আজকের শিরোনাম :

আমলীচুকাই আদর্শ গ্রামবাসীর মানবেতর জীবনযাপন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৫৫

বগুড়ার গাবতলী কাগইল ইউনিয়নের আমলীচুকাই আদর্শগ্রামে ৬০ পরিবার বসবাস করলেও এখন শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মানবেতরভাবে জীবন যাপন করছে।

জানা যায়, আমলীচুকাই আদর্শগ্রাম প্রকল্প উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এখানে যেন সমস্যার অন্ত নেই। পুকুরপাড় ভাঙন ও ঘর-রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় প্রতিদিন তাদের দুর-চিন্তাই দিন কাটাতে হচ্ছে। এছাড়াও প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো স্কুল। নামাজ পড়ার মসজিদ ও দাফনের জন্য নেই কোন কবর স্থান। পুকুরে মাছ চাষ করে ভূমিহীন পরিবারগুলো আর্থিক ভাবে উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে।

এছাড়াও তারা ক্ষুদ্র ও কুটির হস্ত শিল্পের কাজ সেলাই, দিনমজুরী ও ভ্যান-রিক্সা চালিয়ে পরিবারের মুখে জুটাচ্ছেন ডাল ভাত। তবুও তাদের পাশে যেন কেউ নেই। আমলীচুকাই আদর্শগ্রাম বাসী চায় পুকুরপাড় ও ঘর-রাস্তা সংস্কার, শিশুদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবাসহ নাগরিক অধিকার।

অসহায় আমলীচুকাই আদর্শ গ্রামবাসীর দাবি অতিদ্রুত পুকুরপাড় ভাঙ্গন রোধ ও রাস্তা সংস্কার। কারন ১০ বিঘা জমিতে পুকুর খননের সময় পাড় ছিল ১১ ফিট। আর এখন পুকুরপাড় ভেঙ্গে হয়েছে ৭ ফিট। ফলে ৪ ফিট পুকুরপাড় ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এখন নির্মাণাধীন ঘর-দরজা পুকুরগর্ভে বিলিন হতে যেতে বসেছে।

এছাড়াও আদর্শগ্রামে টিবওয়েল অকেজো হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট, মসজিদ, কবর স্থান, বিদ্যালয়, ক্লিনিং, ঠিকাদান কেন্দ্র, সীমানা নির্ধারন, পুকুরঘাট, পাঠাগার ও বিনোদন কেন্দ্র নেই। সরকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্যানেটারি ল্যাট্রিন, গভীর নলকুপ স্থাপন করা হলে আজও তা অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। উঠছে না নলকুপ দিয়ে পানি। সংস্কার কাজ না করায় ২টি ব্যাকে ৬০টি পরিবারের ঘর-দরজা ও খুটির এখন বেহাল দশা।

বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় অনেকে আদর্শগ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাঁধ্য হয়েছেন। ঘরের টিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি পড়ছে। গভীর নলকূলগুলো বিকল ও টয়লেটগুলো ভেঙে গেছে। অফিস (ক্লিনিক) ঘর থাকলেও চলছে না কোনো কার্যক্রম। কারণ, এ ক্লিনিং বা অফিস পাকা ঘরের দেয়াল ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অর্থের অভাবে এ ঘরের কোনো মেরামত নেই। ৬০টি পরিবারে বিদ্যুতের আলো জ্ব¡ালিয়ে দিলেও স্কুল না থাকায় অর্ধশতাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে।

মসজিদ না থাকায় ২৫ জন বৃদ্ধের নামাজ পড়াসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আদর্শগ্রামে ১৫ বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শিশুরা থাকলে আজও পাইনি তারা কোন ভাতা কার্ডের সুবিধা। সবকিছু মিলে মনে হয় যেন অসহায় মানুষের এক দুর্বিসহ জীবনযাপন।

আমলীচুকাই আদর্শগ্রাম সমবায় সমিতি লি. সভাপতি আব্দুল লতিফ জানান, সরকারের সুদৃষ্টি না থাকায় আমাদে কে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বহু কষ্ট করে মৎস্য, শাক-সবজি চাষ, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, কুবতর পালন সহ মজুরীর কাজ করে দিন যাপন করছি।

সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম জানান, স্কুল না থাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ছে না। ফলে অসময়ে ঝড়ে পড়ছে অনেক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী। পুকুরপাড় ভাঙনের ফলে প্রতিদিন আতঙ্কিতভাবে আমরা দিন পার করছি এই বুঝি নিজেরদের ঘুমানো বসবাসের ঘর-দরজা পুকুরের পানিতে ডুবে যায়।

আদর্শগ্রামে বসবাসরত উজ্জল, বজলার ও লতিফ জানান, এখানে কবর স্থান না থাকায় আদর্শগ্রামের মরিয়মের কন্যা শিশুকে অন্যত্রে দাফন সম্পূর্ণ করতে হয়েছে। এরপরও নেই স্বাস্থ্য ও শিক্ষার কোনো আলো। পুকুরপাড় ভাঙন, পুকুর ঘাট নেই, স্কুল নেই, কবর স্থানসহ মসজিদ নেই। এসব সমস্যার জন্য দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দিনমজুর আদর্শগ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ।

এ ছাড়াও আদর্শগ্রামের আশপাশে সরকারি খাস জমিগুলো ভূমিহীনদের উন্নয়নে বরাদ্দ পাওয়া বিষয়েও জোর দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, এ সকল সমস্যার জন্য কোনো লিখিত আবেদন পাইনি। তবে আবেদন পেলে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাগইল ইউপি চেয়ারম্যান আগানিহাল বিন জলিল তপন জানান, আমলীচুকাই আদর্শগ্রামে বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। তবে সকল সমস্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবগত করেছি।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন সিরাজী জানান, আমাদের সমবায় অধিদপ্তর থেকে আদর্শ গ্রামবাসীর কল্যাণে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় আমলীচুকাই আদর্শগ্রামের নানা সমস্যা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। আশা করছি ইউএনও মহোদয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন।

তবে ‘আমলীচুকাই আদর্শগ্রাম’ পরিবারের সদস্যদের উন্নয়নে সমবায় দপ্তরের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। ফলে ‘নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত’ আদর্শগ্রামবাসী নিরাপত্তা ও সুশাসনসহ আইনী সহযোগিতা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এবিএন/আল আমিন মন্ডল/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ