সোনাগাজীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন: হুমকির মুখে নির্মাণাধীন ব্রিজ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:২৩
সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউপির ছোট ফেনী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নির্মাণাধীন সাহেবের ঘাট ব্রিজ।
নির্মানাধীন ব্রিজের ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু উত্তোলন আইনগতভাবে বেআইনি হলেও মাত্র ১শ’ গজের মধ্যে কয়েকটি ড্রেজার মেশিনে বালি উত্তোলন করছে সরকার দলের নাম ভাঙ্গানো প্রভাবশালী চক্র।
এতে করে ব্রিজসহ আশ-পাশের নির্মিত ব্লক নদী গর্ভে বিলীন ও ফসলি জমির ক্ষতি হলেও ভয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
স্থানীয় এলাকাবাসী, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী-সোনাগাজী-চট্রগ্রামের জোরারগঞ্জ পর্যন্ত নির্মানাধীন সড়কের সেতুবন্ধন তৈরি করতে সোনাগাজী উপজেলার ছোট ফেনী নদীর উপর প্রায় ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে সাহেবের ঘাট ব্রিজ।
কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত সরকার দলের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ছোট ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নির্মাণাধিন ব্রিজটি।ব্রিজের উভয় পাশে চক্রটি গত কয়েক বছর ধরে বালু ্ উত্তোলন করছে।
সোনাগাজী উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান ও বর্তমান নির্বাহী অফিসার সোহেল পারভেজ অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে একাধীকবার অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিবারই দেখা গেছে অভিযানের পর কয়েক দিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু করে চক্রটি। উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও বিপুল পরিমান মজুদকৃত বালু অজ্ঞাত কারনে জব্দ করেনি।
স্থানীয়দের ধারনা প্রশাসনের সহায়তায় প্রভাবশালী চক্রটি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মজুদ করে বিক্রি করছে। গত কয়েক বছরে চক্রটি চক্রটি অন্তত কয়েক কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে ,বালু উত্তোলনের কারনে পশ্চিম চরদরবেশ ও পশ্চিম চরচান্দিয়া গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা ও বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন করে জেগে উঠা দুটি চর ভাঙনের মুখে পড়েছে।নির্মানাধীন ব্রিজের উভয় পাশে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুর বিশাল স্তুপ।সেখান থেকে চক্রটি বালু বিক্রি করছে।
পশ্চিম চরচান্দিয়া গ্রামের আব্দুস শুক্কুর জানান, প্রভাবশালীদের অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে তার দুই একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিবাদ জানালে তাকে নাশকতার মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি প্রদানের পর থেকে ভয়ে চুপসে আছি।
পশ্চিম চরদরবেশ গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক জানান,মুচাপুর ক্লোজার স্থাপনের পর নদী ভাঙ্গন বন্ধ ছিলো কিন্তু বড় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে আবার ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।ইতিমধ্যে অনেকের ফসলি জমি ধীরে ধীরে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে।
স্থানীয় মঞ্জুর হোসেন নামে সাবেক ইউপি সদস্য জানান , বালি ডাকাতদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। ইতোপূর্বে এইভাবে বালি উত্তোলনের ফলে নির্মানাধীন ব্রিজটির গার্ডার ভেঙে নদীতে পড়ে গিয়েছিল। কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক আহত হয়েছিল।ব্রিজ নির্মানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মচারীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় প্রভাবশালী চক্রটি াব্রিজের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্মণাধীন ব্রিজের পাশে চা দোকানদার জানান,এলাকাবাসীকে ভয় দেখানোর জন্য অবৈধ বালু উত্তোলনের চক্রটি কয়েক দিন পর পর বিপুল ক্যাডার ও অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়ে থাকে। যার কারনে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনা।
ব্রিজ নির্মাণে তদারকির সাথে জড়িত নোয়াখালীর সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্যাহ আল মামুন জানান, ব্রিজের পাশ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে ফেনীর জেলা প্রশাসক কে একাধীকবার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সোহেল পারভেজ জানান,ব্রিজের পাশে অবৈধ বালু মহালে অভিযান চালানো হয়েছে। বর্তমানে বালু উত্তোলন হচ্ছে কিনা সেটা তার জানা নেই।অবৈধ মজুদকৃত বালু জব্দ করা হবে কিনা প্রশ্নের জবাব তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কুল দীপ চাকমা জানান, আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে যাওয়ার খবর পেলে তারা ড্রেজার মেশিন সরিয়ে ফেলে।
এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা
এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা
এই বিভাগের আরো সংবাদ