আজকের শিরোনাম :

তেঁতুলিয়ায় মুক্তিযোদ্ধারসহ শতাধিক কবরে আগুন, থানায় অভিযোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২১, ১৯:৪৫

পঞ্চগড়ের তেঁতুিলয়া উপজেলায় আক্রোশমূলকভাবে ৪ মুক্তিযোদ্ধার কবরসহ প্রায় শতাধিক করবে অগ্নিকান্ড ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে করে প্রায় পুরে গেছে পুরো কবরস্থানটি। এ ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়েরর জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটানোর কারণে ক্ষোভ বিরাজ করছে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণসহ অপরাধীদের গ্রেফতার করা না হলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচী করতে বাধ্য হবে তারা।

গত ২৮ মার্চ (রোববার) বিকেল সাড়ে ৫টায় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সিপাইপাড়া ধাইজান গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুরে মামলা দায়েরের ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ইমরান আলী প্রধান।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সিপাইপাড়া ধাইজান গ্রামে সিপাইপাড়া মৌজার এসএ ১২৯নং খতিয়ান ভুক্ত জমাজমিতে প্রায় কয়েক যুগ ধরে কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে এই কবরস্থানে ৪জন বীরমুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় শতাধীক মানুষ সাহিত রয়েছে। দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত কবরস্থানটি বাইনগছ গ্রামের আ. জব্বারের ছেলে জিয়াউর রহমান (২৮) একই গ্রামের মৃত আসাবদ্দীনের ছেলে আব্দুল গণি (৬০), আব্দুল জব্বার (৫২), জালাল উদ্দিন (৫০), আব্দুল জলিল (৪৮) নিজেদের দাবী করে গত ২৮ মার্চ (রোববার) বিকেল সাড়ে ৫টায় সবার অগোচরে আক্রোশমূলক ও অন্যায়ভাবে আগুন দিয়ে কবরগুলি জ্বালীয়ে দেয়। এঘটনায় কবরস্থানের ৪ বীরমুক্তিযোদ্ধার কবরসহ প্রায় শতাধীক কবর পুড়ে যায়। পরে বিষয়টি সবার নজরে আসলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ওবায়দুল হক আগুন লাগাগোর ঘটনাটি সবাইকে জানিয়ে দেয়।

অভিযোগকারী ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ইমরান আলী প্রধান জানান, ২৯ মার্চ (সোমবার) বিকেলে আমি শবেবরাত উপলক্ষে কবরস্থানে জিয়ারত করতে গেলে দেখি সব কবর আগুনে পুড়ে গেছে। পরে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ওবায়দুল হক সূত্রে জানতে পারি জিয়াউরসহ অভিযুক্তদের কবরে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হিসেবে নয় সাধারণ মানুষ হিসেবে এমন কর্মকান্ডের তিব্র নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনার সাথে যুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।

প্রত্যক্ষদর্শী ওবায়দুল হক জানান, আমি বাজারে যাওয়ার সময় আগুন লাগাতে দেখে জিয়াউরসহ অভিযুক্তদের বাধা দিলেও তারা কবরগুলোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটায়। এবংকি কবরগুলোতে আগুন লাগিয়ে মসজিদে ২০ টাকা দান করবে বলে আমাক জানায়।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, আমরা দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে জনগণকে ভালো রাখতে কাজ করেছে। এখন দেখছি মৃত্যুর পরেও আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কবর নিয়ে আক্রোশমূলক ভাবে বিভিন্ন অপ্রতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে। ৪জন মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়দের কবরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটানোয় আমরা অপরাধীদের দ্রুত বিচার দাবী করছি।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েম মিয়া জানান, এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, মামলা হলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী মাহাবুবুর রহমান জানান, আমাদের জন্য এটা লজ্জাকর, এবং জাতীর জন্য এটা অপমান জনক, আমাদের জন্যও অপমান জনক। বীরমুক্তিযোদ্ধা চারজন এখানে শুয়ে আছে এই কবরস্থানে। এটা বৃটিশ আমলের গোরস্থান। আজকে ব্যাক্তিগত স্বার্থে এই গোরস্থানে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তে অতিদ্রুত বিচার চাই। নতুবা আমরা অচিরেই তেঁতুলিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে আমি এই তেঁতুলিয়ায় মানববন্ধন শুরু করবো এবং আন্দোলন শুরু করবো। যদি আমাদের এই কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনি ব্যাবস্থা গ্রহণ করা না হয় তবে আমরা কঠোর কর্মসূচী পালন করতে বাধ্য হবো। এঘটনায় অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায় নি।

এবিএন/ডিজার হোসেন বাদশা/জসিম/জুয়েল

এই বিভাগের আরো সংবাদ