আজকের শিরোনাম :

সুনামগঞ্জের ছাতকে বেড়ে চলেছে শিশুশ্রম

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০১৮, ১৫:০৭

সুনামগঞ্জের ছাতকে দিন-দিন বেড়ে চলেছে শিশুশ্রম। উপজেলার রাস্তা, হাট-বাজার ও পয়েন্টে গেলেই চোখে পড়ে শিশুশ্রমের দৃশ্য। কর্মব্যস্থতায় সময় পার করছে কোমলমতি শিশুরা।

উপজেলার ছাতক শহর, গোবিন্দগঞ্জ, জাউয়া, নোয়ারাই, ধারন, চরমহল্লা, দোলার বাজারের রিক্সা গ্যারেজ, মোটরসাইকেল মেরামতের দোকান, সিএনজি, অটোরিকশা মেরামতের দোকান, মুদি দোকান, সেলুন, চায়ের দোকানে কাজ করছে শিশুরা। ওয়ার্কশপ, রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, গাড়ীর হেলপার, নৌকার ডক, ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রির মতো ঝুকিপূর্ণ কাজেও শিশুরা জড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া রিক্সা, ভ্যান চালিয়ে, ইট-পাথর বহন করেও শিশুরা পরিবারকে আর্থিক যোগান দিচ্ছে। বেকারী, বাসা-বাড়ীতে কাজ, বাস, সিএনজি, অটোরিক্সা, লেগুনার হেলপার ও চালনাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে বেশিরভাগ শিশু শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে।

কৃষি ক্ষেত্রে শিশুরা অবাধে শ্রম বিক্রি করলেও অল্প মজুরিতে এসব শিশুরা রাত-দিন খেটে যাচ্ছে। আর কর্মক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুশ্রম এবং শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের সুনির্দিষ্ট কিছু বিধান থাকলেও তা প্রয়োগ করা হচ্ছেনা এখানে।

উপজেলার একধিক শিশু শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাতকে শিশুশ্রম বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে অসচ্ছল ও অভাব-অনটনে সংসার পরিচালনা। এ কারণে উপজেলায় দিন-দিন শিশু শ্রমিকের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এমনটাই জানালেন শ্রমিকদের অভিভাবকরা।

সরকারের ব্যুরো তথ্য অনুযায়ী দেশে মোট শ্রমিকের শতকরা ১২ ভাগ রয়েছে শিশু শ্রমিক। যে বয়সে শিশুদের হাতে বই-খাতা-কলম থাকার কথা সেই বয়সে শিশুরা অর্থ উপার্জনের জন্যে ঝুকিপূর্ণ কাজে নেমে কঠোর পরিশ্রম করছে । দেশে শিশুশ্রম আইনে নিষিদ্ধ হলেও কিছু অসাধু ব্যক্তি আইনের তোয়াক্কা না করে এসব শিশুদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে দেশ গড়ার কারিগররা বিভিন্ন শ্রমকাজে লিপ্ত হয়ে অকালে ঝরে যাচ্ছে।

শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধন-২০১৩) প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনের ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে শিশু ও কিশোরকে নিয়োগ করা যাবে না বা কাজ করতে দেয়া যাবে না। ৩৯ ধারা অনুযায়ী, সরকার সময়ে-সময়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা ঘোষণা করবে এবং ওই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কোনো কিশোরকে নিয়োগ করা যাবে না। একই আইনের ৪৪(৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিবন্ধী শ্রমিককে বিপজ্জনক যন্ত্রপাতির কাজে অথবা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা যাবে না।

শিশু শ্রম বন্ধ করার জন্য সরকার পৃথক শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু শিশু শ্রম বন্ধে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে পালন করতে হবে ইতিবাচক ভূমিকা। তবেই দেশের শিশুরা ভবিষ্যতে মানবস¤পদ তথা জাতির প্রকৃত কর্ণধার হয়ে উঠতে পারবে। কিন্তু শিশুশ্রম বন্ধে এখানে কেউ এগিয়ে আসছে না।

এব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতিমা নাহিয়ান জানান, শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে এখানে কোন অভিযোগ না থাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল এব্যাপারে জানান, অভাবের তাড়নায় শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। শিশুশ্রম বন্ধ করতে সরকার, সরকারি সংস্থা, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/নির্ঝর

এই বিভাগের আরো সংবাদ