আজকের শিরোনাম :

ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মানে ধীরগতি, হতাশ কৃষকেরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১, ২১:০০

সুনামগঞ্জের ৫২টি বড় হাওরের ফসল অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য এবার প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসির) মাধ্যমে ৮১১টি বাঁধের কাজ হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি বাঁধের কাজ। ফলে হতাশ হাওরপাড়ের কৃষকেরা।  ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলেও  কাজ শেষ হয়নি। কোথাও কোথাও দু’এক দিন হয়েছে বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে হাওররক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওরের কৃষকরা। কৃষকরা জানান, ২০১৭ সালে অনিয়ম ও লুটপাটের জন্য হাওরের ফসল তলিয়ে গিয়েছিল।

পরে সেই লুটপাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন হাওর নেতারা। তাতে আমাদের কৃষকদের ফসল ফিরে না পেলেও কৃষকদেরকে সম্পৃক্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)’র মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য নয়া নীতিমালা চালু হয়েছিল। তাদের অভিযোগ, অপ্রয়াজনীয় প্রকল্প, বাঁধের ওপর সামান্য পরিমাণ মাটি দিয়ে বড় অংকের বিল উত্তোলন, আবার কোথাও কোথাও বাঁধ নির্মাণ না করে পানির জন্য অপেক্ষা করার মতো দুর্নীতি এখন হাওরজুড়ে। কৃষকদের সম্পৃক্ত না করে বাঁধের কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অন্যদের, আবার কোথাও কোথাও কাগজে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে কৃষকের নাম দিয়ে বাঁধের ব্যবসা করছে একই মধ্যস্বত্বভোগীরা। এ কারণে হাওররক্ষা বাঁধ এখন কৃষকদের চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা ও নেত্রকোণার কালিয়াজুরি উপজেলার বড় হাওর কালিয়াকোঠার ফসলরক্ষার জন্য হাওয়ার খালের বড় ভাঙনে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কাজ হয়েছে ২০ থেকে ৩০ ভাগ। হাওরপাড়ের কাশিপুর গ্রামের আব্বাছ মিয়া বলেন, হাওরে বাঁধের কাজ যেভাবে করা হচ্ছে সম্পূর্ণ মার্চ মাস কাজ করলেও বাঁধের কাজ শেষ হবে না। কাজের ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, তারা (পিআইসির লোকজন) পানির অপেক্ষা করছে। শাল্লা উপজেলার কৃষক কৃষকেরা জানান, বাঁধের কাজে কৃষক নেই বললেই চলে, কোথাও কোথাও কৃষকের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বাঁধের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে ব্যবসার জন্য। বাঁধ দিলে হাওরের পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া কী হবে তাও যাচাই করা হয়নি। বাঁধ নির্মাণে দলীয়করণ হচ্ছে। পুরাতন বাঁধকে নতুন করা হচ্ছে, এক্ষত্রে টাকা লুটপাটের ধান্দাই বেশি। উপজেলার হাওয়ার খালের বড় ভাঙনে কাজ শেষ হতে আরও এক মাস সময় লাগবে।

উপজেলার দাড়াইন নদীতে গোলা এসেছে, কালনীতেও একই অবস্থা। এখনও বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টি হলে দেখতে দেখতে পিয়াইন ও সুরমা নদী পানিতে টই টুম্বুর হয়ে বাঁধে ধাক্কা দেবে। এতে লাখো কৃষকের কপাল ভাঙবে। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে আন্দোলন সংগ্রাম করে আমরা বাঁধের কাজে জমি মালিকদের সম্পৃক্ত করার নীতিমালা কার্যকর করেছিলাম। এটি এখন কেবল কাগজেই আছে। নানা কৌশলে এখানে মধ্যস্বত্বভোগীরা ভাগ বসিয়েছে।  শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলামিন চৌধুরী বলেন, এক হাজার সিএফটি মাটি দিয়ে বাঁধ করা যাবে না। বলা যায়, কিছু বাঁধে অতিরিক্ত মাটি ধরে প্রাক্কলন হয়েছে, কোনোটাতে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাটি ধরে প্রাক্কলন হয়েছে।  

জেলা জুড়ে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-অবহেলা এবং লুটপাটে ক্ষুব্দ কৃষকরা। বাঁধের অনিয়মের আলোচনা ধর্মপাশা, দোয়ারাবাজার, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় বেশি। হাওর প্রকল্প নিয়ে এত অনিয়ম হওয়ায় জেলাজুড়েই সমালোচনা চলছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি কিছু কাজ বাস্তবায়ন করতে অপারগতা প্রকাশ করায় নতুন প্রকল্প কমিটি করা হয়েছে। ওখানে কাজ শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে। হাওরের সকল বড় ভাঙনে ডিজাইন লেবেল পর্যন্ত মাটি ফেলার কাজ শেষ পর্যায়ে বলে জানি আমি। অপ্রয়োজনীয় কাজ হয়নি কোথাও। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হবে।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/জুয়েল

এই বিভাগের আরো সংবাদ