আজকের শিরোনাম :

মধুখালীতে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২১, ১৯:২৩

ফরিদপুরের মধুখালীতে প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৯) নামে এক ব্যবসায়ীকে। এ ঘটনায় হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গ্রামের সাধারণ নারী পুরুষ ও জনগণ। এসময় তারা অভিযোগ করেন, গত রোজার সময় থেকেই এই সন্ত্রাসীরা একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে মধুখালী থানার পুলিশকে বারবার জানালেও কর্ণপাত করেনি। ফলে তাদের গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত ও শান্তিকামী জাহাঙ্গীর হোসেনকে নির্মমভাবে খুন হতে হলো সন্ত্রাসীদের হাতে।

জানা গেছে, মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের মাকরাইল গ্রামের সম্ভ্রান্ত গৃহস্থ হারুনুর রশীদ হিরু মিয়ার বড় সন্তান এই জাহাঙ্গীর হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে তিনি দীর্ঘদিন যাবত ঢাকাতেই পার্টসের ব্যবসা করতেন। তবে সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস এর মহামারীর কারণে তিনি ঢাকা থেকে নিজ গ্রাম মাকরাইলে ফিরে আসেন এবং মধুখালী বাজারে পার্টসের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেন। তার স্ত্রী সাজেদা মাহমুদ বিথী ঢাকার ভিকারুন্নেসা স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। গত বছরের ৪ নভেম্বর সাজেদা মাহমুদ বিথী মারা যান। জাহাঙ্গীর হোসেনের বড় মেয়ে মাহমুদা জাহান ভিকারুন্নেসা স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। আর তার ছোট মেয়ে জান্নাতুল জাহান স্মৃতি একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। শাফিন মাহমুদ সামী নামে তাদের চার বছরের একটি শিশু পুত্র রয়েছে। বাপ-মা হারিয়ে এই ছোট শিশুরা মা-বাবাহারা এতিম হয়ে গেলো। মায়ের পরে পিতাহারা এই শিশুসন্তানদের আর্তনাতে মাকরাইল গ্রামের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। সেখানে এক নিদারুন শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মারা যান জাহাঙ্গীর হোসেন। তার আগে শনিবার দুপুরে মাকরাইল গ্রামের উত্তর পাড়ার রাস্তার উপরে প্রকাশ্য দিবালোকে চিন্হিত সন্ত্রাসীরা তাঁর উপর হামলা চালিয়ে পৈচাশিক ভাবে পিটিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে মৃত ভেবে ফেলে যায়। গ্রামের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলম শেখ (৩৫) নামে একজন ভ্যান চালক জানান, শনিবার দূপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি জাহাঙ্গীরকে নিয়ে মধুখালী বাজার হতে মাকরাইল গ্রামে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে মেছেড়দিয়া নামক স্থানে এলে তারা মামুনকে দেখতে পাযন। তাদের দেখে মামুন মোবাইল ফোনে কারো সাথে যোগাযোগ করে। এরপর উত্তরপাড়ায় এলে উথানের বাড়ির সামনে তাদের ওপর হামলা করে।

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ রবিউল ইসলাম (৪৬) নামে একজন ভ্যান চালক জানান, আলম শেখের পিছনে তিনিও ভ্যানে যাত্রী নিয়ে মাকরাইল গ্রামের দিকে আসছিলেন। উত্তরপাড়ার রাস্তায় এসে তিনি দেখতে পান ওই গ্রামের কনক, মিরান, সোহেল, রুবেল রানজু, দারু ও মিরাজ লাঠিসোটা নিয়ে এসে প্রথমে ভ্যানচালক আলমকে একটি বাড়ি মারে। এরপর গামছা দিয়ে বেঁধে জাহাঙ্গীরকে বেঁধে এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকে তারা। কিছুক্ষণের মধ্যে মামুন মোটরসাইকেলে সেখানে হাজির হয়। জাহাঙ্গীরকে পেটাতে থাকা তাঁর সহযোগীদের উদ্দেশ্যে সে বলে, 'আরে ওইভাবে  মারতে হয়না'। তারপর তাঁর হাতে থাকা হকিষ্টিকের মতো দেখতে একটা কিছু দিয়ে জাহাঙ্গীরের শরীরের পুরো বাম পাশে প্রায় ২০ মিনিট ধরে বেদম পেটাতে থাকে।

এদিকে ভ্যানচালক আলমের থেকে খবর পেয়ে জাহাঙ্গীর হোসেনের পড়শি ও স্বজনেরা ঘটনাস্থলে যেয়ে তাঁকে রাস্তার উপরে গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নেন।

কামালদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুল বাশার বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে তাঁর নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ওয়ালিদ মামুন। ওই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই মামুন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। জাহাঙ্গীর হোসেনকে হত্যার আগের দিন তারা সে মেছেড়দিয়ায় তাঁর ভগ্নিপতির বাড়িতে বসে গোপন বৈঠক করে। এরপর তারা পরিকল্পিতভাবে জাহাঙ্গীর হোসেনকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, এর আগে এই ওয়ালিদ মামুন ঢাকায় ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছে। র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। এখনো সে এলাকায় তারা সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসব অঘটন ঘটিয়ে চলেছে। তিনি জাহাঙ্গীর হোসেনের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি দাবি করেন।

মধুখালী থানার ওসি তদন্ত রথীন্দ্রনাথ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জড়িতদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চলছে। দেশের যেই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি গ্রামবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।


এবিএন/কে এম রুবেল/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ