আজকের শিরোনাম :

জাতীয় ঐক্যের নামে তারা জাতির সাথে প্রতারণা করছে: ওবায়দুল কাদের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:২৫

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি ৫০০ জন লোক নিয়ে মিটিং করলে তা পত্র পত্রিকায় বড় করে প্রকাশ করা হয় আর আওয়ামী লীগ বিপুল জনসমাগম নিয়ে মিটিং করলে শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সিঙ্গেল ছবি দিয়ে প্রকাশ করা হয়।

আজ (২৩ সেপ্টেম্বর) রবিবার বেলা ১১ টায় কর্ণফুলী ক্রসিংয়ের এস আর স্কয়ার প্রাঙ্গণে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রদানের সময় এ অভিযোগ করেন মন্ত্রী।

যারে দেখতে না-রি, তার চলন বাঁকা। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন। প্রবাদ উচ্চারণে আওয়ামী লীগকে মিডিয়া পছন্দ করেনা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশের গণমাধ্যম আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার বিষয়টি প্রচার করছেনা। উত্তরবঙ্গে ট্রেনসফর এবং কক্সবাজার অভিমুখে সড়ক সফরে বিপুল জনসমাগমের ছবি পত্রিকায় প্রকাশ হয়না। শুধুমাত্র সিঙ্গেল ছবি দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সড়কপথে ওবায়দুল কাদেরের সফরের সংবাদ সংগ্রহে ঢাকা থেকে আসা সংবাদকর্মীদের বিপুল জনসমাগমের ছবি প্রকাশ করার অনুরোধ করেন।

কর্ণফুলিতে আয়োজিত জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে বলেন, দেখতে দেখতে ১০ বছর, মানুষ বাঁচে কয় বছর? দশ বছরে বিশটা ঈদ গেলেও দশদিনও আন্দোলন করতে মাঠে নামেনি বিএনপি। আন্দোলন হবে কোন বছর? ১০ বছরে হয়নি, নির্বাচনের বাকি তিন মাস। এখন কি আর আন্দোলন হবে? মানুষ এখন ইলেকশনের নীড়ে। এখন কেউ আন্দোলন চায় না।

তিনি বলেন, ধানের শীষ এখন বিষে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনে জনসমর্থণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি কোটার ওপরে ভর করেছিলো, সেখানেও ব্যর্থ তারা। পরবর্তীতে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ঢুকে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায় নির্বাচনী হাওয়া ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তবে এটা ‘নেতায়-নেতায় ঐক্য, এটা জাতীয়তাবাদী ঐক্য। অতচ আইআরআই জরিপে এসেছে শেখ হাসিনার প্রতি দেশের ৬৬% মানুষের সমর্থন আছে। বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্যের নামে তারা জাতির সাথে প্রতারণা করছে।

বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্য বড় জায়গায় সমাবেশ করতে ভয় পাই উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য যেখানে সমাবেশ করতে চায় সেখানেই করুক। অতচ বিএনপিসহ সদ্যগঠিত রাজনৈতিক মোর্চা (বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের) ক্ষমতা নেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো বড় স্থানে সভা করার। জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন মানুষ আর পছন্দ করে না বলেই বিএনপি জনসমর্থন হারিয়েছে।

ফলে লোক সমাগম কম হওয়ার ভয়ে বড় জায়গায় সমাবেশ করতে ভয় পাই তারা। তারা পল্টনে ঢুকে যায়, নাট্যমঞ্চে ঢুকে যায়। শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ৩০ দল মিলে মিটিং করেছে, এখন আমাদের পথসভার বাইরে যত লোক দাঁড়িয়ে আছে সেখানে তত লোকও ছিল না।
ওবায়দুল কাদের সমাবেশে বলেছেন মির্জা ফখরুল ভুয়া, বিএনপি ভুয়া! ভুয়া না হলে তারা দেশবাসীর সাথে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিতো না, প্রতারণা করতো না। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দ্যেশ্য করে ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন রাখেন?

জাতিসংঘের মহাসচিব দাওয়াত করেছে বলে কেন বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা আর মিথ্যাচার করা হলো? তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব দাওয়াত করেছে জানিয়ে দেশের পত্রপত্রিকা-মিডিয়ায় প্রচার করেছেন মির্জা ফখরুল। অতচ এটি একটি ভুয়া খবর। আসলে মির্জা ফখরুল জাতীসংঘের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে নালিশ করে দেশে ফিরেছেন। তিনি যখন জাতিসংঘে যায় তখন জাতিসংঘের মহাসচিব যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন না, তখন তিনি ছিলেন ঘানায়।
 
কর্ণফুলিতে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যদান কালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কর্ণফুলী-আনোয়ারা আসনে প্রার্থী হিসেবে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
 
এসময় ওয়াবায়দুল কাদের বিএনপি জামায়াতের আন্দোলনকে গুজবের আন্দোলন উল্লেখ্য করে বলেন- গুজব-সন্ত্রাস এখনো আছে। এ সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে হবে। আন্দোলনে জনগণ আর সাড়া দেবে না। বিএনপির একটি কাজ এ চট্টগ্রামে দেখান। যে কাজ দেখিয়ে ভোট চাইতে পারে। ভোট চাওয়ার মতো কোনো কাজ নেই। নোমান সাহেব, আমির খসরু সাহেবের বড় বড় কথা, লাগাম ছাড়া কথা আছে। তাদের কোনো কাজ নেই।

তিনি বলেন-চট্টগ্রামের মানুষ জানে, কর্ণফুলী নাকি বিএনপির ঘাঁটি! সেই ঘাঁটিতে দেখে যান, ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। কর্ণফুলী এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে। কর্ণফুলী এখন শেখ হাসিনার সঙ্গে। কর্ণফুলী এখন তরুণ জননেতা জাবেদের সঙ্গে।’

এসময় মন্ত্রী নেতাকর্মীদের উদ্দ্যেশে বলেন, সকল ভেদাভেদ মান অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকেন। ঐক্যবদ্ধ থাকলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমদের সভাপতিত্বে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেকের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের।

এসময় জনসভার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, চন্দনাইশের এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান, ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দীন,

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী নোটন, সাবেক সভাপতি এস এম জাকির হোসেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

 অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দীন আহমেদ, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মন্নান, আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, দক্ষিণ জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদিকা শামীমা হারুন লুবনা, দক্ষিণ জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি. ইসলাম আহামদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ.ন.ম টিটু সুলতান চৌধুরী।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নের্তৃত্বে সড়ক পথের বিশেষ নির্বাচনী বহরটি শনিবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এসে পৌছায়।

আজ রবিবার ৯টায় সার্কিট হাউস থেকে বেড়িয়ে সকাল ১০টায় কর্ণফুলী উপজেলায় পৌঁছে। সেখান থেকে পথসভা শেষ করে লোহাগাড়ার চুনতির মেহেরুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সুধী সমাবেশ, চকরিয়া বাস টার্মিনাল, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ এবং রামুতেও একটি জনসভায় যোগদান শেষে বিমানে ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে।

 

এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ