছেলে দীপন সূত্রধর এক বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তাকেও শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছিল দীর্ঘদিন। তবে স্থানীয়দের সাহায্য-সহযোগিতায় দীপনের চিকিৎসা করানো হলে বর্তমানে কিছুটা তিনি কিছুটা সুস্থ আছেন।
বৃদ্ধ দীনেশ বলেন, একসময় আমার সবই ছিল। কিন্তু বর্তমানে কিছুই নেই। টাকার অভাবে স্ত্রী-সন্তানদের চিকিৎসা করাতে পারি না। ঠিকমতো তিন বেলা খাবারও জোটে না। স্থানীয়রা সাহায্য না করলে না খেয়ে মরতে হতো আমাদের। পরিবারের তিনজন ‘পাগল’ (শারীরিক অসুস্থ)। বৃদ্ধ বয়সে এখন আর কাঠের কাজ করতে পারি না। ফলে ‘পাগলদের’ দেখাশোনা করতে করতে নিজেও মানসিক রোগীতে পরিণত হচ্ছি। বাড়ির রান্নাবান্না আমাকেই করতে হয়। ভূমিহীন হিসেবে বসবাসের জন্য সরকারের কাছে বাসস্থান দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, দীনেশের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে তিনজনই মানসিক প্রতিবন্ধী। স্থানীয়রা মিলে টাকা সংগ্রহ করে তার ছেলের মানসিক চিকিৎসা করানো হয়। বর্তমানে ছেলেটা কিছু সুস্থ হলেও মেয়েটা শিকলেই বাঁধা রয়েছে। ঠিকমতো খাবারই খেতে পারেন না, সেখানে স্ত্রী-সন্তানদের চিকিৎসা করাবেন কীভাবে? এলাকার অনেক ধনী মানুষও সরকারি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছে। কিন্তু এই অসহায় মানসিক ভারসাম্যহীন পরিবারগুলো সরকারি কোনো সহায়তা পায় না। একটি জরাজীর্ণ ঘরে দীনেশ তার পরিবার নিয়ে বসবাস করে।
উপজেলার বীরবাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছোরহাব আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই প্রতিবন্ধী পরিবারকে চাল দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী ভাতার আওতার বাইরে ছিল। উপজেলা সমাজসেবার মাধ্যমে দীনেশ সূত্রধরের মেয়ে ও তার স্ত্রীর নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৃদ্ধ দীনেশ যেন বয়স্ক ভাতা পায় এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কালিহাতী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিবন্ধী সদস্যদের মধ্যে দীনেশ সূত্রধরের স্ত্রী পারুল সূত্রধর ও মেয়ে দীপা সূত্রধরের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দীনেশ সূত্রধরের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা তানজিন অন্তরা বলেন, দীনেশ সূত্রধর যদি ভূমিহীন হয় তাহলে তাকে জায়গাসহ সরকারি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এ জন্য তাকে ভূমিহীন হিসেবে একটি আবেদন করতে বলা হয়েছে।
এবিএন/তারেক আহমেদ/জসিম/তোহা
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় কালিহাতী উপজেলার কস্তুরিপাড়া এলাকায় বৃদ্ধ দীনেশ (৭৬) সূত্রধর তার মানসিক প্রতিবন্ধী স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের জন্য রান্না করছেন। পেশায় কাঠমিস্ত্রি দীনেশ বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাই এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। সড়কের পাশে জরাজীর্ণ টিনের একটি ঘরে ভাড়া নিয়ে কোনো রকমে প্রতিবন্ধী স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন।
এবিএন/তারেক আহমেদ/জসিম/তোহা
এই বিভাগের আরো সংবাদ