৩৪ বছর ধরে
পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে আনরাজ ফিশ প্রোডাক্টস
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৪৮ | আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:০৩
পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ধরণের ছাড়পত্র ছাড়াই বিগত ৩৪ বছর ধরে বিদেশে রপ্তানীর জন্য মাছের প্রক্রিয়াজাতকরন করা হচ্ছে চট্টগ্রামের আনরাজ ফিশ প্রোডাক্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। আর এই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন খোঁজ খবরও নেই। নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় মিখদা পাড়া নামের একটি ঘনবসতি এলাকায় এ ধরণের একটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও বিগত ৩৪ বছর পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন খেয়ালই নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় ব্যক্তির জ্ঞাতসারে জনহিতকর একটি প্রতিষ্ঠান চলছে এই এলাকায় যুগের পর যুগ। প্রতিষ্ঠানের কারখানায় ব্যবহৃত অ্যামোনিয়া গ্যাসের নি:সরনের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দূর্ঘটনা। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির আশেপাশে থাকা মানুষ।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য দরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু দরখাস্ত দেখাতে বললেও কোন কাগজ দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটির ক্উে কেউ বলেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অবগত রেখেই এই মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হচ্ছে । অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তরা জানান এ ধরনের আনরাজ ফিশ প্রোডাক্ট নামের কোন প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোন ধরনের দরখাস্ত জমা দেয়া হয়নি সেক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা।
নগরীর বায়েজিদ থানাধীনা আতুরার ডিপো এলাকায় মিখদা পাড়া সংলগ্ন ৩০ গন্ডা জায়গার উপর গড়ে উঠেছে আনরাজ ফিশ প্রোডাক্টস নামের প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৮৪ সাল থেকেই এই এলাকায় মাছ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানী করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির সীমানা দেয়াল ঘেষে গড়ে উঠেছে কয়েকটি বহুতল ভবন। বিদেশে মাছ রপ্তানী করে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আয় করছে প্রতিষ্ঠানটি। মিখদা পাড়ায় স্থানীয় ও ভাড়াটিয়া মিলে প্রায় হাজার খানেক পরিবারের বসবাস।
মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাংক। ট্যাংকটিও বেশ পুরনো। তাই প্রায় গ্যাস লিকেজ হয় এই ট্যাংক থেকে। আবাসিক এলাকার মতো একটি জায়গায় এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় প্রতিমূহুর্তে জীবনের হুমকির মুখে আছে এলাকাবাসী। অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাংক থেকে প্রতিনিয়ত গ্যাস নি:সরিত হয়ে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয় জনগন। প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী অভিযোগ কানেই তুলছেনা প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ। উল্টো নানা ধরণের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। কেবল এলাকাবাসী নয় কারখানার ভেতর পর্যাপ্ত গ্যাস মাস্ক না থাকায় মারাত্মক ক্ষতির আশংকায় আছে কারখানায় কর্মরত কর্মচারীরাও।
মিখদা পাড়ায় বসবাসরত মাহবুবুর রহমান জানান, ২০০৬ সালে রাতের বেলা আনরাজ ফিশ প্রোডাক্টস এর অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাংক লিকেজ হয়ে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। শিশু থেকে বুড়ো অনেককে ভর্তি করাতে হয়েছিল হাসপাতালে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির অ্যামেনিয়া গ্যাসের ট্যাংকটি পুরনো হওয়ায় প্রায় গ্যাস লিকেজ হয়ে আশে পাশে ছড়িয়ে পড়ে। আর শ্বাসকষ্টে ভুগে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে স্থানীয়রা।
মিখদা পাড়ার মুন্সি মুজিবুল হাসান জানান, চলতি বছরের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে রাত তিনটার দিকে আনরাজ ফিশ কারখানার অ্যামেনিয়া গ্যাসের ট্যাংক লিকেজ হয়ে গ্যাস বের হওয়ায় আশেপাশের লোকজন গভীর রাতে প্রাণ বাঁচাতে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসে। একের পর এক এই ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকলেও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কানে তুলো দেয়ার মতো অব্স্থায় রয়েছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। গত ১৯ আগস্ট দুপুর বেলাও একইভাবে গ্যাস নি;সরণ হওয়ায় আতংকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে স্থানীয়রা। বিশেষ করে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এমন আশংকায় শিশুদের নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে স্থানীয়রা।
অপর এলাকাবাসী খোকন জানান, কেবল অ্যামোনিয়া গ্যাসের জ্বালা নয়। মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের পঁচা পানিও খোলা জায়গায় ছেড়ে দেয়ায় গন্ধে রাস্তায় হাঁটা যায় না। তাছাড়া বিদ্যুত চলে গেলে বিশাল একটি জেনারেটর চালু করা হয়। এটির বিকট শব্দে ঘরে থাকা যায় না। ছেলে মেয়েরা জেনারেটরের শব্দে পড়ালেখা করতে পারেনা। অনেকের ঘরে থাকা অসুস্থ মানুষ জেনারেটরের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এই প্রতিষ্ঠানটি ঘনবসতি এলাকা থেকে সরিয়ে না নিলে এলাকাবাসীর বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তারা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ধরণের ছাড়পত্র ছাড়াই কিভাবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান চলছে তা বোধগম্য নয় বলে জানায় স্থানীয়রা। প্রতিষ্ঠানটির বিরু্েদ্ধ জরুরীভাবে পদক্ষেপ নেয়া না হলে অ্যামোনিয় গ্যাসের ট্যাংক ফেটে চট্টগ্রামের আনোয়ারার ডিএপি সার কারখানার মতো মারাত্মক বিপর্যয় হতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালের আগ্স্ট মাসে আনোয়ারায় সিইউএফএল কারখানার পাশে ডাই অ্যামোনিয়া ফসফেট ডিএপি সার কারখানার অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাংক ফেটে গেলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় হয়। মানুষ অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি কয়েক একর জমির ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়। মারা যায় বিভিন্ন প্রজেক্টের টনে টনে মাছ। পুকুর,ঝিলে, বিলে ভাসতে থাকে মরা মাছ। ঐ সময় এলাকার মানুষসহ পুরো চট্টগ্রামবাসী মিঠা পানির মাছ খাওয়া অনেকটা ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে আনরাজ ফিশ প্রোডাক্টস এর কারখানা পরিদর্শন করেন প্রতিবেদক। কারখানা পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদকের কথা হয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা সঞ্জয় মজুমদারের সাথে। তিনি স্বীকার করেন ৩৪বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করে আসছে। তবে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন বছর কয়েক হলো। বছরে কোটি কোটি টাকার মাছ রপ্তানী করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মকর্তা কর্মচারী মিলে প্রায় আড়াইশ জন লোক কর্মরত রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। ঘন একটি বসতি এলাকায় এমন একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে চলে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঘরবাড়ি আগে কমছিল। এখন বেশি হয়েছে। কারখানা অ্যামোনিয় গ্যাস নি:সরনের কারণে মানুষের ক্ষতি হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে সোজাসাপটা উত্তর দিলেন গ্যাস লিকেজ হলে সাথে সাথে তা মেরামত করা হয়। আশেপাশের লোকজনের কোন ক্ষতি হয়না বলে জানালেন তিনি। অথচ এলাকাবাসীর বক্তব্য পুরোপুরি উল্টো। ঘনবসতি এলাকায় এই ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। তাদের আছে কিনা জনাতে চাইলে জানান ছাড়পত্র নেই। তবে অন প্রসেসিং এ আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে এমন কোন কাগজ দেখাতে বললেও কোন কাগজই দেখাতে পারেননি তিনি। প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংরক্ষন কর্মকর্তা দিলিপ ভট্টাচার্য্য জানালেন এই প্রতিষ্ঠান করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাগজ লাগে না। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে আমরা যুগের পর যুগ প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছি। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরে কাগজ জমা দিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া চালাতে পারলে কেন পরিবেশ অধিদপ্তরে দরখাস্ত করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন বর্তমানে প্রয়োজন হয়েছে তাই। তার মানে ৩৪ বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন একটি প্রতিষ্ঠান চলে আসছে যুগের পর যুগ পরিবেশ অধিদপ্তরের অগোচরে। অর্থাৎ পরিবেশ অধিদপ্তর ঘুমের ঘোরে আছে।
এ বিষয়ে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম নগরীর দায়িত্বে থাকা পরিচালক মোহাম্মদ আজাদুর রহমান মল্লিকের সাথে। তিনিও স্বীকার করেন আনরাজ ফিশ প্রোডাক্টস নামের কোন প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশের ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। তাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের দরখাস্তও জমা হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরে জানালেন তিনি। বিগত ৩৪ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি অবলিলায় ব্যবসা করে আসলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেন নজরে আসেনি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সোজাসাপটা উত্তর দিলেন, লোকবল সংকটে আছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নগরীর পরিদর্শনের জন্য ৬জন পরিদর্শক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র দুজন। সীমিত কর্মকর্তা নিয়ে নগরীর পুরো এলাকা পরিদর্শন করা কষ্টসাধ্য বলে জানালেন তিনি। তবে আনরাজ ফিশ প্রোডাক্টস নামের এই প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন করার কথা দেন তিনি। পরিবেশের একজন মহিলা কর্মকর্তাকে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশও দিলেন তিনি। পরিবেশের কতিপয় ব্যক্তির জ্ঞাতসারে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চলছে এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের কথা জানালে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা কর্মচারি এর সাথে জড়িত নয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। অ্যামোনিয়া গ্যাস মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকি। তিনি জানান, ২/৩ বছরের বেশি অ্যামোনিয়া গ্যাস মানবদেহে প্রবেশ করলে কিডনী নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ফুুসফুস নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে, চোখের জ্যোতি কমে যেতে পারে, শ্রবণ শক্তি কমে যেতে পারে, বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে, ক্ষুধামন্দ হতে পারে, প্রেসার বাড়তে পারে, পেটের বাচ্চা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মাতে পারে। ৩৪বছর ধরে নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় একটি ফিশ প্রোডাক্টস এর কারখানা থেকে প্রতিনিয়ত অ্যামোনিয় গ্যাস নি:সরণ হচ্ছে আর স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছে এই খবর জেনে তিনি বিস্মিত হন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ধরণের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চলছে শুনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি। একইসাথে ঘনবসতি এলাকা থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে সরিয়ে নেয়া উচিত বলে জানান তিনি। অন্যথায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরতে পারে প্রতিষ্ঠানটির আশেপাশের মানুষ এমনটাই জানান জেলা সিভিল সার্জন। এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/রাজ্জাক
এ বিষয়ে কথা বলতে আনরাজ ফিশ প্রোডাক্টস এর কারখানা পরিদর্শন করেন প্রতিবেদক। কারখানা পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদকের কথা হয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা সঞ্জয় মজুমদারের সাথে। তিনি স্বীকার করেন ৩৪বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করে আসছে। তবে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন বছর কয়েক হলো। বছরে কোটি কোটি টাকার মাছ রপ্তানী করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মকর্তা কর্মচারী মিলে প্রায় আড়াইশ জন লোক কর্মরত রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। ঘন একটি বসতি এলাকায় এমন একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে চলে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঘরবাড়ি আগে কমছিল। এখন বেশি হয়েছে। কারখানা অ্যামোনিয় গ্যাস নি:সরনের কারণে মানুষের ক্ষতি হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে সোজাসাপটা উত্তর দিলেন গ্যাস লিকেজ হলে সাথে সাথে তা মেরামত করা হয়। আশেপাশের লোকজনের কোন ক্ষতি হয়না বলে জানালেন তিনি। অথচ এলাকাবাসীর বক্তব্য পুরোপুরি উল্টো। ঘনবসতি এলাকায় এই ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। তাদের আছে কিনা জনাতে চাইলে জানান ছাড়পত্র নেই। তবে অন প্রসেসিং এ আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে এমন কোন কাগজ দেখাতে বললেও কোন কাগজই দেখাতে পারেননি তিনি। প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংরক্ষন কর্মকর্তা দিলিপ ভট্টাচার্য্য জানালেন এই প্রতিষ্ঠান করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাগজ লাগে না। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে আমরা যুগের পর যুগ প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছি। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরে কাগজ জমা দিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া চালাতে পারলে কেন পরিবেশ অধিদপ্তরে দরখাস্ত করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন বর্তমানে প্রয়োজন হয়েছে তাই। তার মানে ৩৪ বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন একটি প্রতিষ্ঠান চলে আসছে যুগের পর যুগ পরিবেশ অধিদপ্তরের অগোচরে। অর্থাৎ পরিবেশ অধিদপ্তর ঘুমের ঘোরে আছে।
এ বিষয়ে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম নগরীর দায়িত্বে থাকা পরিচালক মোহাম্মদ আজাদুর রহমান মল্লিকের সাথে। তিনিও স্বীকার করেন আনরাজ ফিশ প্রোডাক্টস নামের কোন প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশের ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। তাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের দরখাস্তও জমা হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরে জানালেন তিনি। বিগত ৩৪ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি অবলিলায় ব্যবসা করে আসলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেন নজরে আসেনি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সোজাসাপটা উত্তর দিলেন, লোকবল সংকটে আছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নগরীর পরিদর্শনের জন্য ৬জন পরিদর্শক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র দুজন। সীমিত কর্মকর্তা নিয়ে নগরীর পুরো এলাকা পরিদর্শন করা কষ্টসাধ্য বলে জানালেন তিনি। তবে আনরাজ ফিশ প্রোডাক্টস নামের এই প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন করার কথা দেন তিনি। পরিবেশের একজন মহিলা কর্মকর্তাকে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশও দিলেন তিনি। পরিবেশের কতিপয় ব্যক্তির জ্ঞাতসারে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চলছে এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের কথা জানালে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা কর্মচারি এর সাথে জড়িত নয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। অ্যামোনিয়া গ্যাস মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকি। তিনি জানান, ২/৩ বছরের বেশি অ্যামোনিয়া গ্যাস মানবদেহে প্রবেশ করলে কিডনী নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ফুুসফুস নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে, চোখের জ্যোতি কমে যেতে পারে, শ্রবণ শক্তি কমে যেতে পারে, বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে, ক্ষুধামন্দ হতে পারে, প্রেসার বাড়তে পারে, পেটের বাচ্চা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মাতে পারে। ৩৪বছর ধরে নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় একটি ফিশ প্রোডাক্টস এর কারখানা থেকে প্রতিনিয়ত অ্যামোনিয় গ্যাস নি:সরণ হচ্ছে আর স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছে এই খবর জেনে তিনি বিস্মিত হন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ধরণের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চলছে শুনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি। একইসাথে ঘনবসতি এলাকা থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে সরিয়ে নেয়া উচিত বলে জানান তিনি। অন্যথায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরতে পারে প্রতিষ্ঠানটির আশেপাশের মানুষ এমনটাই জানান জেলা সিভিল সার্জন। এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/রাজ্জাক
এই বিভাগের আরো সংবাদ