আজকের শিরোনাম :

চিরিরবন্দরে স্বশরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক মৃত নারী!

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২৪

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'জীবিত ও মৃত' ছোটগল্পের বিখ্যাত উক্তি হলো- কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই'। সৌভাগ্যবশত প্রত্যেকে কাদম্বিনীর মতো অভাগী নন, কাজেই জীবিতাবস্থার প্রমাণ দেয়ার জন্য জীবন ত্যাগের চুড়ান্ত পদক্ষেপ না করলেও চলে যায় নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে এখন ঘুরছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দ্বারে দ্বারে। চিরিরবন্দর উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ এবং নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সহিদা বেগম নামে এক মৃত নারী। নিজেকে জীবিত প্রমাণ করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। একজন সুস্থ সবল মানুষ যা যা করেন সবই করছেন তিনি। স্বামীর অবসরভাতা বেশ কয়েকবছর যাবত তুলতে পারলেও হঠাৎ করে ভোটার তালিকায় মৃত হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভাতা প্রদান বন্ধ রাখে। বর্তমানে নিদারুন দারিদ্রতা নিয়ে জীবনযাপন করছেন তিনি।
    
উপজেলার ভূমি অফিসের চতুর্থ শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের বাসিন্দা মৃত ফজিরউদ্দিনের স্ত্রী সহিদা বেগম। বাস্তবে জীবিত থাকলেও ভোটার তালিকায় তিনি মৃত। ভোটার তালিকায় মৃত হওয়ায় স্বামীর অবসরভাতা উত্তোলনসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি। এমনকি তিনি ভোট দিতেও পারছেন না।

জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন অফিসে ৬ মাস ধরে ধর্ণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি সহিদা বেগমের। তিনি বলেন, আমি জানতাম না ভোটার তালিকা থেকে আমার নাম কর্তন করা হয়েছে। স্বামীর অবসরভাতা তুলতে ব্যাংকে গিয়ে শুনি যে, আমার নাম ভোটার তালিকা থেকে কেটে দেয়া হয়েছে। আমি নাকি মারা গেছি। আমি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছি। আমাকে কেন মৃত হিসেবে ভোটার তালিকা থেকে আমার নাম কর্তন করা হলো। আমি এর বিচার চাই। কে আমাকে মেরে ফেলেছে, এ বিষয়ে তদন্ত করা হোক।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচন অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাকে ৬ মাস ধরে হয়রানি করেছে। ভোটার তালিকায় পুনরায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করেছি। এখনও ভোটার তালিকায় আমার নাম অর্ন্তভূক্ত হয়নি। বারংবার যোগাযোগ করেও এখন পর্যন্ত কাজ না হওয়ায় আমি হতাশ হয়ে পড়েছি। নির্বাচন অফিস থেকে ভাতার বই নিয়ে ঢাকায় গিয়ে তদবির করতে বলেছে। আর্থিক কষ্ট ও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঢাকায় গিয়ে তদবির করা অসম্ভব। এদিকে, আমি অর্থাভাবে অনাহারে বিনা চিকিৎসায় নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছি।

এ বিষয়ে স্থানীয় আব্দুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. ময়েনউদ্দিন শাহ্ বলেন, ওই মহিলার নাম ভোটার তালিকায় ভূলবশত কর্তন করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে জীবিত ও সুস্থ আছেন। তিনি ওই মহিলাকে জীবিত থাকার একটি  প্রত্যায়নপত্র দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক জানান, গত ২০ জানুয়ারি ২০২১ ভোটার তালিকায় ওই মহিলার নাম পুনরায় অর্ন্তভূক্ত করার জন্য ঢাকা আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বরাবরে পত্র দেয়া হয়েছে। এখনও কোন রিপ্লাই আসেনি। অপরদিকে, সহিদা বেগম ভোটার তালিকায় নাম পুনরায় অর্ন্তভূক্ত করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

এবিএন/মো. রফিকুল ইসলাম/জসিম/জুয়েল

এই বিভাগের আরো সংবাদ