আজকের শিরোনাম :

সালথায় খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২১, ১৭:০৬

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় ফরিদপুরের সালথায় দুটি খাল পুনঃখননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাল দুটি পুনঃখননের নামে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এদিকে ভেকু মেশিন দিয়ে খাল খনন করে মাটি ফেলানো হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমির ভিতর। এতে জমিতে থাকা সোনলি আশ পাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পাটচাষীরা।   

জানা গেছে, খরা মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষণ ও কৃষি জমিতে পানি সেচের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় সালথা উপজেলায় দুটি খালের পুনঃখননকাজ চলছে। নিয়ম অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় খননকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারা গোছের কাজ করে খালের মাটি ফসলি জমিতে ফেলানোয় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খননের শুরুতেই খালের পাড়ে মাটি যেভাবে এলোমেলো ফেলে রাখা হচ্ছে তাতে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি ধসে খাল ভরাটের আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি এলাকাবাসী অভিযোগ তুললে ঠিকাদারের লোকজন পাড়ের মাটি সরিয়ে পুনরায় খাল খনন করার আশ্বাস দিলেও তড়িঘড়ি করে নামমাত্র খননকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃর্খনন প্রকল্পের আওতায় সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িদিয়া নদী থেকে বাইনাখালি পর্যন্ত ১ হাজার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য রাজাবাড়ি খাল ও মোড়হাট এলাকা দিয়ে বয়ে যওয়া কুমার নদী থেকে দীঘের বিল পর্যন্ত ১ হাজার ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য কেষ্টখালি খালের খননকাজ চলছে। খননকাজ বাস্তবায়ন করছেন কমিল্লার ঝাউতলার সেসার্স সারা এন্টারপ্রাইজ। খাল দুটি পুনঃখনন কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৬৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। খনন প্রকল্পের কাজ দুটি ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও এখনও কাজ শেষ হয়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী খননকাজ করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোকজন সঠিক সময়ে তা পরিদর্শন করছেন না। খননের মাটি উত্তোলন করে দূরে না সরিয়ে পাড়েই রেখে দেওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হতে না হতেই মাটি ধসে খাল পুনরায় ভরাট হচ্ছে। আবার কিছু কিছু স্থানে খালের পাড়ে থাকা স্থানীয়দের ফসলি জমিতে মাটি ফেলানো হচ্ছে। এতে পাট ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাটের ছোট ছোট চারাগুলো ভেঙ্গে-চুড়ে  মেরে ফেলা হচ্ছে।

রাজাখালি ও কেষ্টখালি খাল খনন কাজ করা হচ্ছে মাত্র দুটি ভেকু মেশিন দিয়ে। কাজের সাইডে প্রকল্পের ঠিকাদার বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো তদারকি কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ নেই। কেষ্টখালি ও রাজাবাড়ি খাল খননে উপরে প্রস্থ ৪৪ থেকে ৪৫ ফিট করে কাটার কথা থাকলেও ২৫ থেকে ৩৫ ফিট করে কাটা হচ্ছে। তলায় প্রস্থ ১৩ থেকে ১৬ ফিট করে কাটার কথা থাকলেও ১০ থেকে ১২ ফিট করে কাটছে। সাড়ে ৩ ফিট থেকে ৮ফিট করে গভীর করে খনন কথা থাকলেও ২ থেকে ৪ ফিট করে গভীর করে খনন করা হচ্ছে।

উভয় খালের দুই পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারা গোছের কাজ করে খালের মাটি ফসলি জমিতে ফেলানোয় পাট-মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। খননের শুরুতেই খালের পাড়ে এলোমেলো করে মাটি ফেলাচ্ছে, তাতে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি ধসে ফের খাল ভরে যাবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা অভিযোগ তুললে ঠিকাদারের লোকজন পাড়ের মাটি সরিয়ে পুনরায় খাল খনন করার আশ্বাস দিলেও তড়িঘড়ি করে নামমাত্র খননকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

একাধিক সুত্র জানায়, খনন কাজ দুটি টেন্ডারের মাধ্যমে কমিল্লার ঝাউতলার সেসার্স সারা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তি কাজ দুটি বাস্তবায়ন করছেন। তিনি নাকি কাজ দুটি কিনে নিয়ে করছে বলে দাবী করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, খাল দুটি খননের নামে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে লুটপাটের চেষ্টা করছে জাকির হোসেন নামে ওই ব্যক্তি।

এ বিষয় খাল দুটির খনন কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার জাকির হোসেনকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করে অনিয়মের বিষয় শুনা মাত্র ফোনের লাইনটি কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন। জাকির হোসেন মেবাইল-০১৭৭৬৭৭৬৯৮৩

অনিয়ম প্রসঙ্গে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, দুটি খাল খননের কাজ চলছে। এখানে কোন অনিয়ম হলে ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হবে না।


এবিএন/কে এম রুবেল/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ