আজকের শিরোনাম :

সৌন্দর্য পিপাসু ও স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের নতুন ঠিকানা চট্টগ্রামের জাম্বুরী পার্ক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:২৬

চট্টগ্রাম নগরীতে এমনিতেই সাধারণ মানুষের জন্য খোলা আকাশের নিচে বিনোদন স্পটের অভাব প্রকট। নগরীতে নেই একটিও ভালো পার্ক। বিনোদন স্পটের মধ্যে যা রয়েছে তা অনেক ব্যয়বহুল। আবার কয়েকটি স্পটে যেতে যানজটের কবলে পড়ে বিনোদন পিপাসা এমনিতেই মিটে যায় বিনোদন প্রেমীদের।

দীর্ঘদিনের এ অভাব পূরণ করে নগরবাসীকে স্বপ্নের দুয়ারে নিয়ে যাবে নবনির্মিত জাম্বুরী পার্ক। সৌন্দর্য পিপাসু ও স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের নতুন ঠিকানা হবে এ পার্ক। শনিবার জাম্বুরী পার্কের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর অসাধারণ এ বিনোদন পার্কটি সর্বস্থরের দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তবে যথাযত নিরাপত্তা, ব্যবস্থাপনা, বখাটে ও ছিনতাইকারীর উৎপাত থেকে রক্ষা করাসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকাও করছেন কিছু কিছু দর্শনার্থীর।

আগ্রাবাদের একসময়কার সুপরিচিত জাম্বুরী মাঠটিই এখন জাম্বুরী পার্কে রুপান্তরিত হয়েছে। সেজেছে নবরুপে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় প্রায় ১৬ একরের এই জাম্বুরী মাঠটির ৬ একরে শিশুপার্ক গড়ে উঠলেও ১০ একর মাঠ ছিলো পরিত্যাক্ত। ঝোপ. ঝাড় আর জঙ্গল, মশা আর সাপ বিচ্ছুর অবাধ বিচরণ ছিল।

এখন সেই জাম্বুরী মাঠ জুড়ে নিয়ন আলোর খেলা। জাম্বুরি মাঠ জুড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অসাধারণ সুন্দর এক বিনোদন পার্ক। মাত্র ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে অনন্য সুন্দরে সজ্জিত এই জাম্বুরি মাঠটি আজ মনোমুগ্ধকর পার্কে পরিণত। চট্টগ্রামবাসীর মানসিক প্রশান্তির জায়গা হয়ে উঠেছে।

উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে দর্শনার্থীদের যেন একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। পার্কটির আনাচে কানাচে শতশত দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্যনীয়। পার্কটিতে দেখা যাচ্ছে শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধদের উপস্থিতি। সন্ধ্যা হলেই জলাধারের বাহারি রঙের আলোকচ্ছট্টায় পুরো পার্ক জুড়ে একটি দৃষ্টিনন্দন চেহারায় রূপ পেতে দেখা যায়। এতে দর্শনার্থীরা আনন্দ উল্লাসের পাশাপাশি মনোরম দৃশ্যগুলো উপভোগ করেন।

জানা যায়, ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি পাকিস্তান ন্যাশনাল স্কাউট জাম্বুরি হয়েছিল চট্টগ্রামে। এর তিন দিন আগে আগ্রাবাদের ডাকাইত্যা বিল মাটি ভরাট করে বিশালাকারের মাঠ তৈরির কাজ শেষ হয়। সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তান ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি আইয়ুব খান (পরে রাষ্ট্রপতি) জাম্বুরির উদ্বোধন করেন। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের স্কাউটরা এতে অংশ নেয়। এ কারণে পরবর্তীতে মাঠটি জাম্বুরি মাঠ নামে পরিচিতি পায়। মাঠের পাশে বহুতলা কলোনি তৈরির সময় রাস্তা নির্মাণের কারণে বিশাল জাম্বুরি মাঠটি প্রথম দ্বিখন্ডিত হয়। এর এক খন্ডে এখন রয়েছে কর্ণফুলী শিশু পার্ক।

২০১৬ সালের মে মাসে জাম্বুরি মাঠটিকে একটি অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা পার্ক হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। মূলত ২০১৭ সালের শুরু থেকেই গণপূর্ত বিভাগের উদ্যোগে জাম্বুরী মাঠ উন্নয়ন এবং পার্ক নির্মানের কার্যক্রম শুরু হয়। অনুমোদন মেলে ৮ দশমিক ৫৫ একর আয়তনের জাম্বুরী পার্ক প্রকল্পটি। পরবর্তীতে গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন।

বর্তমানে পার্কটির অবকাঠামোতে দেখা যায়, রাজধানীর রমনা পার্কের আদলে হাঁটার জন্য রয়েছে প্রচুর খোলা জায়গা। মনোরম প্রকৃতির পাশাপাশি এই পার্কে দর্শনার্থীরা খুঁজে পাবেন মানসিক প্রশান্তি। লাগানো হয়েছে হরেক রকম ফুল ও ফলের গাছ। পার্কে রয়েছে শরীর চর্চার জন্য প্রশস্ত ও দীর্ঘ জগিং ট্র্যাক, উন্মুক্ত উদ্যান এবং জলাধার। এই পার্কে স্বাস্থ্য সচেতন ও ভ্রমণপিপাসু ৫ হাজার মানুষ এক সাথে হাঁটতে পারবেন। সন্ধ্যার পর আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে পার্কটি।

উত্তর পাশে ২টি, দক্ষিণ পাশে ২টি, পূর্ব পাশে দশতলা ভবনের ফটকের সামনে একটি, পশ্চিম পাশে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে একটি বড় আকারের ফটক রাখা হয়েছে পার্কে প্রবেশের জন্য। পার্কটি সর্বস্থরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রবেশের জন্য প্রয়োজন হবে না টিকিটের। উদ্বোধনকালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ পার্কটি সৌন্দর্য রক্ষার্থে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে দর্শনার্থীতে।

তাদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, রাজধানীর রমনা পার্কের মতো এ পার্কটিও হবে সম্পূর্ণ ধুমপানমুক্ত। এখানে আপনারা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে হাটবেন আর নিঃশ্বাস নেবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে এ পার্কটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আপনাদের। পার্ক ময়লা হয় এমন কোন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আর প্রেমিক প্রেমিকারা জমিয়ে ছুটিয়ে আড্ডা দিন তাতে কোন বাঁধা নেই তবে পার্কে বাদাম আর আইসক্রিম খেয়ে পরিবেশ নষ্ট করলে শাস্তি পেতে হবে। পার্কে কৃত্রিম ভাবে বানানো লেকগুলোতে পানি নিয়ে বাচ্চারা খেলতে পারবেন কিন্তু গোসল করা যাবেনা।  

তাছাড়া সোন্দর্যবর্ধনের জন্য ও টাটকা অক্সিজেন নেওয়ার লক্ষ্যে পার্কে লাগানো গাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কোন গাছের চারাই হাত লাগানো যাবে না কিংবা নষ্ট করা যাবেনা। গাছগুলো বড় হলে চট্টগ্রামের এ জাম্বুরি পার্ক একসময় রাজধানীর রমনা পার্কের চাইতেও অনেক বেশি সুন্দর হবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি শিশুদের খেলার মাঠের অভাব অনুভব করে ভবিষ্যতে এ পার্কটির পাশেই ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি খেলার তিনটি মাঠ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, পার্কের পাশে অনেক জায়গা এখনো মামলাধীন। নিস্পত্তি হলেই সেখানে পরিস্কার করে তৈরি করা হবে ফুটবল, ক্রিকেট ও হকির তিনটি মাঠ। ছেলে মেয়েরা যাতে রাতেও সেখানে খেলাধুলার চর্চা চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য মাঠে ব্যবস্থা থাকবে পর্যাপ্ত আলোর। পাশাপাশি চট্টগ্রামে আরও পার্ক নির্মিত হবে বলে জানান মন্ত্রী।

পার্ক নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএইচবি অ্যান্ড নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরশাদুল হক বাবর জানান, জাম্বুরি মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পার্কের অতিথিদের জন্য রাখা হয়েছে আধুনিক শৌচাগার। মাঝ বরাবর আছে দুইটি মাল্টি পারপাস ছাউনি। গড়ে তোলা হয়েছে নান্দনিক জলাধার। জলাধারের মধ্যেই রয়েছে অসাধারণ সুন্দর ফোয়ারা।

মাঠের প্রান্তে অতিথিদের বিশ্রামের জন্য রাখা হয়েছে কিছু স্থায়ী বেঞ্চ ও তিনটি দুই ধাপের গ্যালারি। বিশাল পার্ক জুড়ে লাগানো হয়েছে শিউলি, নাগেশ্বর, টগর, হৈমন্তী, শিমুল, সাইকাস, রাঁধাচূড়া, কাঠচাঁপা, জারুল, বকুলসহ ১০ হাজার ফলদ ও বনজ গাছ।

এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ