আজকের শিরোনাম :

চিলমারীতে বর্ধিত সময়েও অর্জিত হয়নি ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২১, ১৫:৪৭

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা খাদ্যগুদাম বর্ধিত সময়েও আমন ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জত করতে পারেনি। সরকারীভাবে দেয়া মূল্যের তুলনায় বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক ও রাইস মিল মালিকদের গুদামে ধান-চাল দেয়ার আগ্রহ না থাকায় লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বলে খাদ্য বিভাগের দাবী।

জানাগেছে,এবারের আমন মৌসুমে চিলমারী উপজেলা খাদ্যগুদামে ২৮৫মে.টন ধান ও ৬১২মে.টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল। যা প্রতি কেজি ধান ২৬টাকা ও চাল ৩৭টাকা দরে ক্রয় করার জন্য ৭ নভেম্বর ২০২০ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১ পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়। লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় আরো ১৫দিন সময় বৃদ্ধি করা হলেও দীর্ঘ সময়ে লক্ষ মাত্রার মাত্র ৩৬ শতাংশ চাল সংগ্রহ করতে পারলেও কোন প্রকার ধান সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্যগুদাম। এলএসডি গুদাম সূত্রে জানা যায় সরকারীভাবে বেধে দেয়া সময়সহ বর্ধিত ১৫দিন সময়ের মধ্যে মাত্র ২২৪.৫৫০মে.টন চাল ক্রয় করতে পারলেও কোন ধান ক্রয় করতে পারেনি তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান,সরকারীভাবে দেয়া মুল্যের চেয়ে খোলা বাজারে ধান ও চালের মূল্য বেশি এবং সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিতে অনেক ঝামেলা হওয়ায় কৃষকরাও গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী না হওয়ায় সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪২-৪৪ টাকা। ধান ২৯-৩১ টাকা। এছাড়াও ভালো ধান ছাড়া গুদামে ধান দেয়া যায় না। চালের বেলায়ও একই নিয়ম। এই অবস্থায় গুদামে ধান-চাল সরবরাহ করলে কৃষক ও মিল মালিকদের বড় রকমের লোকসান গুনতে হয়।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে সরকারি খাদ্যগুদামে সমগ্র উপজেলার প্রায় দশ হাজার কৃষকের ধান দেয়ার সামর্থ রয়েছিল। এদের মধ্য থেকে আগ্রহী কৃষকরা গুদামে সরকারী মূল্যে ধান দিতে পারতেন। এ ধান ও চাল ক্রয় গত বছরের ৭নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চলমান ছিল। লক্ষমাত্রা অর্জন না হওয়ায ১৫মার্চ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এবারে উপজেলার মোট ৫১টি চাল কলের মধ্যে বরাদ্দ প্রাপ্ত ৩৫টি কলের জায়গায় সরকারের সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়েছে ৩১ টি চাল কল। ৬১২ মে.টন চালের মধ্যে ৫১ শতাংশ হারে ৩১২ মে.টন চালের লক্ষ মাত্রার মধ্যে ওই ৩১টি চাল মিল ২৭৮.৪০০ মে.টন চাল দিতে সম্মত হয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। যার মধ্য থেকে নির্ধারিত মেয়াদে ওই চালকলগুলি মোট ২২৪.৫৫০মে.টন চাল সরবরাহ করেছে। অপরদিকে চলতি আমন মৌসুমে সরকারি খাদ্যগুদামে প্রান্তিক, মাঝারি ও বৃহৎ প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে ১-৩ মে. টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত থাকলেও কোন কৃষক খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করেনি।  

এন হাসান চাল কল ও নাহিদ হাসান চাল কলের স্বত্বাধিকারী মো.ফজলুল হক বলেন, দুটি চাল কল মিলে আমি ৫১% হিসাবে ২০মে.টন চাল প্রদানের বরাদ্দ পেয়েছিলাম যার মধ্যে ১৩ মে.টন চাল প্রদান করেছি। এতে আমার লোকসান হয়েছে ৭৭ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে সরকারী খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করে সরকারী আদেশকে বাস্তবায়ন করে আসছি। চলতি মৌসুমে চালের বাজার মূল্য বেশী হওয়ায় চাল সরবরাহের লোকসান কমাতে সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি। হাসনা হেনা চাল কলের মালিক জিয়াউল হক হেলার বলেন,১২মে.টন চাল বরাদ্দ পেয়ে তিনি প্রদান করেছেন ৬ মে.টন চাল। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। একই কথা জানালেন, রশিদ চাল কল,ছোমেদ চাল কল ও ইউসুফ চাল কলসহ বেশ কিছু চাল কলের স্বত্বাধিকারী।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আলাউদ্দিন বসুনিয়া জানান,চালের বাজার দর বেশী হওয়ায় মিলাররা চাল দিতে আগ্রহী নয়। উপজেলার মোট ৩১জন মিলার তাদের বরাদ্দের ৫১শতাংশ চাল দিতে সম্মত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তারা ২২৪.৫৫০ মে.টন চাল প্রদান করেছেন যা লক্ষমাত্রার ৩৬শতাংশ মাত্র। ধান ক্রয়ের বিষয়ে তিনি বলেন,সরকারীভাবে বেধে দেয়া মূল্যের চেয়ে ধানের বাজার দর বেশী হওয়ায় কোন কৃষক ধান দিতে সম্পন্ন হয়নি ফলে ধান ক্রয় সম্ভব হয়নি।
 

এবিএন/গোলাম মাহবুব/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ